আগন্তুক: বাসে করে শহরে এলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। রবিরাব, ধর্মতলা চত্বরে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের কথা মাথায় রেখে ভোটের দিন ঘোষণার আগেই জাতীয় নির্বাচন কমিশন এ রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কমিশন সূত্রের খবর, সেই মতো শহরে সাত কোম্পানি বাহিনী আসার কথা ছিল। শনিবার রাত থেকে রবিবার ভোরের মধ্যে তিন কোম্পানি ঢুকে যায়। বাকি চার কোম্পানি বাহিনী রবিবার রাতের মধ্যে ঢুকে গিয়েছে।
সূত্রের খবর, উত্তর ২৪ পরগনায় মোট ২১ কোম্পানি বাহিনী মোতায়েন হওয়ার কথা। এর মধ্যে বারাসত এবং বনগাঁয় তিন কোম্পানি করে, ব্যারাকপুরে ছয় কোম্পানি, বসিরহাটে পাঁচ কোম্পানি, বিধাননগরে চার কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার কথা জানানো হয়েছে। এ ছাড়াও, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় নয় কোম্পানি বাহিনী মোতায়েন করার কথা ঘোষণা করেছে কমিশন। অতি স্পর্শকাতর বুথ এলাকাগুলিতে বার বার রুট মার্চ করতে বলা হয়েছে বাহিনীকে।
রবিবার থেকেই কলকাতার বেশ কয়েকটি থানা এলাকায় এবং উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয়ে গিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর রুট মার্চ। এ দিন সকালে কলকাতা পুলিশের পূর্ব ডিভিশন, সাউথ সাবার্বান ডিভিশন এবং বন্দর ডিভিশনের একাধিক থানা এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী রুট মার্চ করেছে। আজ, সোমবার থেকে বাকি ডিভিশনে শুরু হবে রুট মার্চ। উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ থানার মণিগ্রাম, গাইঘাটা থানার জলেশ্বর, গোপালনগর থানার গোপালনগর বাজার এলাকা, বাগদা থানার বাজিতপুর, করঙ্গ, পেট্রাপোল থানা এলাকায় বাহিনী টহল দিয়েছে। হাবড়া, আমডাঙা, দত্তপুকুর ও দেগঙ্গা থানা এলাকার বেশ কিছু জায়গায় এ দিন কেন্দ্রীয় বাহিনী ঘুরেছে। তবে, অশান্ত সন্দেশখালিতে রবিবারেও বাহিনীর টহল শুরু হয়নি। পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন রাতেই বাহিনী সন্দেশখালি পৌঁছবে। সেখানে আজ, সোমবার থেকে টহল দেওয়া শুরু হবে। এ দিন বসিরহাট থানার ভ্যাবলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী রুট মার্চ করে।
উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার আরও বেশ কিছু এলাকায় রবিবার রাতেই বাহিনী পৌঁছনোর কথা। ভোটের আগে এলাকায় নিয়মিত টহল চলবে বলেই খবর। ব্যারাকপুরে এক কোম্পানি বাহিনী এ দিন টহল দিয়েছে। ব্যারাকপুরের নগরপাল অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘ব্যারাকপুর যাতে অশান্ত না হয়ে ওঠে, সে দিকে প্রশাসনের সতর্ক আছে। বাহিনী রুট মার্চ শুরু করেছে। থানাগুলিতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’’ রবিবার রাতেই পৌঁছে গিয়েছে আরও তিন কোম্পানি বাহিনী।
অন্য দিকে, শনিবার সকালে লেদার কমপ্লেক্স থানায় পৌঁছে গিয়েছিল এক কোম্পানি বাহিনী। এ দিন তারা টহল দেয় ভাঙড়ের স্পর্শকাতর গ্রামগুলিতে। ভাঁটিপোতা, হুদেরআইট গ্রামে রুট মার্চের সময়ে এ দিন ভোটারদের সঙ্গেও কথা বলতেও দেখা যায় বিএসএফের জওয়ানদের।
উত্তর ২৪ পরগনাতেও টহল দেওয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা এ দিন গ্রামের সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। গ্রামের পথে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে টহল দিতে দেখে তাঁরা ভরসা পাচ্ছেন বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। মণিগ্রামের বাসিন্দা এক মহিলার কথায়, “আমাদের এখানে আগে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেখিনি। এখানে কখনও ভোটে অশান্তি হয়নি। তবে, বাহিনীকে দেখে ভরসা হচ্ছে।”
বনগাঁর পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার বলেন, “বনগাঁ পুলিশ জেলায় দুই কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী পেয়েছি। পরিকল্পনা অনুযায়ী, রবিবার থেকে সব থানা এলাকায় রুট মার্চ শুরু হয়েছে।”
তবে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর রুট মার্চকে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “শান্ত বনগাঁকে ভোট ঘোষণার আগেই অশান্ত করতে গ্রামে গ্রামে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এতে শান্তিপ্রিয় মানুষ ভীত, সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছেন।” অন্য দিকে, বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবদাস মণ্ডল বলেন, “কেন্দ্রীয় বাহিনী দেখে মানুষ ভরসা পাচ্ছেন। তৃণমূল ভয় পাচ্ছে, কারণ এর ফলে ওরা ভোট লুট করতে পারবে না। আর এ রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কেন্দ্রের সরকার পাঠায়নি। জাতীয় নির্বাচন কমিশন পাঠিয়েছে।”