—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
জনজাতি সংরক্ষিত ঝাড়গ্রাম লোকসভায় কুড়মি প্রার্থী দেওয়া নিয়ে দুই সামাজিক সংগঠনে শুরু হয়েছে মতানৈক্য।
সপ্তাহখানেক আগে আদিবাসী কুড়মি সমাজ এবং আদিবাসী নেগাচারী কুড়মি সমাজের নেতৃত্ব ঝাড়গ্রামে আলোচনায় বসে প্রার্থী দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। তখন জানানো হয়েছিল, কৌশলগত কারণে দু’জন মনোনয়ন দেবেন— বরুণ মাহাতো ও মৌমিতা মাহাতো। দু’জনেরই জনজাতি শংসাপত্র রয়েছে। একজনের মনোনয়ন বাতিল হলে অন্যজন লড়াইয়ে থাকবেন। না হলে একজন মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেবেন। নেগাচারীদের বরুণকেই পছন্দ। উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ার একটি গণ-সংগঠনের কর্মী বরুণ ২০২১ সালে সন্দেশখালি বিধানসভায় সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী ছিলেন। অন্যদিকে, আদিবাসী কুড়মি সমাজ মৌমিতাকেই প্রার্থী করতে চায়। কারণ মৌমিতা জন্মসূত্রে সাঁওতাল। বিবাহ সূত্রে কুড়মি পরিবারের বধূ হওয়ায় মাহাতো পদবি ব্যবহার করেন। আর বরুণে তাঁদের আপত্তির মূল কারণ, তাঁর আদি বাড়ি নদিয়ায়। হাবড়ায় থাকেন। ছোটখাটো ব্যবসা করেন। তবে পদবি মাহাতো হলেও বরুণ কুড়মি নন, জঙ্গলমহলের ভূমিপুত্রও নন।
বছর তেতাল্লিশের বরুণ অবশ্য বলছেন, ‘‘আমি জনজাতি, তফসিলি, কুড়মি, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পক্ষে ঝাড়গ্রাম আসনে নির্দল প্রার্থী হচ্ছি। আমি আদিবাসী বেদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ। গত বিধানসভায় সন্দেশখালিতে আইএসএফ-সিপিএমের সংযুক্ত মোর্চার সমর্থনে ‘সংবিধান বাঁচাও পার্টি’র প্রার্থী ছিলাম। কোনও কালেই আমি আইএসএফের সঙ্গে যুক্ত নই।’’ বরুণ জানাচ্ছেন, আগামী সপ্তাহে তিনি বিভিন্ন গণ সংগঠনের নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করতে ঝাড়গ্রামে যাবেন। আদিবাসী নেগাচারী কুড়মি সমাজের মহামোড়ল অনুপ মাহাতো বলছেন, ‘‘আলোচনার ভিত্তিতে বরুণ মাহাতোকেই প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। মৌমিতা মাহাতো অপশনাল চয়েস। এখনও আলোচনার সময় রয়েছে। তবে সহমত না হলে বরুণ মাহাতোর আমাদের সমর্থিত প্রার্থী হবেন। বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই হবে।’’
যদিও আদিবাসী কুড়মি সমাজের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক সঞ্জয় মাহাতোর দাবি, ‘‘আদিবাসী নেগাচারী কুড়মি সমাজের সঙ্গে আমাদের নেতৃত্বের আলোচনায় স্থির হয় এমন প্রার্থী করা হবে যাঁর পদবি মাহাতো। প্রার্থী হবেন মৌমিতাই। আরআমরা জঙ্গলমহল থেকেই প্রার্থী চাইছি। বহিরাগত প্রার্থী চাইছি না।’’ বছর ঊনচল্লিশের মৌমিতা বাঁকুড়ার রাইপুরের বাসিন্দা। পেশায় তিনি অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। আদিবাসী কুড়মি সমাজের ‘মূল মানতা’ (মুখ্য উপদেষ্টা) অজিতপ্রসাদ মাহাতো এখন বলছেন, ‘‘বহিরাগত প্রার্থী নিয়ে সংগঠনে আপত্তি উঠেছে। জঙ্গলমহল এলাকার বধূ মৌমিতাকেই প্রার্থী করার দাবি উঠেছে।’’ তবে অজিত জানাচ্ছেন, নেগাচারীদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে।
কুড়মি সমাজ (পশ্চিমবঙ্গ) এর নেতা রাজেশ মাহাতো, আদিবাসী জনজাতি কুড়মি সমাজের নেতা শিবাজী মাহাতোরা অবশ্য আপাতত ভোট নিয়ে কিছু ভাবছেন না। দু’জনেই একযোগে বলছেন, ‘‘৫ এপ্রিল ঝাড়গ্রামের গড়শালবনির সমাবেশ থেকে আমাদের সিদ্ধান্ত জানাব।’’