মতুয়া সম্মেলনে অলকেশ। — নিজস্ব চিত্র।
মতুয়া মহাসম্মেলনে যোগ দিয়ে বক্তব্য রাখা তৃণমূল ও বিজেপি নেতাদের কাছে নতুন কিছু নয়। এত দিন ওই দুই দলের নেতাদের ডঙ্কা, কাঁসর নিয়ে রাস্তায় নামতেও দেখা গিয়েছে। এই ধরনের কর্মসূচি থেকে এত দিন সিপিএম বিরত থাকলেও, এ বার লোকসভা নির্বাচনের আগে রানাঘাটের সিপিএম প্রার্থী অলকেশ দাসের সম্প্রতি একটি মতুয়া সম্মেলনে যোগ দেওয়া নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়েছে। তাঁকে গলায় মালা পরে মতুয়া সম্মেলনে বক্তব্য রাখতেও দেখা গিয়েছে। সেই ভিডিয়ো ক্লিপ সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
গত ৩০ মার্চ চাকদহের একটি মতুয়া সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন অলকেশ। ওই দিন তিনি অনুষ্ঠান মঞ্চে হাজির থেকে মতুয়া আন্দোলনকে কী ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সে প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখেন। অনেকেই বলছেন, নদিয়ার দক্ষিণ অংশে থাকা রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্র মতুয়া বলয় বলে পরিচিত। মতুয়া ভোট নিজেদের দিকে রাখতে তৃণমূল ও বিজেপি মরিয়া। এ বার সিপিএমও সেই মতুয়া ভোটকে পাখির চোখ করেছে। যে কারণে খোদ প্রার্থীকেই ফুলের মালা পড়ে মতুয়া আন্দোলনের কথা বলতে হচ্ছে।
রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে থাকা কৃষ্ণগঞ্জ, রানাঘাট উত্তর-পূর্ব, রানাঘাট দক্ষিণ ও চাকদহের মতো বিধানসভা কেন্দ্রে বড় অংশের মতুয়া ভোটার রয়েছেন। বিগত দিনের নির্বাচনগুলিতেও মতুয়াদের ভোট রাজনৈতিক দলগুলির কাছে নির্বাচন জয়ের অন্যতম নির্ণায়ক হিসেবে কাজ করেছে। রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে প্রায় ৩৬ শতাংশ মতুয়া ভোটার রয়েছেন। এ বারের লোকসভা নির্বাচনের আগে সিএএ কার্যকর করে মতুয়া ভোট নিজেদের দিকে টানতে চাইছে বিজেপি। আবার সিএএ যে নিঃশর্ত নাগরিকত্ব নয়, তা বলে পাল্টা প্রচার শুরু করেছে তৃণমূল। এই আবহে এ বার তৃণমূল বা বিজেপি কোনও রাজনৈতিক দলই মতুয়াদের নিয়ে ভাবে না, মতুয়াদের আন্দোলনের সঙ্গে তাঁরাই দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত— এমনই দাবি করছেন সিপিএমের নেতারা।
অলকেশ বলেন, “মতুয়া ধর্ম সম্মেলনে যাঁরা যান, তাঁরা আমাদেরই এত দিন ভোট দিয়ে এসেছেন। মতুয়াদের অধিকারের দাবিতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে এসেছি। এত দিন তা সামনে আসেনি কারণ, এ নিয়ে কখনও রাজনীতি চাইনি। অথচ তৃণমূল-বিজেপি মতুয়া ধর্ম সম্মেলনকে রাজনৈতিক প্রচারের জায়গা করে তুলেছে।” তাঁর দাবি, “সম্মেলনে হাজির থেকে বক্তব্য রাখলেও রাজনীতির প্রচার করিনি। হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের কথা বলেছি।”
এ প্রসঙ্গে বিজেপি নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক আশীষবরণ উকিলের কটাক্ষ, “সিপিএম যে আধুনিক হয়েছে, তা দেখে ভাল লাগছে। ভোট বৈতরণী পার করবার জন্য ওরা এখন মতুয়া সম্মেলনেও যোগ দিচ্ছে। তবে মতুয়ারা এত দিন আমাদের সঙ্গেই ছিলেন, এখনও আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন।” আর রানাঘাট সংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি দেবাশীষ গঙ্গোপাধ্যায় দাবি করেন, “সিপিএম কোনও দিন মতুয়াদের সঙ্গে ছিল না। ভোটের আগে নাটক করছে। আর বিজেপি মতুয়াদের সঙ্গে প্রবঞ্চনা করেছে। নিঃশর্ত নাগরিকত্বের কথা বলে এখন শর্তসাপেক্ষে নাগরিকত্ব দেওয়ার কৌশল নিয়েছে। মতুয়া ভোটারেরা ওই দুই দলকে সমর্থন করবে না।”