দিলীপ ঘোষ। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন তাঁরাই। বাম ও কংগ্রেস ‘সেটিং’ করে চলেছে এবং ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে! ভোট-প্রচারে এ বার এই দাবি করলেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি এবং বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী দিলীপ ঘোষ। তাঁকে জবাব ফিরিয়ে দিয়েছে কংগ্রেস এবং সিপিএমও।
দিলীপ মঙ্গলবার তাঁর কেন্দ্রের অন্তর্গত মন্তেশ্বরে গিয়ে বলেছেন, ‘‘তৃণমূলের বিরুদ্ধে তো আমি লড়াই করেছি, পশ্চিম বাংলায় আর কে লড়াই করেছে? সিপিএম, কংগ্রেস ছিল। এখন সেটিং করছে, চির দিন সেটিং করেছে! তাই দোকান উঠে গেল! আমাদের লক্ষ লক্ষ কর্মীরা, তাঁরা সিপিএম করেছেন, কংগ্রেস করেছেন, মার খেয়ে, দুর্নীতি দেখে বিজেপির ঝান্ডার তলায় এসেছেন পরিবর্তনের জন্য। তাঁদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করে আমরা পরিবর্তন করব।’’ লোকসভা ভোটে এ বার আসন সমঝোতা হয়েছে সিপিএম ও কংগ্রেসের। পাশাপাশি দুই আসন বহরমপুর এবং মুর্শিদাবাদ থেকে লড়ছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এবং সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। মুর্শিদাবাদে সেলিমের জয়ের কথা বলেছেন অধীর। সেই প্রসঙ্গ তুলে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিকে দিলীপের কটাক্ষ, ‘‘মহম্মদ সেলিমের হয়ে ওকালতি করছেন, নিজেরই ঠিকানা নেই! উনি নিজে কি জিতবেন? নিজের বহরমপুর দেখুন, উনি জিতলে অনেক হবে, কংগ্রেস তা না হলে পশ্চিমবঙ্গে শূন্য হয়ে যাবে!’’
একই দিনে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ফের দাবি করেছেন, “এখানে ওরা (সিপিএম-কংগ্রেস) বলবে, চোর ধরো জেল ভরো আর দিল্লিতে মীনাক্ষীর (ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়) জেঠু সীতারাম ইয়েচুরি তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়ানের সঙ্গে এক মঞ্চে বসে ছবি তুলবেন। আর নিরাপদ সর্দার চিৎকার করবেন, ইনকিলাব জিন্দাবাদ! দুটো তো একসঙ্গে হয় না।”
তবে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘আমিই লড়েছি, বাকিরা তখন কোথায় ছিল’— দিলীপের এই মন্তব্য সম্পর্কে সতর্ক প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন শুভেন্দু। তাঁর বক্তব্য, ‘‘উনি আমাদের দলের বর্ষীয়ান নেতা। তাঁর মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমি কিছু বলব না। সংবাদমাধ্যম ঝগড়া লাগাতে চায়! আমি কেন বলব? আমরা সবাই মোদীজি’র সেনা। পিসি-ভাইপোর বিরুদ্ধে লড়াই।’’
বিজেপির অন্দরের ব্যাখা, বাম ভোট নিয়ে এ বার ভাবনায় রয়েছেন শুভেন্দুরা। গত পুরসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচনে বামেদের ভোট বেড়েছে, পাশাপাশি ভোট কমেছে বিজেপির। সেই প্রবণতা বজায় থাকলে লোকসভা নির্বাচনেও বিজেপির চিন্তার কারণ আছে। এই কারণেই বিজেপি নেতৃত্ব বারবার তাঁদের দলকেই সাচ্চা তৃণমূল-বিরোধী বলে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। এই প্রচারে তাঁদের সহায়ক হয়েছে সর্বভারতীয় স্তরে ‘ইন্ডিয়া’ জোটে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেস ও বামেদের সহাবস্থানের ছবি। দু’দিন আগে দিল্লির রামলীলা ময়দানে অরবিন্দ কেজরীওয়ালের গ্রেফতারের প্রতিবাদে আম আদমি পার্টির (আপ) ডাকা সমাবেশে তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক এবং সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরির পাশাপাশি বসে থাকার ছবি ছড়িয়ে দিয়ে বিজেপির নেতারা দাবি করছেন, ‘দিল্লিতে দোস্তি, এখানে কুস্তি!’
দিলীপকে এ দিনই জবাব ফিরিয়ে দিয়েছেন কংগ্রেস ও সিপিএম নেতারা। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরের মন্তব্য, ‘‘আমাকে কী দেখতে হবে, উচিত-অনুচিত, আমি জানি। ওঁকে (দিলীপ) তো ওঁর দলই গুরুত্ব দিচ্ছে না, অন্য জায়গায় লড়তে পাঠিয়েছে। উনি আগে নিজের দল নিয়ে ভাবুন।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘বিজেপি যখন বাংলায় কিছুই নয়, তখন থেকে সিপিএমের লড়াই চলছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ঘাস থাকলে যেমন গরু আসবেই, তৃণমূল থাকলে তেমন বিজেপি বাড়বেই! বাংলায় সবাই এখন এটা বুঝে গিয়েছে। দিলীপ ঘোষের বড় বড় কথায় কিছু হবে না!’’