প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
ধর্মীয় মেরুকরণের পথে হাঁটার পরে এ বার জাতীয়তাবাদী আবেগে উস্কানি দিয়ে পাকিস্তানকে প্রচারের কেন্দ্রে তুলে আনার ইঙ্গিত দিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। কংগ্রেসের ইস্তাহারে মুসলিম লিগ দলের মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে বলে নরেন্দ্র মোদী অভিযোগ তোলার পরে এবং পাকিস্তান রাহুল গান্ধীকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী দেখতে চায় বলে দাবি করার পরে এ বার কংগ্রেস-সহ ইন্ডিয়া জোটের একাধিক নেতার পাকিস্তানের প্রতি নরম মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বিজেপি নেতা সুধাংশু ত্রিবেদী। তাঁর কথায়, ‘‘এরা কাদের হাতে তামাক খাচ্ছেন? পাকিস্তানের? রাহুল গান্ধীর উচিত এর জবাব দেওয়া।’’ কংগ্রেসের পাল্টা অভিযোগ, হিন্দু-মুসলমানে বিভাজনমূলক প্রচারে ফায়দা না দেখে পাকিস্তানের নামে উস্কানি দেওয়ার খেলায় নেমেছে বিজেপি।
শনিবার পুঞ্চ-রাজৌরিতে বায়ুসেনার কনভয়ে হামলা হয়। নিহত হন এক জওয়ান। কেন্দ্রের দাবি, পাক মদতপুষ্ট লস্কর-ই-তইবার জঙ্গিরা ওই আক্রমণের পিছনে ছিল। কিন্তু কংগ্রেস নেতা তথা পঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিংহ চন্নী গত কাল ওই ঘটনাকে ভোটের মুখে বিজেপির ‘সাজানো হামলা’ বলে অভিযোগ তোলেন। অন্য একটি ঘটনায় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ দাবি করেন, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মানুষ নিজেরাই স্বেচ্ছায় ভারতের সঙ্গে জুড়তে চান। তার জবাবে আজ কাশ্মীরের এনসি দলের নেতা ফারুক আবদুল্লা বলেন, ‘‘পাকিস্তান হাতে চুড়ি পরে নেই। তাদের কাছে পরমাণু বোমা রয়েছে।’’ এনসি শিবিরের বক্তব্য, বর্ষীয়ান ওই নেতা বোঝাতে চেয়েছেন যে, ভারত যদি পাক অধিকৃত কাশ্মীর দখল করতে যায়, তা হলে দু’টি পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে যুদ্ধ লেগে যেতে পারে। তৃতীয় ঘটনায় কংগ্রেসের নেতা শশী তারুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে, তিনি বাংলাদেশের এক সংবাদপত্রে কাশ্মীরকে ‘ভারত অধিকৃত কাশ্মীর’ বলে উল্লেখ করেন। পাকিস্তান ও সমমনোভাবাপন্ন দেশগুলি সাধারণত ওই শব্দবন্ধ ব্যবহার করে থাকে।
এই সব ঘটনার সূত্র ধরেই কংগ্রেস ও ইন্ডিয়া জোটের নেতাদের পাকিস্তানের প্রতি নরম মনোভাব নিয়ে আজ প্রশ্ন তোলেন বিজেপির রাজ্যসভা সাংসদ সুধাংশু ত্রিবেদী। তাঁর কথায়, ‘‘চন্নী ও তারুর যা বলেছেন, এমন কথা ইসলামাবাদে বসে পাকিস্তানি নেতারা বলে থাকেন। কংগ্রেস নেতাদের মুখেও কার্যত একই প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে। তারুর লড়ছেন ভারতে। আর জনমত তৈরি করছেন প্রতিবেশী দেশে। রাহুল গান্ধীর স্পষ্ট করে বলা উচিত, পিছন থেকে কারা তাঁদের মদত দিচ্ছেন! আর ফারুক আবদুল্লা যা বলেছেন, এমন অপরিণামদর্শী বক্তব্য ধর্মান্ধ এবং মৌলবাদে বিশ্বাসী নেতাদের মুখেই শোনা যায়।’’ আগামী দিনে ভোট দেওয়ার সময়ে সুধাংশু এ ধরনের ‘বিশ্বাসঘাতক’দের থেকে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।
প্রথম পর্বের ভোটের আগে উন্নয়নই প্রচারের হাতিয়ার ছিল বিজেপির। কিন্তু রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, প্রথম দফার নির্বাচনে জনতার আশানুরূপ সাড়া না মেলায় প্রচারের অভিমুখ পাল্টে হিন্দু-মুসলিম বিভাজনমূলক রাজনীতির উপরেই জোর দিয়েছে বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বলতে শোনা গিয়েছে, কংগ্রেসের ইস্তাহারে স্বাধীনতার আগেকার মুসলিম লিগের মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে। কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে দেশবাসীর সম্পদ মুসলিমদের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করে রেখেছে বলেও অভিযোগে সরব হন তিনি।
উল্টো দিকে কংগ্রেসের মতে, গেরুয়া ঝড় নেই বুঝেই বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদের রাজনীতি করে হিন্দু ভোট মেরুকরণের লক্ষ্য নিয়েছে বিজেপি। সেই কারণে কখনও মুসলিম লিগ কখনও পাকিস্তানের কথা বলে ভোটারদের বিভ্রান্ত করতে চাইছেন বিজেপি নেতারা। বিজেপি নেতৃত্বের পাল্টা যুক্তি, তাঁরা আদৌ পাকিস্তানকে টেনে আনেননি। বিরোধী জোটের একাধিক নেতা বিচ্ছিন্নতাবাদী, পাকিস্তানি নেতাদের সুরে বক্তব্য রাখায় সেই সব নেতাদের বিশ্বস্ততা ইসলামাবাদের প্রতি কি না, সেটাই কেবল জানতে চেয়েছে দল।