গত বিধানসভা ভোটের সময়ে সাধারণের মতামত নিয়ে নির্বাচনী ইস্তাহার তৈরির কথা বলেছিল বিজেপি। রাজ্য ও জেলা দফতর-সহ নানা জায়গায় ভোটারেরা যাতে মতামত জানাতে পারেন, তার জন্য বাক্স রাখা হয়েছিল। লোকসভা নির্বাচনের আগে তার থেকে এক ধাপ এগিয়ে অনলাইনে ভোটারদের মতামত সংগ্রহ করছে বিজেপি। গত বৃহস্পতিবার দেশ জুড়ে নতুন ভোটারদের উদ্দেশে বার্তা দিতে গিয়ে এমন কথা জানিয়েছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এর পর থেকেই দলের পক্ষে মতামত সংগ্রহ শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে সেটা হচ্ছে মূলত নরেন্দ্র মোদীর নিজস্ব ওয়েবসাইট এবং নমো অ্যাপের মাধ্যমে। রাজ্য স্তরেও নেতা-কর্মীরা যাতে সেখানে মতামত জানান সে উদ্যোগ নিতেও বলা হয়েছে। তেমনটা করছেন বাংলার রাজ্য নেতৃত্বও।
ভোটারেরা মোদী তথা বিজেপির কাছে কেমন দাবি জানাচ্ছেন সেটা দেখাও যাচ্ছে নমো অ্যাপে। আর তাতে দেখা যাচ্ছে একটা বড় অংশের মানুষ চান, বিজেপি লোকসভা নির্বাচনের ইস্তাহারে এটা বলুক যে, তৃতীয় বার ক্ষমতায় এলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য উদ্যোগী হবে সরকার। কেমন ভাবে সেটা সম্ভব সে ব্যাপারেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, জন্মনিয়ন্ত্রণ নিয়ে এমন আইন আনা হোক, যেখানে দু’টি সন্তানের বেশি হলে সরকারি সুযোগ-সুবিধা কমবে। এমন দাবির পাশাপাশি, পেট্রল, ডিজেলের মতো জ্বালানির উপরে জিএসটি চালুরও দাবি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এ বার কেন্দ্র জ্বালানির উপরে জিএসটি বসিয়ে গোটা দেশে এক দরের ব্যবস্থা করুক। কোনও রাজ্য আলাদা করে কর ও সেস চাপিয়ে যাতে অতিরিক্ত মুনাফা না পেতে পারে।
বিজেপি তথা মোদী সরকারকে চাপে ফেলার মতো আবেদনও রয়েছে। অনেকেই বলেছেন, জিনিসপত্রের দাম কী করে করা যায় সেটা আগে ঠিক করুক বিজেপি। শুধু ইস্তাহারে রাখলেই হবে না এর জন্য নির্দিষ্ট নীতির কথা বলা হোক। আবার কর্মসংস্থান নিয়েও নির্দিষ্ট পরিকল্পনার কথা ইস্তাহারে উল্লেখ করার দাবিও রয়েছে। এক জন লিখেছেন, ‘‘আমরা চাই গৃহহীন, কর্মহীন মানুষের কথা ভাবা হোক কোনও ভেদ ভাব না রেখে। দিনের পর দিন গরিব মানুষ আরও গরিব হচ্ছে। আমরা চাই এ বিষয়ে আরও নজর দেওয়া হোক।’’ একেবারে নিচু স্তর থেকে ক্রীড়াবিদদের পাশে দাঁড়ানো, বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন, কৃষকদের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করা প্রযুক্তি তৈরিরও দাবি জানানো হয়েছে।
ইস্তাহারে রাখার জন্য মোদীর কাছে আবদার আরও অনেক। কেউ কেউ চেয়েছেন কাশী, মথুরায় মন্দির হোক অযোধ্যার মতো। তবে বেশির ভাগ পরামর্শই দেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির বদল চেয়ে। দ্রুত গতির ট্রেন থেকে পর্যটন কেন্দ্রগুলির পরিকাঠামো উন্নয়ন চেয়েছেন অনেকে। কেউ চেয়েছেন, আগামীর ভারতের কথা ভেবে স্কুল স্তর থেকেই পাঠ্যক্রমে আর্থিক বিষয়কে ঢোকানো হোক। জমি মাফিয়াদের হাত থেকে সাধারণকে বাঁচানোর আইন চাওয়ার পাশাপাশি অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর প্রতিশ্রুতিও চাওয়া হয়েছে। এ সবের মধ্যেই এক বিজেপি ভক্ত চেয়েছে, গোটা দেশে সমস্ত থানার আধুনিকীকরণের মাধ্যমে ‘স্মার্ট পুলিশ স্টেশন’ গড়া হোক। প্রতিটি স্কুলে থাকুক ‘স্মার্ট ক্লাস রুম’। পাক অধিকৃত কাশ্মীর উদ্ধার করার প্রতিশ্রুতিও চেয়েছেন কেউ কেউ।