রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। —ফাইল চিত্র।
ভোটের দিনেও উত্তপ্ত রইল বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের সন্দেশখালি। সেখানে দিনভর দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রক্তও ঝরেছে। তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে রিপোর্ট তলব করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।
সন্দেশখালিতে ভোটের উত্তাপ ছড়িয়েছিল শুক্রবার রাত থেকেই। অভিযোগ, বেড়মজুর এলাকায় ভোটের আগের রাতে পুলিশ ঢুকে পড়েছিল। তারা কয়েক জনকে আটকও করে। পরে গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের মুখে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয় বলে দাবি। শনিবার সকাল থেকে সন্দেশখালির বিভিন্ন বুথে শুরু হয় ভোটগ্রহণ। ভোট দেন বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র, সিপিএম প্রার্থী নিরাপদ সর্দারেরা। সকাল থেকে বেশ কিছু ক্ষণ মোটের উপর শান্তিপূর্ণই ছিল সন্দেশখালির পরিস্থিতি। বেলা বাড়তেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। দক্ষিণ খুলনার ১৭৭ নম্বর বুথে মার খান তৃণমূলের এক কর্মী। রামকৃষ্ণ মণ্ডল নামের ওই কর্মীর মাথা ফেটে যায়। বিজেপি পাল্টা দাবি করে, বুথ দখল করতে যাওয়ায় গ্রামবাসীরাই মেরেছেন রামকৃষ্ণকে। খুলনা থেকে উত্তাপের আঁচ ছড়িয়ে পড়ে সন্দেশখালির বয়ারমারিতে। সেখানে মার খান বিজেপি কর্মী চঞ্চল খাটুয়া। তাঁরও মাথা ফাটে। অভিযোগ, তৃণমূলের বুথ দখলের প্রতিবাদ করতে যাওয়ায় তাঁকে বাঁশ, লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় কুইক রেসপন্স টিম এবং আধা সামরিক বাহিনী।
দলের কর্মী-সমর্থকদের মারধরের অভিযোগে সন্দেশখালিতে বিক্ষোভ শুরু করে বিজেপি। বয়ারমারিতে রাস্তা অবরোধ করে তারা বিক্ষোভ দেখায়। বিক্ষোভ তুলতে পুলিশ বলপ্রয়োগ করে বলে অভিযোগ। বয়ারমারিতে সংঘর্ষের জেরে আহত হন তৃণমূলের দু’জন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের অঞ্চল সভাপতি নলিনী খাটুয়া। এ ছাড়া, কিঙ্কর জানা নামে আরও এক বিজেপি কর্মী সংঘর্ষে আহত হন। বিজেপির অভিযোগ, এলাকায় গুলি চালিয়েছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। পুলিশের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগও করেছেন বয়ারমারির বাসিন্দারা। অভিযোগ, পুলিশ পাঁচ-ছ’জনকে আটক করে নিয়ে গিয়েছে। তাঁদের মুক্তির দাবিতে বাসন্তী সড়কে গাছের ডাল, টায়ার ফেলে অবস্থানে বসে পড়ে বিজেপি। পরে সেখানে আসেন প্রার্থী রেখাও। তিনিও পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন। রাজবাড়ি এলাকাতেও উত্তেজনা ছড়িয়েছে। সেখানে সংঘর্ষে স্থানীয় এক মহিলা আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ। বেড়মজুরে শেষবেলার ভোট চলাকালীন ঢিল লেগে মাথা ফাটে এক পুলিশকর্মীর। তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বয়ারমারি এলাকায় গ্রামবাসী এবং বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের অভিযোগ, গুলি চালানো হয়েছে। তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ তোলা হয়েছে। যদিও গুলি কারও গায়ে লাগেনি বলেই দাবি। পুলিশও এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু জানায়নি। বিজেপি কর্মী শঙ্কর দাস দাবি করে বলেন, ‘‘আমাদের কর্মীকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছিল। যদিও গুলি তাঁর লাগেনি। তৃণমূলের লোক এ সব করেছে।’’
বেড়মজুরে শনিবার বিকেলে ভোটগ্রহণ পর্ব যখন শেষের মুখে, তখন উত্তেজনা ছড়ায়। ঢিল লেগে মাথা ফাটে এক পুলিশকর্মীর। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে কারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়েছেন, স্পষ্ট নয়।