নীতিশ কুমার। ছবি: পিটিআই।
নিজের রাজ্যে জাতগণনা সফল ভাবে সম্পন্ন করেছিলেন তিনি। যা দেখে গোটা দেশে জাতগণনার দাবি ওঠায় রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছিল বিজেপিকে। সেই পদক্ষেপের মূল কারিগর নীতীশ কুমার এখন এনডিএ-তে ফিরে আসায় দেশ জুড়ে জাতগণনার দাবি ধামাচাপা পড়ে যাবে বলে আশা করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। যদিও কংগ্রেস কোনও ভাবেই এই দাবি থেকে সরে আসতে রাজি নয়।
নীতীশের সঙ্গে বিজেপির বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ ছিল জাতগণনা। নীতীশ নিজের রাজ্য বিহারে জাতগণনার রিপোর্ট পেশ করার পাশাপাশি কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকেও জাতগণনার পক্ষে সরব হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। গোড়ায় এ নিয়ে কংগ্রেসের মধ্যে দ্বিমত ছিল। দলের একাংশের বক্তব্য ছিল, ওবিসি সংরক্ষণের প্রশ্নে কংগ্রেস প্রকাশ্যে সরব হলে, দলিত ও জনজাতি ভোটে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কিন্তু নীতীশের পরামর্শ মেনে জাতগণনার পক্ষে সরব থাকেন রাহুল। বিহার, উত্তরপ্রদেশের সীমা ছাড়িয়ে অন্যান্য রাজ্যেও জাতগণনার দাবি উঠতে থাকায় রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়ে যান বিজেপি নেতৃত্ব। কারণ, বিরোধীদের মতে, বর্তমানে দেশের জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি ওবিসি সমাজের। জাতগণনায় তা স্পষ্ট হলেই সেই অনুপাতে সংরক্ষণের দাবিতে সরব হবেন ওবিসিরা। যা কিছুতেই মেনে নেবেন না তথাকথিত জেনারেল ক্যাটেগরি বা উচ্চবর্ণ। ফলে এক দিকে উচ্চবর্ণ ও অন্য দিকে ওবিসি— দুই ভোটব্যাঙ্কের সমর্থন হারাবে বিজেপি।
কিন্তু গোটা পরিকল্পনাটি যাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত— সেই নীতীশ কুমার এখন এনডিএ শিবিরে ফিরে আসায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দলের এক নেতার মতে, সঙ্ঘ পরিবারের মতাদর্শ অনুযায়ী, বিজেপি সব জাতি-সম্প্রদায়কে হিন্দুত্বের বড় ছাতার নীচে নিয়ে আসার কথা বলে থাকে। যাতে হিন্দু ভোটের বিভাজন না ঘটে। নীতীশ সেই হিন্দুত্বের ভিতেই ধাক্কা দিতে চেয়েছিলেন। তিনি ওবিসি, উচ্চবর্ণ, অতি পিছিয়ে থাকা শ্রেণি, দলিত, জনজাতিকে হিন্দুত্বের ছাতার তলা থেকে সরিয়ে এনে অনগ্রসরতার মাপকাঠিতে মাপতে চেয়েছিলেন। কারণ, কোন জাতের মানুষ অর্থনৈতিক ও সামাজিক দিক থেকে কতটা পিছিয়ে— তা একমাত্র বোঝা সম্ভব জাতগণনার মাধ্যমেই। নীতীশ বোঝাতে চেয়েছিলেন, ধর্মীয় মেরুকরণ নয়, একমাত্র জাতগণনাই দিতে পারে সামাজিক ন্যায়।
তবে নীতীশ এনডিএ-তে এসে যাওয়ায় আপাতত অপ্রিয় প্রশ্নগুলি ওঠার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে গেল বলেই মনে করছেন বিজেপি নেতারা। তাঁদের মতে, প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজে ওবিসি সমাজের প্রতিনিধি। তিনি ওবিসিদের উন্নয়নের ব্যাপারে দায়বদ্ধ। সেই কারণেই ওবিসি কমিশন গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পাশাপাশি, মেডিক্যাল পরীক্ষায় ওবিসি ও আর্থিক ভাবে অনগ্রসর শ্রেণির পড়ুয়াদের সংরক্ষণ নিশ্চিত করেছেন। যা নিয়ে এ বারের লোকসভা ভোটে প্রচারে নামারও কৌশল নিয়েছে বিজেপি। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশের ৮০টি আসনে ভাল ফল করতে ওই রাজ্যের ওবিসি সমাজকে কাছে টানতে চাইছে তারা।
ওবিসি সমাজের পাশে থাকার বার্তা দিতে উত্তরপ্রদেশে জাতীয় সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, উত্তরপ্রদেশের ৪০৩টি বিধানসভা আসনের প্রতিটিতে ওবিসি সমাজের ৫০০ যুবককে বেছে নেওয়া হবে। যাদের নাম দেওয়া হবে ‘ওবিসি যোদ্ধা’। বিজেপি সূত্রের মতে, প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রে ওবিসি সমাজের যে জাতের ২০ হাজারের বেশি ভোট রয়েছে— তাদের মধ্যে থেকে এক বা একাধিক প্রতিনিধিকে ‘ওবিসি যোদ্ধা’ হিসেবে বেছে নেওয়া হবে। যাঁরা প্রদেশ, জেলা ও মণ্ডল পর্যায়ে দল ও নিজেদের জাতের মধ্যে সংযোজকের ভূমিকা পালন করবেন। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘ওবিসি নেতা হিসেবে নরেন্দ্র মোদী গত দশ বছরে ওবিসি সমাজ, গরিব-কৃষকদের জন্য যে কাজ করে চলেছেন, তার প্রচারের দায়িত্ব থাকবে ওবিসি যোদ্ধাদের উপরে। নিজেদের জাতের কাছে দলের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করবেন তাঁরা।’’