মালদহের সুজাপুরের সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব ছবি।
রবিবার প্রয়াত কংগ্রেস নেতা গনি খান চৌধুরীর এলাকায় দাঁড়িয়ে কংগ্রেসকে বিঁধলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘‘সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসকে জোট বাঁধতে বারণ করেছিলাম। দু’টি আসনও ছাড়তে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওরা শোনেনি।’’ মালদহ দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী শাহনাওয়াজ আলি রায়হানের সমর্থনে প্রচারে গিয়ে সুজাপুরের সভা থেকে বাংলার কংগ্রেস-সিপিএমের জোট নিয়ে খড়্গহস্ত হন মমতা।
তিনি বলেন, ‘‘ওরা আসন ভাগাভাগি করেছে। আপনারা কি চান আমি সিপিএমের সামনে আত্মসমর্পণ করি? বিধানসভায় একটি আসনও নেই, তা সত্ত্বেও কংগ্রেস নেতৃবৃন্দকে দু’টি আসন দিতে চেয়েছিলাম। বলেছিলাম, সিপিএম-এর সঙ্গে জোট না করতে। কিন্তু ওরা কথা শোনেনি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মনে রাখবেন, এই ইন্ডিয়া জোট তৈরি করেছি আমি, নামটাও আমি দিয়েছি, যা দেখে মোদী থরথর করে কাঁপেন। দিল্লিতে যদি সত্যিই বিজেপিকে রুখতে চান, তা হলে বাংলায় ভোট কাটাকাটির রাজনীতিতে দয়া করে এ বার যাবেন না। আমরাও যাইনি কোথাও। আমরা ইচ্ছে করলে অনেক জায়গায় লড়াই করতে পারতাম। আমাদের একটাই জায়গা বাংলা। এই বাংলা থেকে যদি বিজেপিকে রুখতে না পারি…! সবাই লেজ গুটিয়ে পালালেও, তৃণমূলই নেতৃত্ব দিয়ে ইন্ডিয়াকে ক্ষমতায় আনবে। অন্য কোনও দল নয়।’’
প্রয়াত গনি খানকে স্মরণ করে মমতা বলেন, ‘‘বরকতদাকে আমরা শ্রদ্ধা করি। তিনি যত দিন ছিলেন আপনারা কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছেন। আমরা খুশি হয়েছি। কিন্তু এখনও কেন বার বার ওদেরই ভোট দেবেন? মৌসম বেনজির নুরকে তো আমরাই জিতিয়েছিলাম। কিন্তু লোকসভায় গিয়ে যে চুপ করে বসে থাকে, মানুষের কথা বলে না, তাঁকে কেন প্রার্থী করব? মহুয়া মৈত্রকে দেখুন। সংসদে বিজেপির বিরুদ্ধে মুখ খুলত বলে ওকে তাড়িয়ে দিয়েছে।’’ কংগ্রেসের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি আরও বলেছেন, ‘‘আমি তো বরাবরই কংগ্রেসকে সাহায্য করতে চেয়েছি। বিধানসভায় ওদের একটাও আসন নেই। তবু লোকসভায় দুটো আসন দিতে চেয়েছিলাম। ওরা নিল না, সিপিএমের হাত ধরল। আপনারা চান, বাংলায় আমি সিপিএমের কাছে আত্মসমর্পণ করি?’’
গত বিধানসভা ভোটে মালদহে ফলাফলের কথা উল্লেখ করে মমতা বলেন, ‘‘মনে রাখবেন, মালদহ লোকসভা কিন্তু আগে কখনও তৃণমূল পায়নি। একুশের বিধানসভায় আপনারা আমাদের ঢেলে ভোট দিয়েছিলেন বলে বিজেপিকে আটকাতে পেরেছিলাম, তা হলে এ বারেও নয় কেন?’’ এর পর তিনি যোগ করেন, ‘‘ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। ভুল ত্রুটি যদি কেউ করে, তাতে দলের উপর অভিমান হলে মানুষের কাছে ভুল স্বীকার করা উচিত। আপনারা বিধানসভায় গনি সাহেবকে জিতিয়েছিলেন। মালদহকে মর্যাদা দিয়ে তাঁকে ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান করি। তিনি এলাকায় আসতে সময় পান না। তাই এখন থেকে এখানটা আমি নিজে দেখব।’’ প্রসঙ্গত, মালদহ দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী রায়হানকে লড়াই করতে হচ্ছে গনি পরিবারের সদস্য ইশা খান চৌধুরীর সঙ্গে। এ ছাড়াও লড়াইয়ে রয়েছেন বিজেপি প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী।