মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারী।
আসন্ন রামনবমী উপলক্ষে বিজেপি অশান্তি বাধাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংখ্যালঘুদের উদ্দেশে তাঁর আবেদন, কেউ যেন প্ররোচনায় পা না দেন। মুখ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্যকে ‘উস্কানিমূলক’ বলে পাল্টা সরব হয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
কোচবিহারের রাসমেলার মাঠে সোমবার তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীর সমর্থনে সভা করতে এসে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘আমি সংখ্যালঘু ভাই-বোনদের বলব, ১৭ এপ্রিল (রামনবমী, যে দিন ছুটি ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার) ওদের সংঘর্ষ করার দিন। আমি মনে করি, ওই দিন মানুষের সম্মানের দিন হোক, ঐক্যের দিন হোক। গালাগালি দিলেও মাথা ঠান্ডা করে প্রার্থনা করবেন। ওদের (বিজেপি) বিদায় চাইবেন। কিন্তু কেউ প্ররোচনায় পা দেবেন না। আমাদের শান্তি রক্ষা করতে হবে।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘ওরা সংঘর্ষ করে এনআইএ ঢুকিয়ে দেবে ভোটটা যাতে না হয়, আর ভোটটা যাতে ওরা ছাপ্পা মেরে দেয়, সে ব্যবস্থা করবে!”
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন আরও বলেছেন, নির্বাচন এলে ‘যুদ্ধ-যুদ্ধ পরিবেশ’ তৈরি করা হয়। তাঁর সতর্ক-বার্তা, ‘‘আর একটা কথা, সংঘর্ষ বাধাতে পারে। দয়া করে কেউ সংঘর্ষে যাবেন না। আপনাকে যদি গালিও দেয়, তা-ও যাবেন না৷ কারণ, আপনাদের যিনি এখানে প্রার্থী (বিজেপির নিশীথ প্রামাণিক) তিনি বকলমে গুন্ডাদের মাফিয়াদার! তিনি কিন্তু আবার আগুন লাগাবেন। তিনি কিন্তু আবার আগের বারের শীতলখুচির মতো গুলি চালিয়ে দেবেন! আবার আপনাদের বিপদে ফেলবেন!” কেন্দ্রে বিজেপি সরকার যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো মানে না এবং ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ হলে সেই কাঠামো থাকবে না বলেও তোপ দেগেছেন মমতা। আলিপুরদুয়ারেও একই সুর ছিল মুখ্যমন্ত্রীর গলায়।
নির্বাচনী প্রচারে এ দিন কোচবিহারেই ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। দিনহাটার সংহতি ময়দানের সভায় শুভেন্দুর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘সংখ্যালঘুদের ভয় দেখানো হচ্ছে। ভারতবর্ষে ওরা জাত-পাতের রাজনীতি করে। সংখ্যালঘুদের ভয় দেখায়। সংশোধিকত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরোধিতা করে। এক মাসের বেশি হয়ে গিয়েছে, সিএএ-তে কারও নাগরিকত্ব যায়নি। তাই সংখ্যালঘুরাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন তোলামূল থেকে। মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন, যত রকম উস্কানি দেওয়া যায়, তা-ই তিনি দিয়েছেন।’’ পরে ইসলামপুরের কোর্ট মাঠের সভায় বিরোধী দলনেতার আরও সংযোজন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আলিপুরদুয়ার থেকে বলেছেন রামনবমীর ১৭ তারিখ নাকি সংঘর্ষ দিবস! কিন্তু কোথাও কোন গন্ডগোল হবে না।’’
বিজেপির কোচবিহার লোকসভা আসনের প্রার্থী তথা বিদায়ী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথও মুখ্যমন্ত্রীর দিকে পাল্টা আঙুল তুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিজেই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে মান্যতা দেন না। সিএএ আইনে পরিণত হয়েছে, সমস্ত ভারতবর্ষ মেনে নিয়েছে। উনি তা মানছেন না! তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রীর কোমরে দড়ি লাগাতে চান, তিনি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো নিয়ে কী বলেন!’’
বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্র (ইভিএম) এবং ভিভিপ্যাট নিয়েও এ দিন সন্দেহ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমাদের সকলের সন্দেহ ভিভিপ্যাট, আর ইভিএম মেশিনের চিপটা কে তৈরি করে দিয়েছে, সবাই জানতে চাইছে। কোনও উত্তর নেই নির্বাচন কমিশনের। লোকে যেখানে ভোট দিক না কেন, ওই শয়তানগুলোর উপরে ভোট পড়বে? মানুষের ভোটের দাম অনেক বেশি, এটা মাথায় রাখতে হবে।”
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পাল্টা সরব হয়েছে সিপিএম এবং কংগ্রেসও। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘তৃণমূল আসার আগে বিজেপি এই রাজ্যে রামনবমী বা অন্য কোনও অনুষ্ঠান ঘিরে কোনও বেচাল করার কথা ভাবতেই পারতো না। বরং, সাম্প্রতিক কালে দেখা গিয়েছে রামনবমী বা হনুমান জয়ন্তীতে বিজেপির পাল্টা নেমে পড়েছে তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে এ দিন কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশকে স্বাগত জানাচ্ছি। আর মুখ্যমন্ত্রী যা বলছেন, তাতে উস্কানির চেষ্টা আছে বলেই মনে হচ্ছে। প্রশাসনিক প্রধানের মুখে এই রকম কথা মানায় না।’’ প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায়েরও মতে, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তথ্য থাকলে ব্যবস্থা নিন। যারা অশান্তি করার ছক করছে বলে ওঁর কাছে খবর আছে, তাদের সতর্কতামূলক গ্রেফতার করুন। উস্কানিমূলক কথা বলে মেরুকরণের চেষ্টার কার লাভ? আর ইভিএমের চিপ নিয়ে যা বলছেন, সেই ভাবেই কি ২০২১ সালে সব ভোট বিজেপি আর তৃণমূলের মধ্যে ভাগ হয়ে পড়েছিল?’’