(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অরূপ বিশ্বাস। —ফাইল চিত্র।
রেড রোডের ধর্না মঞ্চেই লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের কাছ থেকে ‘বকেয়া’ আদায় নিয়ে শুক্রবার থেকে ধর্নায় বসেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই কর্মসূচির মাঝেই পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে তিনি বৈঠক করলেন। তৃণমূল সূত্রে খবর, দুই বর্ধমানের জন্য একটি কোর কমিটি তৈরি করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই কমিটিতে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে।
ইতিমধ্যেই পশ্চিম মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করে লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন দলনেত্রী মমতা। বেশ কয়েকটি জায়গায় কোর কমিটি গঠন করে দলীয় নেতাদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগও করে দিয়েছেন। শুক্রবার দুই বর্ধমানও সেরে ফেললেন তৃণমূলনেত্রী। দলীয় সূত্রে খবর, রেড রোডের ধর্নামঞ্চের পিছনে মমতার একটি অস্থায়ী অফিস তৈরি করা হয়েছে। সেখানেই দুই জেলার নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মমতা। দুই বর্ধমানের জন্য তিনি যে কোর কমিটি গঠন করে দিয়েছেন, তাতে রাখা হয়েছে রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার, প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ এবং পশ্চিম বর্ধমানের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীকে। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘দুই বর্ধমান মিলিয়ে মোট তিনটি লোকসভা আসন রয়েছে। যার দু’টি তৃণমূল ও একটি বিজেপির দখলে রয়েছে। এ বার সব ক’টা আসনেই জিততে হবে। তাই কোনও ফাঁকফোকর রাখতে চাইছেন না নেত্রী।’’
এক সময়ে তৃণমূলে পর্যবেক্ষক পদ ছিল। দলীয় নেতারাই বিভিন্ন জেলায় সংগঠনের দায়িত্ব সামলাতেন। বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর (যিনি জাতীয় রাজনীতিতে পিকে নামেই সমধিক পরিচিত)-এর সহায়তা নিয়েছিল তৃণমূল। তার পরেই পর্যবেক্ষক পদ তুলে দেয় মমতার দল। সেই সময় দলেও ব্যাপক রদবদল হয়েছিল। উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গ— প্রায় সব জেলাতেই পরিবর্তন আসে। নতুন করে সাজানো হয় যুব সংগঠনও। সেই সঙ্গে পর্যবেক্ষকের পরিবর্তে জেলায় জেলায় ‘চেয়ারম্যান’ পদ তৈরি করা হয়। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিরাট জয়ের পর থেকে দলের নেতাদের আবার জেলায় জেলায় সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়া শুরু হয়। বিশেষ করে গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনের ঠিক প্রাক্কালে তা বেশি নজরে এসেছিল। দার্জিলিং ও নদিয়ায় অরূপকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছিলেন মমতা। সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী এবং পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে। তখন থেকেই দলের অন্দরে জল্পনা শুরু হয়, আবার কি তা হলে পর্যবেক্ষক পদ ফিরছে তৃণমূলে? তৃণমূল অবশ্য কখনওই আনুষ্ঠানিক ভাবে সে কথা স্বীকার করেনি। দলীয় নেতাদের বিভিন্ন জেলায় দায়িত্ব দেওয়ার পাশাপাশি কিছু জায়গায় কোর কমিটিও তৈরি করে দিয়েছেন মমতা। দুই বর্ধমানে সংগঠন সামলানোর জন্য সেই পথেই হাঁটলেন তিনি।
তৃণমূলে যখন পর্যবেক্ষক পদ ছিল, তখন পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম, মঙ্গলকোট-সহ কয়েকটি বিধানসভা দেখতেন অনুব্রত মণ্ডল। তৃণমূল সূত্রে খবর, দুই বর্ধমানের জন্য তৈরি কোর কমিটিকে সেই সব এলাকায় বিশেষ নজর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। প্রসঙ্গত, অনুব্রত গরু পাচার মামলা গ্রেফতার হয়ে এখন তিহাড় জেলে বন্দি। তাঁর জেলাতেও সংগঠনের দায়িত্বে রয়েছে মমতারই তৈরি করে দেওয়া পাঁচ সদস্যের কোর কমিটি।