Left Front

বামফ্রন্টের বৈঠকে ‘তুমুল’ বিতণ্ডা, ৫০ মিনিট দেরিতে শুরু সাংবাদিক বৈঠক, কী বললেন সেলিম?

এক বাম শরিক নেতার কথায়, ‘‘যা বলেছি, জীবনের শেষ বলা বলে দিয়েছি।’’ আলিমুদ্দিন থেকে ফেরার পথে গাড়িতে বসে তিনি যখন কথা বলছিলেন, তখনও কার্যত ফুঁসছিলেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৪ ২০:৫৯
Share:

অপেক্ষায় সংবাদমাধ্যম, ও দিকে তখন বৈঠক চলছে বামফ্রন্টের —ফেসবুক।

সিপিআই, ফরওয়ার্ড ব্লক এবং আরএসপি— বৃহস্পতিবার বামফ্রন্টের বৈঠকে ত্রিফলা শরিকি আক্রমণে বিদ্ধ হতে হল সিপিএমকে। বৃহস্পতিবার প্রথম দফার প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করেছে বামেরা। তার আগে ফ্রন্টের বৈঠক বসেছিল। সূত্রের খবর, তিন শরিকদলই আসন সমঝোতা নিয়ে তাদের দাবিতে অনড় থেকে সিপিএমকে জানিয়ে দিয়েছে, তারা তাদের ভাগের আসন ছাড়বে না। আসন বদলও করবে না। কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার ক্ষেত্রে যদি সিপিএম মনে করে, তা হলে তারা তাদের ভাগের আসন ছেড়ে দিতে পারে। কিন্তু শরিকেরা ‘কৃচ্ছ্রসাধন’ করবে না। বিতণ্ডা এমন জায়গায় যায় যে, নির্ধারিত সময়ের ৫০ মিনিট পরে সাংবাদিক বৈঠক শুরু করতে হয় ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুকে। যদিও সাংবাদিক বৈঠকে শরিকদলের নেতারা পাশাপাশিই বসেছিলেন। বিকাল ৫টার সময়ে সাংবাদিক বৈঠক ডাকা হয়েছিল। কিন্তু তা শুরু হয় ৫টা ৫০ মিনিটে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার রাতে এক শরিকনেতা বলেন, ‘‘যা বলেছি, জীবনের শেষ বলা বলে দিয়েছি।’’ আলিমুদ্দিন থেকে ফেরার পথে গাড়িতে বসে তিনি যখন কথা বলছিলেন, তখনও কার্যত ফুঁসছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘এমন ঘটনা বামফ্রন্টের ইতিহাসে কখনও ঘটেনি।’’ আর এক শরিকনেতার কথায়, ‘‘সিপিএমে এখন নতুন নেতৃত্ব এসেছেন। তাঁরা নতুন নতুন প্রস্তাব দিচ্ছেন। ফলে জটও নতুন করে পাকছে। এমন কখনও হয়নি।’’

ফ্রন্ট সূত্রের খবর, তিন শরিকের পক্ষ থেকেই সিপিএমকে স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে, তারা যদি মনে করে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতার কারণে ফ্রন্টের ঐক্য ভেঙে দেবে, তা হলে তা-ই করুক! বৃহস্পতিবার ফ্রন্টের তরফে প্রথম দফায় ১৬টি আসনে প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে তিন শরিকের একটি করে এবং সিপিএমের ১৩টি আসনের প্রার্থী রয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে বসিরহাট আসনে লড়ে সিপিআই। সূত্রের খবর, এ বার সিপিএম সেই আসন দাবি করে সিপিআইকে দক্ষিণবঙ্গে অন্য একটি আসন লড়ার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু সিপিআই স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, বসিরহাট তারা ছাড়বে না। শরিকদলের এক নেতা বলেন, ‘‘সিপিআই কেন বসিরহাট ছাড়বে? এটা কি মামারবাড়ি নাকি? বসিরহাটে সিপিআইয়ের একটা ঐতিহ্য রয়েছে। ওই আসন থেকে অধুনাপ্রয়াত ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত, মনোরঞ্জন শূর, অজয় চক্রবর্তীরা জিতে সাংসদ হতেন। সেই আসনের সঙ্গে কাস্তে-ধানের শিসের ঐতিহ্য জড়িয়ে। সেই আসন কখনও ছেড়ে দিতে পারে?’’ সূত্রের খবর, ফরওয়ার্ড ব্লকও জানিয়ে দিয়েছে তারা কোচবিহার ছাড়াও তাদের ভাগের পুরুলিয়া এবং বারাসতে লড়বে। এই তিন আসন নিয়ে কোনও রকম আপস তারা করবে না। আবার কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএম যতটুকু ফোনে কথা এগিয়েছে, তাতে বিধান ভবনের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে পুরুলিয়ায় তারা লড়বে। কিন্তু ফরওয়ার্ড ব্লক নাছোড়।

Advertisement

বৃহস্পতিবার ফ্রন্টের বৈঠকে হাজির ছিলেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও। তিনি শরিকি ক্ষোভ বিষয়ক প্রশ্নে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বলেন, ‘‘বামফ্রন্ট এবং বাম ঐক্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এবং অটুট রাখার দায় সিপিএমের, তা আমরা স্বীকার করি। ষাটের দশক থেকে এই কাজ আমরা করছি। বৃহত্তর বাম ঐক্য গড়ে তোলার কাজও আমাদের করতে হচ্ছে। পাশাপাশি ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে বামপন্থীদের পাশে যে আরও অনেক গণতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে প্রয়োজন, সে বিষয়ে বাম শরিকদলগুলিও একমত। আমরা সেই নির্মাণ এবং ঐক্যের পুনর্নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাব।’’ আগামী শনিবার ফের ফ্রন্টের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে আসন সমঝোতা নিয়ে কী হয়, সে দিকেই তাকিয়ে শরিকদলের নেতারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement