Dev on Mamata Banerjee and Abhishek Banerjee

অভিষেক দিনভর দল নিয়ে ভাবেন, তবে জননেতা হতে গেলে মানুষকে ছুঁয়ে দেখার সুযোগ দিতে হবে: দেববাণী

তৃণমূলের অনেকেই বলেন, মমতা এবং অভিষেকের দল পরিচালনা, সাংগঠনিক পদ্ধতির মধ্যে মৌলিক ফারাক রয়েছে। মমতা-অভিষেকের বিষয়ে দেব সেই মৌলিক বিষয়টিই উল্লেখ করেছেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২৪ ১৫:০৩
Share:

(বাঁ দিকে) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন দেব (ডান দিকে)। —ফাইল ছবি।

নেতা হিসেবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ‘ডায়নামিক’। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সারা দিন দল নিয়েই ভাবেন। কিন্তু ‘জননেতা’ হতে গেলে যাতে তাঁকে মানুষ ছুঁতে পারেন, সেই সুযোগ করে দিতে হবে। তৃণমূলের সেনাপতি সম্পর্কে এমনই অভিমত বাংলা ছবির সুপারস্টার তথা ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী দেবের।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইনের সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘দিল্লিবাড়ির লড়াই: মুখোমুখি’তে দেব নেতা হিসেবে অভিষেকের মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেছেন, ‘‘অভিষেক দিনভর দল নিয়ে ভাবেন। সব সময় এটার মধ্যেই থাকেন। তবে আমার মনে হয়, তাঁর উচিত এটা দেখা, যাতে মানুষ তাঁকে ছুঁতে পারে।’’

সাক্ষাৎকারে তৃণমূলের সর্বোচ্চ আসনে থাকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেকের তুলনাও করেছেন দেব। খোলাখুলি বলেছেন, ‘‘অভিষেক বুদ্ধিমান। ফোকাস করতে জানেন। সারা ক্ষণ দল নিয়ে ভাবেন। আর এমন কথা বলেন, শুনে মনে হয় তাঁকে বিশ্বাস করা যায়।’’ আর মমতা? হাসতে হাসতে দেবের জবাব, ‘‘আমি দিদির সঙ্গে ঝগড়়া করতে পারি। করেওছি। দিদিও নিজেও মঞ্চে বলেছেন, আমি এটা না করলে দেব আমার সঙ্গে ঝগড়া করবে!’’ দেব এ-ও জানিয়েছেন অভিষেকের সঙ্গে তিনি ঝগড়া করতে পারবেন না।

Advertisement

তৃণমূলের অন্দরে অনেকেই বলেন, মমতা এবং অভিষেকের দল পরিচালনা এবং সাংগঠনিক পদ্ধতির মধ্যে মৌলিক ফারাক রয়েছে। মমতার সংগঠন পরিচালনার মধ্যে পেশাদারিত্বের চেয়ে বেশি কাজ করেছে আবেগ। কিন্তু অভিষেক সম্পূর্ণ উল্টো। দেব সেই মৌলিক বিষয়টিই উল্লেখ করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘দল এত দিন যে ভাবে চলে এসেছে, আর অভিষেক এখন যে ভাবে চালাচ্ছেন, তার মধ্যে আকাশপাতাল পার্থক্য রয়েছে।’’ সেই ফারাক ঘোচানোর প্রসঙ্গেই দেব বলেছেন, ‘‘জননেতা হতে গেলে মানুষকে ছোঁয়ার সুযোগ দিতে হবে।’’ এমনিতে বিরোধী শিবিরের নেতারা অভিষেকের নিরাপত্তাবলয়, দীর্ঘ কনভয় ইত্যাদি নিয়ে প্রায়ই সমালোচনা করেন। তাঁদের বক্তব্য, বাংলার শাসকদলের এই নেতার নিরাপত্তা প্রধানমন্ত্রীর সমান। দেব সে ভাবে না বললেও তাঁর কথায় স্পষ্ট, তিনি মনে করেন মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের ক্ষেত্রে যে ফাঁক রয়েছে, তা অভিষেকের মুছে ফেলা উচিত।

লোকসভার শেষ অধিবেশনের সময়ে দেবের একাধিক পোস্টে স্পষ্ট হয়েছিল, তিনি রাজনীতি ছাড়তে চান। তার পরে অবশ্য ঘটনার মোড় ঘুরে যায়। দিল্লি থেকে কলকাতায় ফিরে দেব প্রথমে দেখা করেন অভিষেকের সঙ্গে। তার পরে তাঁর বৈঠক হয় মমতার সঙ্গেও। দেব জানিয়েছেন, ওই বৈঠকের আগে কখনও অভিষেকের সঙ্গে তাঁর মুখোমুখি কোনও বৈঠক হয়নি। রাজনীতিতে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্তের নেপথ্যে সে দিনের অভিষেকের কথা যে তাঁর কাছে ‘বিশ্বাসযোগ্য’ লেগেছিল, তা-ও জানিয়েছেন দেব। সেই বৈঠকের পরের দিনই আরামবাগের প্রশাসনিক সভায় দেবকে নিয়ে গিয়েছিলেন মমতা। সেই মঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, কেন্দ্র টাকা না দিলে রাজ্য সরকারই ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের জন্য টাকা দেবে। দেব জানিয়েছেন, তাঁর রাজনীতিতে থেকে যাওয়া এবং ফের ভোটে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তের নেপথ্যে রয়েছে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতিই। দেব এ-ও স্বীকার করে নিয়েছেন যে, ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের ওই প্রতিশ্রুতিই পরোক্ষে তাঁকে রাজনীতিতে রেখে দেওয়ার ‘মাস্টারস্ট্রোক’ হিসেবে কাজ করেছে।

মমতা এবং অভিষেকের তুলনামূলক আলোচনা করতে গিয়ে আরও একটি প্রসঙ্গের অবতারণা করেছেন দেব। তাঁর কথায়, ‘‘অভিষেকের সামনে চালাকি করার কোনও সুযোগ নেই। তিনি তা ধরে ফেলবেন। কিন্তু দিদিকে বোকা বানানো যায়। অনেকেই তাঁকে আবেগ দিয়ে বোকা বানিয়েছেন।’’ দেব কেন আটকাননি? অভিনেতা তথা গত ১০ বছরের সাংসদের সাফ কথা, ‘‘আমার সেই ক্ষমতা নেই। আমি জানি আমার কতটা ক্ষমতা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement