—প্রতীকী ছবি।
চার শরিক মিলে ভাগাভাগির সংসার। সেই সঙ্গেই এ বার যোগ হতে চলেছে বাইরের ‘বন্ধু’রা। এত জনের ঠাঁই হবে কোথায়? কার জায়গা কে ছেড়ে দেবে কার জন্য? জটিল অঙ্ক এখন সিপিএমের টেবিলে!
রাজ্যে গত দু’বার বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে লড়েছে বামেরা। বিধানসভায় আসন-সংখ্যা অনেক বেশি থাকে। জায়গা ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্নে ক্ষোভ-বিক্ষোভ সামাল দেওয়াও তুলনায় সহজসাধ্য। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস সমঝোতার প্রস্তুতি এ বারই প্রথম। লোকসভায় আসনের সংখ্যাও সীমিত। তাই কংগ্রেস এবং আইএসএফের সঙ্গে আলোচনার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরুর আগে বামফ্রন্টের মধ্যে অঙ্ক মেলানোর চেষ্টায় বসতে হচ্ছে সিপিএম নেতৃত্বকে। এক একটা দলকে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় ডেকে সমাধান-সূত্র খোঁজার পরিকল্পনা নিয়েছেন তাঁরা।
কংগ্রেস অবশ্য কত আসনে লড়তে চায়, তার কোনও হিসেব এখনও বামেদের হাতে নেই। সর্বভারতীয় স্তরে জয়রাম রমেশের মতো নেতারা বারেবারেই বলে চলেছেন, তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁদের আলোচনা চলছে এবং ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিক হিসেবে বিজেপিকে হারানোই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধান লক্ষ্য। তবে কংগ্রেস সূত্রের খবর, এআইসিসি-র জোট সংক্রান্ত কমিটির নেতা মুকুল ওয়াসনিক বাংলার কংগ্রেস নেতৃত্বকে জানিয়েছেন, তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতার জায়গা এখনও পর্যন্ত নেই। বামেদের সঙ্গে আলোচনায় বসার আগে প্রদেশ নির্বাচন কমিটির বৈঠক সেরে নেওয়াই অধীর চৌধুরীদের ভাবনায় রয়েছে। আর কংগ্রেসকে আসন ছাড়তে হবে, ধরে নিয়েই প্রস্তুতি চালাচ্ছে সিপিএম।
বাম শরিকদের মধ্যে এখন আরএসপি লড়ে আলিপুরদুয়ার, বালুরঘাট, বহরমপুর ও জয়নগর আসনে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরের কেন্দ্র বহরমপুরে গত বারই তাঁকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সিপিএম। আরএসপি ওই আসনে নিজেরা প্রার্থী দিয়ে দিলেও বামফ্রন্ট তাঁকে সমর্থন করেনি। ফরওয়ার্ড ব্লকের ভাগে আছে কোচবিহার, পুরুলিয়া ও বারাসত। এর মধ্যে কংগ্রেসের নজরে আছে পুরুলিয়া। আবার হেমন্ত সরেনের ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চাও ( জেএমএম) একটি আসনে লড়তে চায়। পঞ্চায়েত ভোটের ফলের প্রেক্ষিতে বারাসত আসন নিয়ে আগ্রহ রয়েছে সিপিএম এবং আইএসএফ, দু’পক্ষেরই। ফ ব-র সাংগঠনিক শক্তি এই মুহূর্তে ওখানে ওই দুই দলের চেয়েই কম। তবে নির্বাচন কমিশনের স্বীকৃতি ধরে রাখার লক্ষ্যে তারা নিজেদের আসনে লড়তে চায়। ঘাটাল, মেদিনীপুর ও বসিরহাট আসনে প্রার্থী থাকে সিপিআইয়ের। পঞ্চায়েত ভোট এবং সন্দেশখালি-কাণ্ডের পরে বসিরহাটে এ বার তাদেরই লড়া উচিত বলে মনে করছে সিপিএমের একাংশ। এই সব দাবি ও সমীকরণ নিয়েই বাম শিবিরে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে কথা হবে। ঘরের হাল বুঝে বাইরে কংগ্রেস, আইএসএফের সঙ্গে আলোচনা হবে।
আইএসএফের চেয়ারম্যান নওসাদ সিদ্দিকী নিজে ডায়মন্ড হারবারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়তে চেয়েছেন। ওই আসনটিতে অবশ্য সিপিএমই লড়ে। ফলে, সেখানে ছাড়তে হলে নিজেদের দলেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘আসন সমঝোতা করতে হলে সকলকেই কিছু না কিছু ছাড়তে হবে। আমাদের নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার আসনও তো কমবে। সকলের সঙ্গে আলোচনার পথেই মীমাংসা-সূত্র বার করতে হবে।’’