শিলিগুড়িতে ফিরহাদ হাকিম। —নিজস্ব চিত্র।
সদ্যসমাপ্ত লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গে খাতা খুললেও ‘আশানুরূপ’ ফল হয়নি তৃণমূলের। ফলঘোষণার পর উত্তরবঙ্গের ফলাফল নিয়ে ফিরহাদ হাকিমকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল উত্তরবঙ্গের নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলতে। সেইমতোই মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে মন্ত্রী ফিরহাদ বৈঠক করেন দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে।
এই লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে তৃণমূলের খারাপ ফলাফলের কারণ ঠিক কী, তার উত্তরের খোঁজ দলের অন্দরে চলছেই। তবে ফিরহাদ জানিয়েছেন, প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে সাংগঠনিক স্তরে সমস্যা রয়েছে। তাই এই ফল। একই সঙ্গে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো ফিরহাদও জোর দিয়েছেন ‘পূর্ণ সময়ের জন্য’ রাজনীতি করার লোলোকের উপর। তাঁর কথায়, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমি একমত। যাঁরা ব্যবসা করেন, ঠিকাদারির কাজ করেন, তাঁরা সেগুলোই করুন। রাজনীতি করতে গেলে পুরো সময়টা রাজনীতি করতে হবে। সেটার উপর আমাদের প্রাধান্য দিতে হবে।’’
লোকসভা ভোটে সামগ্রিক ভাবে বাংলায় ভাল ফল করেছে তৃণমূল। কিন্তু এ বারেও উত্তরবঙ্গে তেমন ভাল ফল করতে পারেনি শাসকদল। উত্তরবঙ্গের আটটি লোকসভা কেন্দ্রের ছ’টিতেই জয়ী বিজেপি। একটি পেয়েছে কংগ্রেস। কেবলমাত্র কোচবিহারে জয় পেয়েছে তৃণমূল। সেই ফলাফল পর্যালোচনা করতে শিলিগুড়ি-সহ পার্শ্ববর্তী এলাকার তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে করেন ফিরহাদ। দার্জিলিং জেলা তৃণমূলের সভাপতি (সমতল) পাপিয়া ঘোষ, দার্জিলিং পুরনিগমের চেয়ারম্যান, মেয়র, ডেপুটি মেয়র-সহ মেয়র পারিষদ এবং তৃণমূলের কর্মীসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সেই বৈঠক শেষে ফিরহাদ বলেন, ‘‘এ বার উত্তরবঙ্গের আটটির মধ্যে একটি আসন পেয়েছি আমরা। পঞ্চায়েতে ভাল ফল হয়ছিল। আরও একটু ভাল ফল হত। কিন্তু আমাদের ম্যানেজমেন্ট এবং অর্গানাইজ়েশনের একটি অসুবিধা ছিল।’’ তাঁর দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পের সুবিধা দক্ষিণবঙ্গের মানুষ ভাল ভাবে পেলেও উত্তরবঙ্গে ‘অর্গানাইজ়েশনের’ একটু সমস্যা রয়েছে। তাই প্রচার সে ভাবে পৌঁছোয়নি। এ সব পর্যালোচনার জন্যই তিনি বৈঠক ডেকেছেন। তিনি জানান, বৈঠক শেষে দলের উচ্চ নেতৃত্বকে রিপোর্ট দেবেন। তার পরে দল যদি মনে করে তা হলে কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে একটি বৈঠক বা সমাবেশ করবে। কিংবা অন্য কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তখন সেটা দলের তরফে জানানো হবে। আবার কর্মীদের চাঙ্গা করার জন্য বলেন, ‘‘কারও মনখারাপ করার দরকার নেই। রাজনীতি একটি ফুটবল ম্যাচের মত। গোল হয়েছে। ব্যাক করে ফের গোলের দিকে এগোতে হবে। হাহুতাশ করে লাভ নেই। আমার রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু সাজেশন দিলাম। মিটিং করো। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবেগকে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দাও। মানুষের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আরও বাড়াতে হবে এবং আগামী বিধানসভা আমরাই জয় করব।’’
রবিবার কলকাতা থেকে সস্ত্রীক আলিপুরদুয়ার পৌঁছন ফিরহাদ। সেখানে দু’দিন কাটিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে শিলিগুড়ির সন্নিকটে একটি বেসরকারি হোটেলে পৌঁছন। তার পরে এই বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। উত্তরবঙ্গে তৃণমূল ভাল ফল করবে বলে আশাবাদী ফিরহাদ। তিনি বলেন, ‘‘এখানে ভোট বেড়েছে। আস্তে আস্তেই বেড়েছে। এক সময়ে পাহাড়ে আন্দোলনের সময় ছিল। তার পর অনেকটা সময় গিয়েছে। বিজেপি ছিল। কিন্তু তাদের কাছ থেকে এখানকার মানুষ কোনও সুবিধা পাননি। যা পেয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে পেয়েছেন।’’