বেথুন স্কুলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের থাকার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা নির্বাচনের দিন এখনও ঘোষণা করা হয়নি। তার আগে শুক্রবারই রাজ্যে চলে আসার কথা ১০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর। সেই জওয়ানদের থাকার বন্দোবস্ত করা হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি স্কুলে। যার ফলে পঠনপাঠনে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বেশ কিছু স্কুলে আচমকা বন্ধ করে দিতে হয়েছে ক্লাস। এ বিষয়ে মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে কিছু জানানোই হয়নি বলে অভিযোগ।
কেন্দ্রীয় বাহিনীর থাকার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে উত্তর কলকাতার বেথুন স্কুলকে। ওই স্কুলে স্থানীয় থানা থেকে নোটিস গিয়েছে বলে খবর। যার ফলে শুক্রবার স্কুলের সমস্ত ক্লাস বন্ধ করে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। স্কুল সূত্রে খবর, বেথুনে শুক্রবার একাদশ শ্রেণির একটি পরীক্ষা রয়েছে। স্কুলের প্রধান ভবনে যথাসময়ে পরীক্ষাটি হবে। তবে আর কোনও ক্লাস হবে না। বাকিদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুধু শুক্রবার নয়, এখন থেকে বেথুনে পঠনপাঠন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়ে গিয়েছে। কারণ, কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা স্কুলে থাকলে স্বাভাবিক পঠনপাঠন সম্ভব হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে কবে থেকে, কী ভাবে ক্লাস হবে, তা পরবর্তী কালে স্কুলের তরফে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে ছাত্রীদের।
সূত্রের খবর, শুধু বেথুন নয়, রাজ্য সরকারি একাধিক স্কুলে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে বলে চিঠি গিয়েছে থানা থেকে। তালিকায় রয়েছে যাদবপুরের তিনটি স্কুল, উত্তরপাড়ার একটি স্কুল। এ ছাড়া রাজ্যের অন্যত্রও বিভিন্ন স্কুলে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পর্ষদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে পর্ষদ সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায় জানান, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও পক্ষ তাঁকে কিছু জানায়নি। অর্থাৎ, ভোটের আগে কেন্দ্রীয় বাহিনীর থাকার জন্য যে বেশ কয়েকটি সরকারি স্কুলকে ব্যবহার করা হচ্ছে, পর্ষদ সে সম্পর্কে অবহিত নয়। প্রশাসন বা স্কুলের তরফে পর্ষদকে বিষয়টি জানানো হয়নি। পর্ষদ সভাপতি বলেন, ‘‘আমি বিষয়টি শুনেছি। মার্চের প্রথম দিন থেকেই যদি এ ভাবে সরকারি স্কুল নিয়ে নেওয়া হয়, পঠনপাঠনের সমস্যা হবে। সামনে বিভিন্ন পরীক্ষা রয়েছে। পঠনপাঠনের বিকল্প ব্যবস্থা কী হবে, আমার সঙ্গে তা নিয়ে আলোচনা করা হয়নি।’’
রাজ্যে মোট ১০০ কোম্পানি বাহিনী আসছে। তার মধ্যে প্রথম দফায় কলকাতা পুলিশ এলাকায় আসছে সাত কোম্পানি বাহিনী। দ্বিতীয় দফায় আরও তিন কোম্পানি বাহিনী আসার কথা। একাধিক স্কুলকে এই জওয়ানদের থাকার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। যদিও এখনও তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা পাওয়া যায়নি।
স্কুলে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখার বিরোধিতা করেছে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি (এপিডিআর)। বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেছে, ‘‘এর ফলে দীর্ঘ সময়ের জন্য স্কুল-কলেজে পঠনপাঠন বন্ধ থাকবে। তা জেনে আমরা বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ। এ ভাবে স্কুল-কলেজে পঠনপাঠন বন্ধ রাখা অত্যন্ত অন্যায়, অমানবিক। শিক্ষার অধিকার হরণ। অতীতে সুপ্রিম কোর্টও স্কুলে সশস্ত্র বাহিনী রাখার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিল। এতে বাচ্চাদের মনের উপর চাপ পড়ে, তারা ভয় পায় এবং স্কুলে যেতে চায় না। এই পদক্ষেপ থেকে সরকারকে বিরত থাকার দাবি জানাচ্ছি।’’