মল্লিকার্জুন খড়্গে। —ফাইল চিত্র।
একটা সময় রাজ্যে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের কথা ভেবে তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য দরজাও খোলা রেখেছিলেন তাঁরা। কিন্তু এ বারে রাজ্যে প্রচারে এসে তৃণমূল এবং বিজেপিকে এক আসনে বসালেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে। কংগ্রেসকে দুর্বল করার জন্য দুই দলকেই দায়ী করে রবিবার মালদহের সুজাপুরের হাতিমারি মাঠে নির্বাচনী সভায় তিনি বলেন, “নরেন্দ্র মোদী যে ভাবে কংগ্রেসকে দুর্বল করার চেষ্টা করছেন, সেই একই ভাবে তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসকে ভাঙার চেষ্টা করে যাচ্ছে।” তবে লক্ষণীয় ভাবে মোদীকে সরাসরি আক্রমণ করলেও মমতার নাম এড়িয়ে গিয়েছেন খড়্গে।
পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল ও কংগ্রেসের মধ্যে জোট হয়নি। তবে প্রচারে তার ছায়া এড়ানো যায়নি কোনও সময়ে। মালদহে এসে এর আগে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক সভায় জোট না-হওয়ার জন্য কংগ্রেসকে দায়ী করেছেন। ভোট কাটাকাটি রুখতে বার্তাও দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী কালিয়াচকে বলেছিলেন, “বাংলায় আমাদের কোনও জোট নেই। বাংলায় তৃণমূল বিজেপির বিরুদ্ধে একাই লড়ছে।” এ দিন তৃণমূলকে উদ্দেশ করে মল্লিকার্জুন বললেন, “তৃণমূল সমর্থকদের বলছি, আপনারা নিজেদের ভোট নষ্ট না করে কংগ্রেসকে ভোট দিন। তৃণমূল কখনও দেশের ক্ষমতায় আসতে পারবে না। বিজেপিকে সরিয়ে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার ক্ষমতা আছে শুধু কংগ্রেসের।”
লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় দফায় এ দিনই প্রথম রাজ্যে এলেন কংগ্রেসের কোনও সর্বভারতীয় নেতা। এ দিন মালদহ দক্ষিণের প্রার্থী ইশা খান চৌধুরী এবং মালদহ উত্তরের প্রার্থী মোস্তাক আলমের সমর্থনে সভা করেন খড়্গে। ৪০ মিনিটের বক্তব্যের বেশিরভাগটাই তিনি ব্যয় করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপির সমালোচনায়। প্রধানমন্ত্রীকে ‘মিথ্যার সর্দার’ বলে কটাক্ষ করে খড়্গে বলেন, “মোদী বলেছিলেন কালা ধন নিয়ে আসবেন ও মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেবেন। বছরে দু’কোটি বেকারের চাকরি দেবেন। কৃষকদের রোজগার দ্বিগুণ করে দেবেন। দিয়েছেন কি? মোদী মিথ্যার সর্দার।”
মল্লিকার্জুন খড়্গে আরও বলেন, “মোদী ফের ক্ষমতায় এলে গণতন্ত্র শেষ হয়ে যাবে। সংবিধান শেষ হয়ে যাবে।” তাঁর অভিযোগ, গরিবকে আরও গরিব রাখতে চান মোদী। বিভিন্ন নির্বাচনী সভায় কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ‘মঙ্গলসূত্র কেড়ে নেওয়া’ ও ‘সম্পত্তি নেওয়া’ নিয়ে মোদীর অভিযোগ প্রসঙ্গে মল্লিকার্জুন এ দিন বলেন, “কংগ্রেস দেশে ৫০ থেকে ৬০ বছর রাজত্ব করেছে। কংগ্রেস কি কোনও মঙ্গলসূত্র ছিনিয়েছে? প্রধানমন্ত্রী, আপনাকে আমরা সম্মান জানাই। কিন্তু আপনি শিশুসুলভ কথা বলছেন।” তাঁর অভিযোগ, বিজেপির সবচেয়ে বড় ‘ভ্রষ্টাচার’ ইলেকশন বন্ডের নামে টাকা তোলা। যে যত বেশি চাঁদা দিয়েছে, তাকে তত বেশি সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
বিজেপির মালদহ দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পার্থসারথি ঘোষ বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর নামে সভায় ভিত্তিহীন কথাবার্তা বলে কংগ্রেস নেতৃত্ব মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। তাতে লাভ হবে না।” তৃণমূলের মালদহ জেলা সভাপতি আব্দুর রহিম বক্সী বলেন, “মালদহ জেলায় কংগ্রেস এখন সাইনবোর্ড হয়ে গিয়েছে। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নে শামিল হতে কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা স্বতঃপ্রণোদিত ভাবেই তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন। দল ভাঙানোর কোনও ব্যাপার নেই।”