ভোটের আগেই জোট নিয়ে জানাবেন, বললেন মহম্মদ সেলিম। গ্রাফিক— সনৎ সিংহ
রাজ্যে বাম এবং কংগ্রেসের জোটের অবস্থা এখন উৎসবের আগে দর্জির দোকানে সেলাই করতে দেওয়া জামার মতো! এমনই মন্তব্য সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের। রবিবারই জোট সংক্রান্ত জটিলতার মধ্যে বামফ্রন্টের অন্য শরিক দলগুলির সঙ্গে আবার বৈঠকে বসেছিল সিপিএম। বৈঠকের পর এক সাংবাদিক বৈঠকে জোট প্রসঙ্গে প্রশ্ন উঠতেই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বললেন, ‘‘রাজ্যে আমরা এখন বিজেপি এবং তৃণমূল বিরোধী শক্তিগুলিকে একত্র করে সেলাই করার চেষ্টা করছি। সেলাই হয়ে গেলেই জানতে পারবেন।’’
শনিবার লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ হওয়ার পর রবিবারই সিপিএমের সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠকে বসেছিল আরএসপি, সিপিআই, ফরওয়ার্ড ব্লকের মতো বামফ্রন্টের শরিক দলগুলি। তার পর বামফ্রন্টেরও একটি বৈঠক হয়। কথা ছিল এর পরে বিকেল চারটে নাগাদ বামফ্রন্টের তরফে একটি সাংবাদিক বৈঠক করা হবে। কিন্তু দেখা যায় ওই সাংবাদিক বৈঠকে বামফ্রন্টের প্রতিনিধি আসেননি। বদলে এসেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সেলিম। তিনি দেশ এবং রাজ্যের নানা সাম্প্রতিক বিষয়— নির্বাচনী বন্ড থেকে শুরু করে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পড়ে গিয়ে চোট পাওয়া পর্যন্ত সবকিছু নিয়েই সিপিএমের অবস্থান স্পষ্ট করেন। এর পরে তাকে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট এবং পরবর্তী প্রার্থী তালিকা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে সেলিম বলেন, ‘‘পুজো বা ইদের আগে দর্জিদের দোকানে জামা দিলে কী বলে? বলেন পুজোর আগে পেয়ে যাবে বা ইদের আগে পেয়ে যাবে। আমরাও বলছি ভোটের আগে সব হয়ে যাবে।’’
কিন্তু রবিবারের দুপুরে বামফ্রন্টের শরিকদলগুলির মধ্যে যে বৈঠক হল, তার নির্যাস কী? সম্প্রতি বামেরা রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে যে ১৬টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে, তার মধ্যে প্রথম দফার ভোটের একটি আসনের প্রার্থীর নাম ছিল না। রবিবার বামফ্রন্টের বৈঠকে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রথম দফায় পশ্চিমবঙ্গের যে তিনটি কেন্দ্রে ভোট হওয়ার কথা, সেগুলি হল, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার। বামেদের প্রার্থিতালিকায় এই আলিপুরদুয়ারের প্রার্থীরই নাম ছিল না। রবিবার ঠিক হয়েছে বামফ্রন্টের তরফে ওই আসনে লড়বেন আরএসপির প্রার্থী মিলি ওরাওঁ।
আর? কংগ্রেসের সঙ্গে আসনরফা নিয়ে বামেদের শরিকদলগুলির মধ্যে যে ঠান্ডাযুদ্ধ চলছিল রবিবারের বৈঠকে কি তা মেটানো গিয়েছে?
গত কয়েকদিন ধরেই বাম-কংগ্রেস জোটের আসনরফা নিয়ে অসন্তোষের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে বামেদের শরিকদলগুলির মধ্যে। পুরুলিয়ার আসন কংগ্রেসকে ছেড়ে দেওয়া নিয়ে ফরওয়ার্ড ব্লক তীব্র আপত্তি তুলেছে। রাজ্যের আরও কিছু আসনে প্রার্থী ঘোষণা নিয়েও চলছে বামেদের শরিক দলগুলির ঠান্ডাযুদ্ধ। আলিমুদ্দিনে রবিবারের বৈঠক ডাকা হয়েছিল সেই যুদ্ধ থামাতেই। যদিও বামফ্রন্ট সূত্রে খবর, রবিবারের বৈঠকেও ঠান্ডাযুদ্ধের অবসান হয়নি। বরং সিপিএমের একটি অংশ এখন এতটাই বিরক্ত যে, ঘরোয়া আলোচনায় কেউ কেউ এমনও বলেছেন যে— শক্তিহীন শরিকদলগুলির যে ভাবে সিপিএমের ঘাড়ে চেপে সব কিছু করতে চাইছে, আবার দরাদরিও চালাচ্ছে বাড়াবাড়ি রকমের, তাতে বামফ্রন্ট ভেঙে দেওয়া হোক।
গত কয়েকদিন ধরে সিপিএমের মধ্যে এই ধরনের আলোচনা কানে গিয়েছে শীর্ষ নেতৃত্বেরও। সূত্রের খবর, এ ব্যাপারে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু এবং সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সেলিমও নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছেন। যার নির্যাস হল, বামফ্রন্ট অনেক দিনের রাজনৈতিক আন্দোলনের ফসল। তা যদি ভাঙে, তবে তার অভিঘাত বাংলার বাম রাজনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। তা ছাড়া, যে কংগ্রেসকে নিয়ে বামফ্রন্টে এত তর্কবিতর্ক, সেই কংগ্রেসের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী জোট কবে, কী ভাবে বা কতটা হবে— তা নিয়েও সংশয়, বিভ্রান্তি রয়েছে। কংগ্রেস অবশ্য এখনও বাংলায় তাদের কোনও প্রার্থীর নামই ঘোষণা করেনি। আবার জোট নিয়েও কোনও কথা বলেনি। আপাতত তাই কংগ্রেসের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়েই থাকতে হচ্ছে বামফ্রন্ট নেতৃত্বকে। রবিবার সেলিমকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যে সাত দফায় ভোট। ১৬ জনের একটি প্রার্থী তালিকা ইতিমধ্যেই ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা এখনও সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছি। যেমন যেমন ঐক্য হবে। আমরা জানিয়ে দেব।’’