প্রতীকী চিত্র।
নির্বাচন কমিশনের তরফে উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং ‘অর্থনৈতিক স্পর্শকাতর’ লোকসভা কেন্দ্রে তদন্তকারী সংস্থা ইডির বিশেষ নজরদারি শুরু হয়েছে৷ কমিশনের নির্দেশে কেন্দ্র ও রাজ্যের অন্য সংস্থাগুলি নজর রাখলেও, মূল নজরদারি করছে ইডি ও আয়কর দফতরের৷ রাজ্য পুলিশের কর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে নজরদারি চলছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, উত্তরের মালদহের দু’টি আসনে নজর থাকলেও, ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য দার্জিলিঙের উপরে বাড়তি জোর দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে, গত লোকসভা ভোটের সময় শতাধিক কোটি টাকা এই কেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকা মিলিয়ে উদ্ধার হয়েছিল। নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশের মতো সীমান্ত সংলগ্ন জেলার জন্য তাই আলাদা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
দার্জিলিঙের জেলা নির্বাচনী আধিকারিক তথা জেলাশাসক প্রীতি গোয়েল বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে একাধিক দল, স্কোয়াড তৈরি হয়েছে। এর বাইরে বিভিন্ন সংস্থা, এজেন্সি তাঁদের মতো কাজ করছে। সর্বত্র নজরদারি রাখার জন্য বলা হয়েছে।’’ কমিশন সূত্রের খবর, রাজ্যের ছ’টি লোকসভা কেন্দ্রের সঙ্গে দার্জিলিং, মালদহের দু’টি কেন্দ্রকে ‘অর্থনৈতিক স্পর্শকাতর’ কেন্দ্র বলেছে কমিশন। গত মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের তরফে আলাদা করে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। সেখানে কেন্দ্র ও রাজ্য মিলিয়ে ২২টি এজেন্সিকে অর্থনৈতিক নজরদারির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ইডি অন্যতম। নানা দুর্নীতি, গরমিল বা বেআইনি লেনদেন সংক্রান্ত লেনদেন নিয়ে তারা খোঁজখবর শুরু করেছে। গত কয়েক বছরে এ কেন্দ্রে লোকসভা, বিধানসভা, পঞ্চায়েত, পুরসভা, ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ) ভোটে হয়েছে। পাহাড় ও সমতলে নানা সময়ে ভোট হয়েছে। ভোটে টাকার ব্যবহার, উদ্ধারের সঙ্গে মদ উদ্ধারের ঘটনার হিসাবের জেরেই এমন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।কমিশনের নির্দেশের পরে নিয়মিত বিভিন্ন এলাকায় নাকা-তল্লাশি, অভিযান এবং নজরদারি শুরু হয়েছে। ইডির একটি অফিসারের দল এই কেন্দ্রগুলিতে নজরদারি চালু করে দিয়েছেন।
প্রশাসন সূত্রের খবর, দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে এরমধ্যে অন্য কেন্দ্রের তুলনায় বিভিন্ন দলের সংখ্যাও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখনও অবধি ১৫২টি ‘এমসিসি’ দল, ১৩৯টি ই-ভিজিল দল, ৫৭টি ফ্লাইং স্কোয়াড, ৬৫টি স্ট্যাটিক সার্ভেল্যান্স টিম, ৪৬টি ভিডিয়ো সার্ভেল্যান্স টিম তৈরি করা হয়েছে। জেলা সদর থেকে প্রতিটি মহকুমার মাধ্যমে সমন্বয় করে কাজ করা হচ্ছে। এর বাইরে পাহাড় ও সমতল মিলিয়ে দার্জিলিং কেন্দ্রে ৪০টি ‘নাকা পয়েন্ট’ ঘোষণা করা হয়েছে। রাজ্য পুলিশের তরফে ওই সেগুলিতে তল্লাশি শুরু হয়েছে। রাতের দিকে বেশি তল্লাশি করা হলেও ভোট এগিয়ে আসতেই তল্লাশি বাড়বে। ট্রেন এবং বিমানে আসা যাত্রীদের গতিবিধিও নজরে রয়েছে।
অফিসারদের একাংশের আশঙ্কা, ভোট আসতেই বিহার, অসম, সিকিম থেকে টাকা লেনদেনের গতিবিধি বেড়ে যায়। বাংলাদেশ কাঁটাতারের সীমান্ত থাকায় কিছুটা কম হলেও নেপালের সীমান্ত উদ্বেগের কারণ। তা ছাড়া, শিলিগুড়ি শহর দেশের মধ্যে জিএসটি, বাণিজ্যকর আদায়ের তালিকার প্রথম সারিতে থাকে। প্রতিদিন শতাধিক কোটি টাকার পাইকারি ব্যবসা এই শহরকে ঘিরে হয়। সেখানে টাকা ভোটের কাজে লাগানো হতে পারে বুঝেই কমিশন আলাদা নির্দেশিকা দিয়েছে।