যে সব ভোটকর্মী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গরহাজির ছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে চলেছে প্রশাসন। —ফাইল চিত্র।
যে সব ভোটকর্মী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গরহাজির ছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে চলেছে প্রশাসন। পদক্ষেপস্বরূপ শো-কজ়ের চিঠি পাঠানো হয়েছে অনুপস্থিত সরকারি কর্মচারীদের। এমন খবরে উদ্বেগ ছড়িয়েছে সরকারি কর্মচারী মহলে। ৬-৮ এপ্রিল প্রথম দফায় প্রিসাইডিং, প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পোলিং অফিসারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে হাজিরা খাতায় চোখ দিতেই বিষয়টি নজরে আসে প্রশাসনের। জেলাভিত্তিক সরকারি কর্মচারীদের হাজিরা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, প্রতিটি জেলা মহকুমা থেকেই বহু ভোটকর্মী প্রশিক্ষণ নিতে আসেননি। প্রশাসনের নির্দেশ সত্ত্বেও এখানে অনুপস্থিতির হারে বেজায় ক্ষুব্ধ প্রশাসনের শীর্ষ মহল। কারণ, লোকসভা ভোট দেশের আঙ্গিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এমন একটি নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করতে ভোটকর্মীদের প্রশিক্ষণ জরুরি। প্রশিক্ষণ না নিয়ে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে কাজ করতে গেলে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে ভোটকর্মীদের। সেই বিষয়টি ভাবনাচিন্তার পরেই ভারতীয় নির্বাচন কমিশন প্রত্যেক রাজ্যের সরকারি কর্মচারীর পৃথক ভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু করেছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফায় প্রশিক্ষণে বিরাট সংখ্যক সরকারি কর্মীর অনুপস্থিতি চোখে পড়ার পর বিষয়টি মোটেই ভাল চোখে দেখছে না রাজ্য প্রশাসন।
তাই প্রশিক্ষণে অনুপস্থিত ভোটকর্মীদের শো-কজ় করার কাজ শুরু হয়েছে। যে ভাবে ভোটকর্মীকে প্রশিক্ষণের জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছিল, সে ভাবেই তাঁদের প্রশিক্ষণের চিঠি পাঠানো হচ্ছে। শো-কজ় করলে জবাবে সন্তোষজনক উত্তর না পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। যে সকল ভোটকর্মীকে প্রশিক্ষণের জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছিল, তাদের মধ্যে কেউ সরকারি দফতরের কর্মী, কেউ বা শিক্ষক। কিন্তু কেন তাঁরা প্রশিক্ষণ নিতে আসেননি, তা বোধগম্য হয়নি আধিকারিকদের। তবে বিরাট হারে ভোটকর্মীদের গরহাজিরার সংখ্যা উদ্বেগ বাড়িয়েছে প্রশাসনের। কারণ, এমনিতেই ভোটকর্মীর সংখ্যা খুব কম। তার উপর কর্মীদের একটি অংশ ইতিমধ্যেই ভোটের কাজ শুরু থেকে অব্যাহতি চেয়ে জেলাশাসকদের দফতরে দরখাস্ত করেছে। সূত্রের খবর, এমন হাজারখানেক চিঠি জমা পড়েছে। কিছু ক্ষেত্রে আবার প্রভাবশালী নেতা-মন্ত্রীদের থেকেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ভোটের ডিউটি না দেওয়ার সুপারিশ আসছে। প্রশাসনের ধারণা, এ সবের কারণেও আরও হাজারখানেক ভোটকর্মীর নাম এমনিতেই বাদ চলে যাবে। তাই আগে থেকেই কড়া বন্দোবস্ত করে ভোটকর্মীদের ভোটের কাজের শামিল করার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে।
যে সব ভোটকর্মী প্রথম দফার ভোট প্রশিক্ষণে অংশ নেননি, তাঁদের জন্য আবার পৃথক ভাবে প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত করা হতে পারে। প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রশিক্ষণে যাঁরা অনুপস্থিত থেকেছেন, তাঁদের ‘মপ-আপ’ প্রশিক্ষণের সুযোগ দেওয়া হবে। তাতেও যদি তাঁরা অংশ না নেন, তা হলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পারে প্রশাসন। এ প্রসঙ্গে ভোটকর্মী ঐক্য মঞ্চের নেতা স্বপন মণ্ডলের বক্তব্য, “বৈধ এবং যথাযথ কারণ ছাড়া ভোটের ট্রেনিং না করা বা ভোটের ডিউটি না করাকে আমরা সমর্থন করি না। কিন্তু ট্রেনিং নিয়েছেন, এমন ব্যক্তিদেরও শো-কজ় করা হয়েছে, সেটা অন্যায়। কিন্তু ট্রেনিং না নিলে তো শো-কজ় হবে। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। নির্বাচন কমিশনের এটা মনে রাখা উচিত নির্বাচন যারা করতে যাচ্ছেন, তাঁদের পারিশ্রমিক সেই অনুযায়ী দেওয়া হচ্ছে না। সব রাজ্যেও সমান নয়। এই পার্থক্য হবে কেন?”