প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
লোকসভা ভোটের ষষ্ঠ দফাতেই বঙ্গে বাহিনীর সংখ্যা ছাড়াতে পারে এক হাজার কোম্পানি। কিন্তু বহু জায়গাতেই সে ভাবে পথেঘাটে বাহিনীর দেখা মিলছে না বলে অভিযোগ। তা হলে এত বাহিনী এনে কী লাভ হল, সেই প্রশ্নও তুলছেন অনেকে। যদিও নির্বাচন কমিশন সূত্রের বক্তব্য, ভোটে শান্তিরক্ষায় কেন্দ্রীয় বাহিনী আনা হয়েছিল। প্রথম তিনটি দফায় হিংসা, রক্তপাত, প্রাণহানি হয়নি। তাই এখনও বাহিনীর কার্যকারিতা প্রমাণিত। তা ছাড়া, যেখানে ভোট হয়ে যাচ্ছে, সেখানেও ভোট-পরবর্তী হিংসা রোখার জন্য এক কোম্পানি করে বাহিনী রাখা হচ্ছে।
তবে রাজ্যের বিরোধীরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, চতুর্থ দফা থেকে যে সব এলাকায় ভোট শুরু হবে, সেখানে অতীতের প্রায় সব ভোটেই অশান্তি ঘটেছে। তাই বাহিনীর কার্যকারিতা প্রমাণিত কি না, সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের সময় আসেনি। বাহিনী মোতায়েন নিয়ে কমিশনের বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন বলেও দাবি করেছেন তাঁরা। কমিশন সূত্রের বক্তব্য, বাহিনী মোতায়েন নিয়ে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে। প্রয়োজনে পথেঘাটে বাহিনীকে টহল দিতেও মানুষ দেখবেন।
আগামী ১৩ মে, চতুর্থ দফায় কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, বোলপুর, বীরভূম, বহরমপুর, বর্ধমান পূর্ব, বর্ধমান -দুর্গাপুর এবং আসানসোল লোকসভা আসনে ভোট হবে। কমিশনের খবর, প্রথম তিন দফার তুলনায় এ বার ঝুঁকিপূর্ণ (ক্রিটিক্যাল) বুথের সংখ্যা বাড়বে। তার সঙ্গে সমানুপাতিক হারে বাহিনীর পরিমাণও বাড়বে। ওই দফায় মোট ৫৭৮ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং ৩৩ হাজার ৪৭১ জন রাজ্য পুলিশকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা আছে। ২০ মে, পঞ্চম দফায় শ্রীরামপুর, ব্যারাকপুর, বনগাঁ, আরামবাগ, হাওড়া, উলুবেড়িয়া, হুগলিতে ভোট হবে। সেই দফায় মোট ৭৬২ কোম্পানির মধ্যে ৬১৩ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছে কমিশন। সেই দফায় ঝুঁকিপূর্ণ বুথের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেই দফায় কমবেশি এক হাজার কুইক রেসপন্স টিম (কিউআরটি) থাকতে পারে বলে খবর।
পুলিশ সূত্রের খবর, ষষ্ঠ দফাতেই ১০০৫ কোম্পানি বাহিনী ব্যবহার হতে পারে। সপ্তম দফাতেও কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংখ্যা ষষ্ঠ দফার ধারেকাছে থাকতে পারে। প্রসঙ্গত, ভোট প্রস্তুতির সময়েই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে এ রাজ্যের জন্য দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ, ৯২০ কোম্পানি বাহিনী পাঠানোর প্রস্তাব করেছিল দিল্লির নির্বাচন সদন। এক পুলিশকর্তার কথায়, “জঙ্গলমহল এলাকা এখন খাতায়-কলমে মাওবাদী অধ্যুষিত না হলেও, সেই সব এলাকার এক-একটি বুথে এক সেকশন (৮ জন) করে বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে। সাধারণ ক্ষেত্রে তা অর্ধেক সেকশনেই (৪ জন) মিটে যায়।”
কমিশন ও রাজ্য পুলিশ কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিস্তারিত হিসাব দিলেও ভোটের আট দিন আগে হাওড়ার উলুবেড়িয়া লোকসভার ধারেকাছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দেখা মেলেনি। জেলা প্রশাসন সূত্রের দাবি, সংবেদনশীল এলাকায় রুট মার্চ হচ্ছে। ভোট ঘোষণার পরে হুগলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল চলেছিল। সেখানেও এখন সব বন্ধ। বসিরহাট পুলিশ জেলায় এক কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী আছে স্বরূপনগরে। সেখান থেকে কিছু সেকশন বিভিন্ন থানা এলাকায় যায় রুট মার্চ করতে। আগামী ১৩ তারিখ চতুর্থ দফার ভোটের পরেই ২৬ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী ঢুকবে বসিরহাটে। তবে সোমবার ভোটগ্রহণের আগে বাহিনীর রুট মার্চ হয়েছে বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকায়। মাথায় রাখা হয়েছে গত পঞ্চায়েতের গোলমালকে। বীরভূমের প্রতিটি বুথ এলাকায় রুট মার্চ হয়েছে। নাকা তল্লাশিতেও যুক্ত ছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। পশ্চিম বর্ধমানের ১৯০১টি বুথেও কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন হয়ে গিয়েছে। এলাকায় টহলও দিয়েছে তারা। জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে ভোট আগামী ২৫ মে। জেলায় যে বাহিনী আছে আপাতত তারা ‘সন্ত্রস্ত’ এলাকাগুলিতে রুট মার্চ করছে।