(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরেশ পাল (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
চোখমুখ দেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দিলেন, তৃণমূল বিধায়ক পরেশ পালের শরীরের ভিতর কিছু একটা চলছে। তার পরে কুণাল ঘোষ, কলকাতার পুরসভার মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দারদের দিয়ে পরেশকে পাঠালেন হাসপাতালে। দেখা গেল, মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করেছে বেলেঘাটার তৃণমূল বিধায়কের। সময়ে চিকিৎসা হওয়ায় আপাতত স্থিতিশীল পরেশ। তাঁর বিপদও কেটে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
ঘটনা সোমবার বিকেলের। মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন নিয়ে নবান্নে বৈঠক ডেকেছিলেন মমতা। সেই বৈঠকে ডাকা হয়েছিল কুণাল, স্বপন, পরেশ এবং কলকাতার ডেপুটি মেয়র তথা কাশীপুর-বেলগাছিয়ার বিধায়ক অতীন ঘোষকে। সূত্রের খবর, বৈঠক শুরুর মিনিট দশেক পর নবান্নে মমতার ঘরে পৌঁছন পরেশ। বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা বলেন, ‘‘দিদি কখনও চেয়ারে বসে, কখনও হাঁটতে হাঁটতে আমাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তখনই পরেশদা ঢোকেন দিদির ঘরে।’’
সূত্রের খবর, পরেশকে দেখেই মমতা বলেন, ‘‘তোমার ভিতরে ভিতরে কিছু একটা হচ্ছে। চোখমুখ দেখে আমার ঠিক লাগছে না।’’ পরেশ অবশ্য দাবি করেন, তিনি ঠিক আছেন। তাঁর কোনও শারীরিক অসুবিধা বা অস্থিরতা হচ্ছে না। কিন্তু মমতা এ সব বিষয় ফেলে রাখেন না। সঙ্গে সঙ্গে কলকাতার এক জন চিকিৎসকের নাম করে আমলাদের নির্দেশ দেন, তিনি সেই মুহূর্তে কোথায় আছেন তার খোঁজ নিতে। খানিক ক্ষণের মধ্যেই সেই চিকিৎসক কোথায় আছেন জানা যায়। তার পরেই মমতা কুণালদের নির্দেশ দেন পরেশকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে।
পরেশদের সঙ্গেই নবান্নের ১৪ তলার সচিবালয় থেকে নীচে নেমে আসেন মমতাও। গাড়িতে পরেশকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হন কুণাল এবং স্বপন। সোমবার সন্ধ্যাবেলায় মস্তিষ্কে ‘স্ক্যান’ হয় পরেশের। তার পরে এমআরআইও করানো হয়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, সে সব পরীক্ষায় ধরা পড়ে, পরেশের মস্তিষ্কে অল্প অল্প করে রক্ত জমাট বাঁধছে। দ্রুত আইসিইউ-তে নিয়ে গিয়ে তাঁর চিকিৎসা শুরু করা হয়। মঙ্গলবার সকালে পরেশের শারীরিক অবস্থার অনেকটাই উন্নতি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আইসিইউ থেকে তাঁকে কেবিনেও দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার ওই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে কুণাল বলেন, ‘‘মমতাদির অসাধারণ পর্যবেক্ষণের জন্য বড় বিপদ থেকে পরেশদাকে রক্ষা করা গেল। কাল (সোমবার) দেখলাম, তাঁর পর্যবেক্ষণ কেমন ম্যাজিকের মতো কাজ করে গেল।’’ প্রসঙ্গত, মানিকতলার উপনির্বাচন নিয়ে মঙ্গলবারও বৈঠক রয়েছে নবান্নে। সেই বৈঠক বর্ধিত আকারে ডাকা হয়েছে। সেখানে কুণাল, অতীন, স্বপন ছাড়াও মানিকতলা বিধানসভা এলাকার অন্য কাউন্সিলরদেরও ডাকা হয়েছে। কিন্তু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার কারণে পরেশ সেখানে যেতে পারবেন না। তবে পরেশের কথাবার্তা, খাওয়া-দাওয়া সব স্বাভাবিক রয়েছে বলেই হাসপাতাল সূত্রের খবর। তৃণমূলের একটি সূত্রে বক্তব্য, কয়েক দিন পর্যবেক্ষণে রেখে তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে।