—প্রতীকী চিত্র।
জঙ্গলমহলে প্রাণের দাম কি স্রেফ পাঁচ লক্ষ টাকা!
এবার লোকসভা ভোটের প্রচারে এই ভাবেই হাতি সমস্যাকে হাতিয়ার করছে গেরুয়া শিবির। ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী প্রণত টুডুর প্রচারেও থাকছে সেই কথা। হাতির সমস্যা ঠেকাতে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে প্রণতের দাবি, সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবেই বাড়ছে হাতির সমস্যা। আতঙ্কের দিন-রাত কাটাতে হচ্ছে জঙ্গল লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের। শহরেও ঢুকে পড়ছে হাতি। এলাকার মানুষ তাঁকে জিতিয়ে সংসদে পাঠালে হাতি সমস্যা মেটাতে কেন্দ্রীয়স্তরে পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিচ্ছেন প্রণত। হাতি নিয়ে বিজেপির এই প্রচার অস্বস্তি বাড়াচ্ছে শাসকদলের মধ্যেও। কারণ হাতি নিয়ে এলাকাবাসীর ক্ষোভ বিস্তর।
ঝাড়গ্রাম জেলার জঙ্গল লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারা হাতির সমস্যায় দীর্ঘদিন ধরেই জেরবার। ঝাড়গ্রাম সংসদীয় এলাকাধীন ঝাড়গ্রাম জেলার পাশাপাশি, পড়শি জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা ও শালবনি বিধানসভা এলাকাতেও হাতির সমস্যা প্রবল। বন দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে হাতির হানায় ঝাড়গ্রাম সংসদীয় এলাকায় ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সিংহভাগ ঝাড়গ্রাম জেলার বাসিন্দা। এছাড়াও বাড়ি-ঘর ও ফসলের প্রচুর ক্ষতি হয় প্রতি বছর। সব মিলিয়ে ক্ষতিপূরণ বাবদ বন দফতরের প্রতি অর্থবর্ষে প্রায় দু’-আড়াই কোটি টাকা খরচ হয়। এখন এ রাজ্যে হাতি সহ বন্যপ্রাণীর হানায় মৃত্যুকালীন ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৫ লক্ষ টাকা। এছাড়া মৃতের পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়ারও বন্দোবস্ত করেছে রাজ্য সরকার।
তবে পড়শি রাজ্য ওড়িশায় মৃতের পরিবারকে ৬ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। কেরল সরকার সম্প্রতি হাতির হানায় মৃতের পরিজনকে এককালীন ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ও পরিবারের এক সদস্যকে চাকরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ঝাড়গ্রাম জেলায় কিছু হাতি ‘রেসিডেন্ট’ হয়ে বারো মাস এলাকায় থাকে। সেই হাতিগুলি দিনের বেলাতেও খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে হানা দেয়। রাস্তায় যানবাহন থামায়। আর রাতের বেলা এক বা একাধিক হাতি, কখনও আবার হাতির দল লোকালয়ে ঢুকে চাষের খেত তছনছ করে, ধানের গোলা, মাটির বাড়ি ভাঙে। ভোরে ও রাতে জঙ্গলপথে হাতির হানায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তেমনই হাতি তাড়াতে গিয়ে কিংবা হাতি দেখতে গিয়েও প্রাণহানির ভূরি ভূরি উদাহরণ রয়েছে। লোকালয়ে হাতির হানা ঠেকাতে পরিখা খনন, গ্রামের চারপাশে ব্যাটারি চালিত বিদ্যুৎবাহী তারের বেড়া, সচেতনতা কর্মসূচির নানা পদক্ষেপ করেও হাতির হানা ঠেকানো যায়নি। হাতির জন্য পৃথক ময়ূরঝর্না বনবিভাগ তৈরির বিষয়টিও ঠাণ্ডা ঘরে। বিজেপি প্রার্থী প্রণত টুডু বলছেন, ‘‘জঙ্গলের পরিমাণ কমেছে। হাতিরা লোকালয় মুখী হয়ে পড়ছে। হাতি-মানুষের মধ্যে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, ১৩ বছর রাজ্যের ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূলের সরকার। অথচ হাতি নিয়ে পরিকল্পনা বৈঠকের বাইরে কার্যকরী কোনও পদক্ষেপই হয়নি।
ঝাড়গ্রাম জেলার বাসিন্দা বন দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা হাতি সমস্যার জন্য কেন্দ্রের বিরুদ্ধেই তোপ দেগেছেন। তিনি বলছেন, ‘‘দু’বছর আগে আমরা দশটি হাতিকে চিহ্নিত (যেগুলি ভীষণ রকম উপদ্রব করছে) করে এলাকা থেকে সরাতে চেয়ে কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের অনুমতি চেয়েছিলাম। মাত্র একটি হাতির ক্ষেত্রে অনুমতি মেলায় ২০২২ সালের অক্টোবরে সেটিকে ধরে বক্সার জঙ্গলে পাঠানো হয়। কিন্তু বাকি হাতিগুলি সরানোর ক্ষেত্রে কেন্দ্রের অনুমতি মেলেনি। এর থেকেই স্পষ্ট বোঝা যায় জঙ্গলমহলের হাতির সমস্যা নিয়ে কেন্দ্রের কি মনোভাব!’’ ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভাপতি সহ-সভাপতি প্রসূন ষড়ঙ্গী বলছেন, ‘‘হাতির সমস্যা মেটাতে রাজ্য সরকার আন্তরিক ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে। বিজেপি হাতি নিয়েও এখন উস্কানির রাজনীতি করছে।’’