সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। ছবি: পিটিআই।
গত পাঁচ দশকে এ বারের লোকসভা নির্বাচনে সব থেকে কম আসনে লড়তে চলেছে সিপিএম। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি আজ লোকসভা ভোটের ইস্তাহার প্রকাশ করে জানিয়েছেন, এ বারের নির্বাচনে সিপিএম ৫০টির মতো আসনে লড়বে।
ইস্তাহারে ‘ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বিরোধী’ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ, সন্ত্রাস বিরোধী আইন ইউএপিএ ও ইডি-র আর্থিক নয়ছয় প্রতিরোধ আইন পিএমএলএ-র মতো ‘দানবীয়’ আইন প্রত্যাহারের কথা বলেছে সিপিএম। জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ অধিকার ফেরানো, নির্বাচনী সংস্কার, রাজ্যপাল নিয়োগে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবিত তিন জনের প্যানেল থেকে এক জনকে নিয়োগের পক্ষেও সওয়াল করেছে সিপিএম।
১৯৭৭ সালের লোকসভা নির্বাচনে সিপিএম ৫৩টি আসনে লড়েছিল। তার পরে এই প্রথম সিপিএম এত কম আসনে ভোটে লড়তে চলেছে। ১৯৯১ পর্যন্ত প্রতিটি লোকসভা নির্বাচনেই সিপিএম ৬৩ থেকে ৬৪টি আসনে ভোটে লড়েছিল। ১৯৯৬-এ সিপিএম ৭৫টি আসনে লড়েছিল। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনেও সিপিএম ৯৩টি আসনে লড়েছিল। যদিও মাত্র ৯টি আসনে জিতেছিল সিপিএম। গত লোকসভা নির্বাচনে, ২০১৯-এ সিপিএম ৬৯টি আসনে ভোটে লড়েছিল। তবে সিপিএমের মাত্র তিন জন ভোটে জিতে লোকসভায় গিয়েছিলেন। এর মধ্যে দু’টি আসনই ডিএমকে-র সমর্থনে তামিলনাড়ুতে জিতেছিল সিপিএম। বাম শাসিত কেরলে জুটেছিল মাত্র একটি আসন। অতীতের বাম দুর্গ পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা থেকে সিপিএমকে খালি হাতে ফিরতে হয়।
আজ সিপিএম নেতৃত্ব দলের ইস্তাহার প্রকাশ করে কেন্দ্রে বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ সরকার গঠনের ডাক দিয়েছে। তার জন্য এবং জাতীয় স্তরে জনমুখী রাজনীতি নিশ্চিত করতে সংসদে সিপিএমের শক্তি বাড়ানো প্রয়োজন বলে যুক্তি দিয়েছেন ইয়েচুরি। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, ৫০টির মতো আসনে লড়ে সিপিএম কী ভাবে এই লক্ষ্যে পৌঁছবে? সিপিএমের নেতারা বলছেন, ২০০৪ সালে ইউপিএ-সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন করে কেন্দ্রে জনমুখী নীতি তৈরিতে সিপিএম তথা বামেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। সেই নির্বাচনে ৬৯টি আসনে লড়ে ৪৩টি আসন জিতেছিল। তার পরের ১৫ বছরে সিপিএমের এতটাই শক্তি ক্ষয় হয়েছে যে ২০১৯-এ সিপিএম ৬৯টি আসনে লড়ে ৩টি আসন জিততে পেরেছিল। এ বার তাই অকারণে শক্তিক্ষয় করতে চাইছেন না সিপিএম নেতৃত্ব। বিজেপি-বিরোধী ভোট যাতে ভাগ না হয়, সেই কারণেই সিপিএম এ বার বহু আসনে প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এখনও পর্যন্ত সিপিএম পশ্চিমবঙ্গে ১৯টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। আরও তিন-চারটি আসনে সিপিএম প্রার্থী দিতে পারে। কেরলে সিপিএম এ বার ১৫টি আসনে লড়ছে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে মুর্শিদাবাদ আসন জেতার বিষয়ে সিপিএম আশাবাদী। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম প্রার্থী। এ ছাড়া লোকসভায় শক্তি বাড়ানোর জন্য কেরলের দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন সিপিএম নেতারা। ত্রিপুরাতেও বিশেষ ভাল ফলের আশা করছেন না সিপিএম নেতৃত্ব।