দেব। —ফাইল চিত্র।
আজ, বৃহস্পতিবার ঘাটালে প্রথম প্রচারে আসছেন বিদায়ী সাংসদ তথা এবারেরও তৃণমূল প্রার্থী অভিনেতা দেব। তার আগে কি নিজের অবস্থান বদলাচ্ছেন তিনি? সেই জল্পনা শুরু হয়েছে। তৃণমূলের অন্দরের খবর, সোমবার দেব ফোন করেছিলেন ঘাটালের প্রাক্তন বিধায়ক শঙ্কর দোলইকে। ঘাটালের রাজনীতিতে দেব বনাম শঙ্কর বিপরীত মেরুতে অবস্থান করেন বলেই মনে করা হয়। বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহও তেমনই ইঙ্গিত করে। সই ‘অম্ল মধুর’ সম্পর্কের জের ঘাটালের রাজনীতিতে সুস্পষ্ট। তাই প্রচার শুরুর প্রাক মুর্হূতে ফোনালাপকে ইঙ্গিতপূর্ণ বলছেন অনেকেই।
২০১৬ সালের পর থেকে দেবের সঙ্গে শঙ্করের দূরত্ব শুরু হয়। তবে সেই সময় তাঁদের মধ্যে প্রকাশ্যে বিরোধিতা ততটা দেখা যায়নি। ২০১৯ সালের পর থেকে নানা ঘটনা পরম্পরায় টানাপড়েন তৈরি হয়। সাংসদ অনুগামী বনাম প্রাক্তন বিধায়কের লড়াইয়ের সেই শুরু। তারপর থেকে ঘাটালের রাজনীতির বেশিরভাগটাই এই নিয়েই আবর্তিত হয়েছে। তৃণমূল সূত্রে খবর, এই সময়ের মধ্যে সাংসদ এবং শঙ্করের কথাবার্তাও তেমন হত না। চলতি বছরের গোড়ায় শিশু মেলার কমিটি তৈরিকে কেন্দ্র করে শঙ্করের সঙ্গে দেবের ‘সংঘাত’ কার্যত প্রকাশ্যে চলে আসে। তারপর দেবকে নিয়ে নতুন নতুন সমীকরণ তৈরি হতে দেখা যায়। এরই মাঝে ঘাটালে দেবই যে প্রার্থী, তা স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই বুঝিয়ে দেন। তারপরেও অবশ্য ঘাটালে ওই দু’পক্ষের গোলমাল থামেনি। উল্টে একের পর এক অডিয়ো ভাইরাল হতে শুরু করে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যায় যে, দু’পক্ষের মধ্যে একে অপরকে ‘দেখে নেওয়ার’ প্রতিদ্বন্দ্বিতাও দেখা যায়। শঙ্কর দোলই, ঘাটাল ব্লক তৃণমূল সভাপতি দিলীপ মাঝির সঙ্গে সাংসদ প্রতিনিধি রামপদ মান্নার অডিয়োও ভাইরাল হয় (আনন্দবাজার কোনও অডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি)।
ভোটের আগে দলীয় নেতাদের এমন কার্যকলাপে তৃণমূল কর্মীরাও ক্ষুব্ধ। এই পরিস্থিতিতে সোমবার রাতে দেবের ফোন আসে শঙ্করের কাছে। সূত্রের খবর, বেশ কয়েক বছর বাদে সাংসদ এবং প্রাক্তন বিধায়কের মধ্যে রাজনৈতিক কথাবার্তা হয়েছে সেখানে। দু’পক্ষই স্বাভাবিক ছন্দে কথা বলেন। ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের মত এবারও লোকসভা ভোটের প্রচার-সহ সার্বিক ক্ষেত্রে শঙ্করের পাশে থাকা নিয়ে আলোচনাও হয়েছে তখন। আজ, বৃহস্পতিবার দেবের প্রথম প্রচারে তৃণমূল কর্মীদের সংগঠিক করা নিয়েও কথা হয়েছে।
ঘাটালের প্রাক্তন বিধায়ক শঙ্কর দোলই মানছেন, “সাংসদের সঙ্গে কথা হয়েছে। দু’জনের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। উনি দলের প্রার্থী। তাঁকে জেতানোর জন্য আমার তরফ থেকে একশো শতাংশ সহযোগিতা দেব পাবেন।” তৃণমূলের ঘাটাল ব্লক সভাপতি দিলীপ মাজিও বলেন, “ঘাটাল ব্লকে দলের কোনও গোলমাল নেই। কোনও পক্ষও নেই। একসঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েই ভোট এবং প্রার্থীর প্রচার প্রস্তুতি চলছে।”
তৃণমূল সূত্রের খবর, আজ, বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে ঘাটালে ঢুকবেন দেব। প্রথমে যাবেন দাসপুরের রসিকগঞ্জে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ধূপ কারখানায়। সেখান থেকে কুশপাতায় সাংসদ কার্যালয়ে খাওয়া দাওয়া করবেন। তিনটের পরে মহামিছিলের মাধ্যমে ভোট প্রচার শুরু করবেন তিনি। মিছিল শেষে ঘাটাল রাজীব নিলয়ে বিভিন্ন বিধানসভার দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। কর্মীদের সঙ্গেও বৈঠক এবং আলোচনা করবেন বলে খবর। বৃহস্পতিবার রাতেই কলকাতায় ফিরে যাওয়ার কথা দেবের। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার থেকে টানা তিন দিন ঘাটালে থাকার কথা ছিল দেবের। তার জন্য খড়ার লাগোয়া দলপতিপুরে একটি গেস্ট হাউসও ঠিক করে রাখা হয়েছিল। তবে ১৬ মার্চ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা রয়েছে নারায়ণগড়ে। ওই সভার পরেই দেব ফের প্রচারে নামবেন বলে খবর।
এর আগে দেব শঙ্করকে নানা সময়ে রাজনৈতিক গুরু বলে স্বীকার করেছিলেন। সম্প্রতি দিল্লিতে সংসদে দাঁড়িয়েও দেব শঙ্করকে রাজনৈতিক গুরু বলেন। এবারের লোকসভা ভোট পর্বে সেই গুরু শিষ্যের পাশে শেষ পর্যন্ত কতটা দাঁড়ান, এখন সেটাই দেখার।