Tapas Roy Sudip Bandyopadhyay

‘গান্ধীগিরি’র পথে মুন্নাভাই তাপস! কখনও আলিমুদ্দিন, কখনও পাঁজাগৃহে, সুদীপের দুয়ারেও কি পৌঁছবেন রায়?

তাপস অবশ্য বিরোধী নেতাদের দরজায় গিয়ে ভোট ভিক্ষা করাকে, তাঁর এই প্রচার কৌশলকে ‘গান্ধীগিরি’ বলতে চাননি। তাঁর কথায়, ‘‘এটা আমাদের ভারতীয় সংস্কৃতি।’’

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:৪১
Share:

প্রচারে তাপস রায়। ছবি: ফেসবুক।

সোমবার তিনি গিয়েছিলেন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে। লক্ষ্য: বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর আশীর্বাদ। বুধবার গেলেন প্রয়াত তৃণমূল সাংসদ অজিত পাঁজার বাড়িতে। উপলক্ষ: তাঁর পরিবারের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময়। ঘটনাচক্রে, যে পরিবারের সদস্য রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা। তার আগে তিনি গিয়েছিলেন অধুনাপ্রয়াত কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ সোমেন মিত্রের বাড়িতেও।

Advertisement

তাঁর বর্তমান দল গান্ধীকে ‘জাতির জনক’ বলে। যদিও তাদের ‘প্রেরণাদাতা সংগঠন’-এর সদস্য নাথুরাম গডসের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন গান্ধী। কিন্তু সে সব অতীত। ভোট লড়তে নেমে ‘গান্ধীগিরি’র পথই নিয়েছেন উত্তর কলকাতার বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়।

এ বারের লোকসভা ভোটের ময়দান ক্রমশ তপ্ত হচ্ছে। যুধুধান প্রতিপক্ষেরা একে অপরকে নজিরবিহীন ভাষায় আক্রমণ করছেন। কিন্তু তার মধ্যেই মরূদ্যানের মতো কোথাও কোথাও জেগে আছে ‘সৌজন্যের রাজনীতি’ও। বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ ইদের দিন তৃণমূল-আহূত অনুষ্ঠানের মঞ্চে পৌঁছে চুমুক দিয়েছেন শরবতে। ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের মধ্যে মাইক্রোফোন নিয়ে নিজের কথাও বলেছেন। সেই ইদের দিনই দমদম লোকসভা কেন্দ্রে প্রচারে বেরিয়ে দেখা হয়ে গিয়েছে তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায় এবং সিপিএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তীর। দু’জনে সৌজন্য বিনিময় করেন। বরাহনগর বিধানসভার উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী অভিনেত্রী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা হয়ে গিয়েছিল সিপিএম প্রার্থী তন্ময় ভট্টাচার্যের। সায়ন্তিকা গুরুজন তন্ময়ের পা ছুঁয়ে প্রণাম করতে গেলে তন্ময় সস্নেহে জানান, তিনি প্রণাম গ্রহণ করেন না। তবে সায়ন্তিকাকে শুভেচ্ছা জানান।

Advertisement

ব্যারাকপুরের বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিংহ এবং তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিক দু’জনেই গিয়েছিলেন এলাকার প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ তড়িৎ তোপদারের সঙ্গে দেখা করতে। তড়িৎ দরজা বন্ধ করে দেননি। বহরমপুর লোকসভার নওদায় কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরীকে ঘিরে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দিয়েছিল তৃণমূলের একাংশ। নওদারই তৃণমূল বিধায়ক সাহিনা মুমতাজ খান দলীয় কর্মীদের ওই কর্মসূচিকে ‘অসভ্যতা’ বলেছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘এটা ঠিক হয়নি। এটা আমরা সমর্থন করি না।’’

বুধবারেই উত্তর কলকাতার কংগ্রেস প্রার্থী প্রদীপ ভট্টাচার্য ফোন করে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের ভোট চেয়েছেন। কুণাল বলেননি, তিনি কংগ্রেসকে ভোট দেবেন কি না। তবে প্রদীপকে এই তীব্র গরমে শরীরের খেয়াল রেখে প্রচারে বেরনোর পরামর্শ দিয়েছেন। মঙ্গলবার বাগডোগরা বিমানবন্দরে তৃণমূলের প্রার্থী দেবকে দেখে কয়েক জন যুবক ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিলে কুপিত না-হয়ে তাঁদের এক জনকে বুকে জড়িয়ে ধরেন দেব।

সেই হঠাৎ-দেখার সৌজন্যকে আরও খানিকটা বাড়িয়ে নিয়ে গিয়েছেন প্রবীণ রাজনীতিক তাপস। যদিও তাঁর ওই কৌশলকে তিনি ‘গান্ধীগিরি’ বলতে চাননি। তবে বলেছেন, ‘‘আমার উত্তর কলকাতায় ১৫ লক্ষ ভোটার। প্রত্যেকের কাছে আমি ভোটের জন্য মাথা নোয়াব।’’ কেন তিনি গেলেন প্রয়াত অজিত পাঁজার বাড়িতে? তাপসের জবাব, ‘‘ওই বাড়ি আমার কাছে মন্দিরসম।’’ আর আলিমুদ্দিনে বিমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাওয়া? তারও জবাব আছে, ‘‘বিমানদা আমাদের রাজ্যের বর্ষীয়ান এবং শ্রদ্ধেয় রাজনীতিক। উনি আমার কেন্দ্রের ভোটারও। তাই তাঁর কাছে গিয়েছিলাম।’’

তা হলে কি এর পরে বাংলার জনগণ তাপসকে মৌলালির মোড়ের অদূরে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে দেখবে?

নাহ্, তা হবে না। তাপস জানিয়েছেন, কোনও ভারতীয় সংস্কৃতি বা কোনও সৌজন্যের খাতিরেই তিনি বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়িতে পৌঁছবেন না। সুদীপের সঙ্গে বিরোধের জেরেই তাপস বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন বলে তৃণমূলের একাংশের দাবি। আবার তৃণমূলেরই অপর একাংশের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার থেকে ‘বাঁচতে’ তাপসও বিজেপি নামক ওয়াশিং মেশিনে ঢুকে পড়েছেন। তৃণমূল ত্যাগের কারণ যা-ই হোক, সুদীপের বাড়িতে যাওয়ার প্রসঙ্গে বুধবার প্রশ্ন করা হলে তাপস বলেছেন, ‘‘না, ওঁদের কাছে যাব না। ওঁদের ভোট আমার প্রয়োজন নেই।’’ আরও বলেছেন, ‘‘উত্তর কলকাতায় দু’জনের ভোট আমার দরকার নেই। বাকি সকলের কাছে যাব।’’

কারা ওই দু’জন? সুদীপ এবং তাঁর বিধায়ক স্ত্রী নয়না? তাপসের জবাব, ‘‘আপনারা বুঝে নিন!’’

ভোটের ‘গান্ধীগিরি’ পর্দার ‘গান্ধীগিরি’র মতো হয় না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement