—প্রতীকী ছবি।
যাব কি যাব না, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু জানিয়ে উঠতে পারেনি কংগ্রেস! তাদের এই দোলাচলে বয়ে যাচ্ছে অমূল্য সময়। জোটের জন্য প্রস্তুতি রেখে আপাতত আসন জমিয়ে রাখছে সিপিএম। সেই সঙ্গেই তৈরি থাকছে প্রার্থী তালিকা। কংগ্রেসের সঙ্গে পুরনো সমঝোতা আগ বাড়িয়ে ভাঙতে চায় না আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। তবে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব কোনও সিদ্ধান্ত না জানালে অনন্ত কাল অপেক্ষা না করে অন্তত প্রথম দফার প্রার্থী তালিকা আগামী সপ্তাহে ঘোষণা করে দিতে চায় বামেরা।
রাজ্যে ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে বাম শরিক সিপিআই ও ফরওয়ার্ড ব্লক তিনটি করে এবং আরএসপি চারটি আসনে লড়ে। বাকি ৩২টি সিপিএমের ভাগে। মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর আসনে আরএসপি গত বার লোকসভা ভোটে প্রার্থী দিলেও বামফ্রন্ট তাদের সমর্থন করেনি। সেই অর্থে বহরমপুর আসনটি আরএসপি-র খাতা থেকে কার্যত বেরিয়েই গিয়েছে। এ বার বাম শরিক নেতৃত্বকে সিপিএম অনুরোধ করেছে, তাঁরা অন্তত একটি করে আসন ছেড়ে দিন। সিপিএমও কিছু আসন ছাড়বে। বামেদের সব শরিকের ভাগ থেকে বার করা ওই আসনগুলি নিয়ে একটা ‘পুল’ বা হিসেব তৈরি থাকলে কংগ্রেসের সঙ্গে রফার আলোচনা এবং প্রয়োজনে রদবদল করতে সুবিধা হবে। শরিক দলগুলি অবশ্য নির্বাচন কমিশনের খাতায় নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে প্রাথমিক ভাবে আসন ছাড়তে নারাজ। এই বিষয়ে বামফ্রন্টে আলোচনা করে কয়েক দিনের মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে বাম সূত্রের খবর।
দিল্লিতে আগামী ১১ মার্চ সিপিএমের পলিটব্যুরো বৈঠক রয়েছে। তার আগে বাংলায় আসন-রফার ছবি মোটামুটি পরিষ্কার করে নিতে চাইছেন এ রাজ্যের সিপিএম নেতৃত্ব। দলীয় সূত্রের খবর, পরিস্থিতির প্রয়োজনে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমকে যদি লোকসভায় প্রার্থী হতে হয়, তার জন্যও পলিটব্যুরোর অনুমোদন নিয়ে রাখা হবে। প্রয়োজন না হলে তিনি লড়বেন না। দলের পলিটব্যুরোর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘সিপিএম আর বাম শরিকদের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করবে না। বামফ্রন্টের দিক থেকেই যা হওয়ার, হবে। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুকেই এই ব্যাপারে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’’
কংগ্রেস এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও সাড়া-শব্দ না করলেও আইএসএফ নেতৃত্ব শুক্রবার আলিমুদ্দিনে গিয়ে সিপিএমের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তাঁরা যত আসনে লড়ার ‘ইচ্ছা’ প্রকাশ করেছেন, তাতে অবশ্য সিপিএম রাজি নয়। বিমান, সেলিমেরা আইএসএফ-কে অনুরোধ করেছেন, পুনর্বিবেচনা করে ফের তালিকা দিতে। তবে ভোট ঘোষণার সময় এসে গেলেও কংগ্রেস ঠিক কত আসনে লড়তে চাইবে, তার কোনও ধারণা কারও কাছে নেই! সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব যে বামেদের সঙ্গেই চলতে চান, তাতে কোনও সংশয় নেই। কিন্তু এআইসিসি-র একাংশ অন্য দরজাও খোলা রাখতে চাইছে। আমরা এখানে কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়া ভাঙতে চাই না। তবে এটাও ঠিক যে, এই ভাবে অপেক্ষা করে অনির্দিষ্ট সময় বসে থাকা যাবে না!’’
লোকসভার আসন ধরে ধরে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামও চলে এসেছে আলিমুদ্দিনে। শেষ মুহূর্তে বাম শিবিরের একাংশ মুর্শিদাবাদে সেলিম, যাদবপুরে সুজন চক্রবর্তীর মতো ওজনদার নেতাদের প্রার্থী করতে চায়। তবে ওই সব আসনের জন্য অন্য প্রার্থীদের নামও প্রাথমিক তালিকায় রয়েছে। ঠিক হয়েছে, পরিস্থিতি জনিত ‘বাধ্যবাধকতা’ না এলে সুজনেরা প্রার্থী হবেন না, প্রচারে থাকবেন।