ধবার সকালে খেজুরিতে এসে পৌঁছল কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। খেজুরির কামারদা হাইস্কুলে। নিজস্ব চিত্র।
লোকসভার নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণার আগেই রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়নের কথা জানানো হয়েছিল নির্বাচন কমিশনের তরফে। সেই মতো রাজ্যের কয়েকটি জেলায় ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় বাহিনী এসে গিয়েছে। শুরু হয়েছে রুটমার্চ। পূর্ব মেদিনীপুরে কেন্দ্রীয় বাহিনী এসে পৌঁছল মঙ্গলবার গভীর রাতে। আইটিবিপি’র (ইন্দো-টিবেটিয়ান বর্ডার পুলিশ) পাঁচ কোম্পানী বাহিনী সোমবার গভীর রাতে খড়্গপুরে পৌঁছেছিল। সেখান থেকে গাড়িতে করে মঙ্গলবার রাতে পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন থানা এলাকায় ওই বাহিনী এসেছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, প্রথম দফায় জেলায় সাত কোম্পানী কেন্দ্রীয় বাহিনীর আসার কথা জানানো হয়েছিল। রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে ওই বাহিনী যাবে। মঙ্গলবার রাতে যে পাঁচ কোম্পানী বাহিনী জেলায় এসেছে, তারা উত্তরপ্রদেশের কানপুর থেকে এসেছে। পরে, নদিয়ার কৃষ্ণনগর থেকে আরও দুই কোম্পানী কেন্দ্রীয় বাহিনী (বিএসএফ) জেলায় আসবে। রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর এলাকাগুলি চিহ্নিত করার নির্দেশ ছিল নির্বাচন কমিশনের। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় রাজনৈতিক সংঘর্ষ প্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত নন্দীগ্রাম, খেজুরি, ময়নার বাকচা, কাঁথির ভূপতিনগর, এগরার পটাশপুর প্রভৃতি থানা এলাকা।
পূর্ব মেদিনীপুরের ওই সব সংঘর্ষপ্রবণ জায়গাগুলিতে বাসিন্দাদের আস্থা ফেরাতে ভোটের অনেক আগে থেকে তাই কেন্দ্রীয় বাহিনী রুটমার্চ করবে। জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, জেলায় আগত কেন্দ্রীয় বাহিনীর মধ্যে নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের আশদতলা নিবেদিতা গার্লস হাইস্কুলে এক কোম্পানি বাহিনী রাখার ব্যবস্থা হয়েছে। ময়নার বাকচা এলাকা রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর হিসেবে কয়েকবছর ধরে পরিচিত রয়েছে। বাকচার জন্য এক কোম্পানি বাহিনী ময়নায় পাঠানো হয়েছে। ময়না-মেদিনীপুর রাজ্য সড়কের ধারে একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ভবনে ওই বাহিনীরা থাকছে। আর ভগবানপুরে এক কোম্পানি বাহিনী পাঠানো হয়েছে। জেলা পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, আপাতত ওই পাঁচ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, প্রথমে ওই বাহিনী রাখার জন্য স্কুল, কলেজ, অতিথি নিবাসের খোঁজ চালানো হয়েছিল। তবে বর্তমানে স্কুলে পঠনপাঠন চলায় প্রথম দফায় আসা বাহিনীকে রাখার ক্ষেত্রে স্কুলের বিকল্প বিভিন্ন জায়গা বেছে নেওয়া হয়েছে। তবে কয়েকটি জায়গায় স্কুলের ভবন আংশিকভাবেও ব্যবহার করা হচ্ছে।
লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার আগে জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে তৃণমূল এবং বিজেপি নেতৃত্বের চাপানউতোর শুরু হয়েছে। বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সাধারণ সম্পাদক মেঘনাদ পাল বলেন, ‘‘নন্দীগ্রাম, ময়না-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় শাসকদল বিভিন্ন সময়ে আমাদের কর্মীদের উপরে হামলা করে। তাতে রাজনৈতিক গোলমাল বাড়ে। নির্বাচন কমিশন আগাম সতর্কতা হিসেবে ভোটের আগেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে এলাকার মানুষের আস্থা ফেরাতে সাহায্য করেছে।’’ এদিকে, তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজ্য পুলিশকে শাসক দলের পুলিশ হিসেবে অভিযোগ করেন বিরোধীরা। তাহলে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের অধীনে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কীভাবে নিরপেক্ষ হিসেবে ভাবব আমরা? উদ্দেশ্যে প্রণোদিত ভাবেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে এত আগে।’’