গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
শক্তি নেই, এমন আসনে লড়াইয়ের জন্য নতুন ছক কষেছে বিজেপি। ছদ্মবেশী প্রার্থী দিয়ে তৃণমূলের দুর্ভেদ্য ঘাঁটিতে পদ্মফুল ফোটাতে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে কৌশল সাজাচ্ছে তারা। সেই কৌশলে এক একটি লোকসভায় একাধিক নির্দল প্রার্থী দাঁড় করিয়ে ভোটের ময়দানে বাজিমাত করতে চাইছে নরেন্দ্র মোদীর দল। এমন কৌশলের নেপথ্য কারণ প্রসঙ্গে জানা যাচ্ছে, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় বুথ এজেন্ট বসানোই বড় চ্যালেঞ্জ বিজেপির কাছে। ভোটের দিন বুথ আগলে রাখতে তাই নির্দল প্রার্থীদের উপর ভরসা করতে চাইছে দল। এ ক্ষেত্রে কোনও বহিরাগত ব্যক্তি নয়, সংগঠনে থাকা এবং ভোট প্রসঙ্গে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদেরই ব্যবহার করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। তবে কিছু ক্ষেত্রে নির্দল প্রার্থীদের পরিচয় গোপন রাখা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে বিজেপির একটি সূত্র।
যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী সায়নী ঘোষের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন বিজেপির অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়। এই কেন্দ্রে তিনি তিন জন নির্দল প্রার্থী দাঁড় করিয়েছেন। অরুণ সরকার, শঙ্কর মণ্ডল এবং অবনীকুমার মণ্ডল নামে তিন জন নির্দল প্রার্থীকে দাঁড় করিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে অরুণ আবার ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সোনারপুর দক্ষিণ কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী অঞ্জনা বসুর পক্ষে ডামি প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। অবনী ২০১৬ সালে ভাঙ্গড় বিধানসভায় বিজেপির প্রার্থী ছিলেন। একই কায়দায় বারাসাত লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী স্বপন মজুমদার এক জন অভিজ্ঞ বিজেপি কর্মীকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। ওই কেন্দ্রে সুমায় হীরা নামে এক বিজেপি নেতাকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে। সঙ্গে আরও এক জনকে ডামি প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছে বিজেপি।
বেশ কিছু ক্ষেত্রে বিজেপি তাদের নির্দল প্রার্থীদের নাম প্রকাশ্যে জানালেও এমন কিছু আসন রয়েছে, যেখানে নির্দল প্রার্থীদের নাম প্রকাশ্যে আনা হচ্ছে না। বসিরহাট, মথুরাপুর, উলুবেড়িয়া, জয়নগরের মতো তৃণমূলের ‘দুর্গে’ কারা ছদ্মবেশী প্রার্থী হচ্ছেন, তা গোপন রাখা হচ্ছে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন বিজেপি নেতা অভিজিৎ দাস (ববি)। তিনি নিজের ডামি প্রার্থীদের নাম প্রকাশ্যে জানাতে চাননি। ডায়মন্ড হারবার সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি সুফল ঘাটু বলেন, ‘‘অবশ্যই ডায়মন্ড হারবারে আমাদের একাধিক ডামি প্রার্থী থাকবেন , তবে তাঁদের নাম, ঠিকানা সবই গোপন রাখা হচ্ছে। কে আমাদের দলের তরফে ডামি প্রার্থী হচ্ছেন, তা তৃণমূল জানতে পারলেই ওই প্রার্থী এবং তাঁর পরিবারের উপর নানা রকমের আক্রমণ নেমে আসবে। তাই আমরা ডামি প্রার্থী দাঁড় করালেও তাঁদের প্রসঙ্গে কোনও তথ্যই সংবাদমাধ্যমকে জানাব না।’’ তবে শক্তিহীন আসন ছাড়াও শক্তিশালী আরামবাগ, কাঁথি এবং তমলুকেও নির্দল প্রার্থীর বিকল্প রাখা হয়েছে বিজেপির তরফে।
তবে ভোটের দিনই নয়, ভোটগণনার দিনেও এই নির্দল প্রার্থীরা পদ্মশিবিরের কাজে লাগবেন বলেই মনে করছেন বাংলার রাজনীতির কারবারিদের একাংশ। কারণ, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে অভিজ্ঞতার অভাবে বিজেপির বহু কাউন্টিং এজেন্ট গণনাকেন্দ্র ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন, নতুবা দলের পক্ষে শেষরক্ষা করতে পারেননি। তাই তিন বছর আগের শোচনীয় পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়ে বিজেপি এই কৌশল নিয়েছে বলেই মনে করছেন রাজ্যের পদ্মশিবিরের শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ।