প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল ছবি।
গো-বলয়ে যে ক’টি আসন কম পড়বে, তা তেলঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে পাওয়া বাড়তি আসন থেকে পুষিয়ে যাবে বলে আশায় বুক বাঁধছেন বিজেপি নেতৃত্ব। অন্য দিকে আজ ভোট শেষের পরে কংগ্রেসের দাবি, চার পর্বের ভোট শেষ। নরেন্দ্র মোদীর বিদায় লগ্নের আর মাত্র তিন সপ্তাহ বাকি।
আজ ৯টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত জম্মু-কাশ্মীরের ৯৬টি আসনে ভোট হয়। রাত পৌনে ১২টা পর্যন্ত ভোটের হার দাঁড়িয়েছে ৬৭.২৫%। পাঁচ বছর আগে চতুর্থ পর্বে ভোট পড়েছিল ৬৯.১২%। এখনও সব কেন্দ্র থেকে তথ্য না আসায় বাকি তিন পর্বের মতোই চতুর্থ পর্বের চূড়ান্ত ভোটের হারও আরও কিছুটা বাড়বে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আজকের ভোটের পরে দেশের ৫৪৩টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৩৭৯টি আসনে ভোট হয়ে গেল। বাকি তিনটি পর্বে ১৬৪টি আসনে ভোটগ্রহণ বাকি। পঞ্চম দফায় ৪৬টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে ২০ মে।
প্রথম তিনটি পর্বে আশানুরূপ ফল হওয়া মুশকিল বলে ঘরোয়া ভাবে স্বীকার করে নিচ্ছেন বিজেপি নেতাদের একাংশ। বিশেষ করে গো-বলয়ের বিহার ও উত্তরপ্রদেশ এবং পশ্চিম ভারতে মহারাষ্ট্রে দল বেশ কিছু জেতা আসন হারাতে চলেছে বলে এক রকম নিশ্চিত তাঁরা। এই আবহে আজ ভোটের পরে বিজেপি শিবির থেকে ঘরোয়া ভাবে বলা হচ্ছে, তেলঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং ওড়িশায় দল আগের চেয়ে বেশি আসন জিততে চলেছে। ফলে গো-বলয়ে হারানো আসনের ঘাটতি অনেকটাই মেটানো সম্ভব হবে। পাশাপাশি মধ্যপ্রদেশ ও ঝাড়খণ্ডে যে হারে ভোট পড়েছে, তাতে সেখানেও ভাল ফলের ব্যাপারে আশাবাদী দল। তবে বিজেপিকে উদ্বেগে রেখে প্রথম তিনটি পর্বের মতো আজও ভোটের হার কম ছিল উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে।
অন্য দিকে, কংগ্রেস নেতৃত্ব দাবি করছেন, বিজেপির হার এখন সময়ের অপেক্ষা। আজ দলের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেন, ‘‘বিজেপির লেখচিত্র (গ্রাফ) প্রথম পর্ব থেকে সেই যে নীচে নামতে শুরু করেছে, তা ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। চতুর্থ পর্বের ভোট শেষের পরে বলাই যায়, গোটা দেশে ইন্ডিয়া জোটের পক্ষে হাওয়া রয়েছে। আর তিন সপ্তাহ পরেই নরেন্দ্র মোদীর বিদায় হতে চলেছে।’’ এখানেই না থেমে জয়রামের কটাক্ষ, ‘‘দক্ষিণে সাফ, উত্তর, পশ্চিম ও পূর্বে ‘হাফ’ (অর্ধেক)।’’ জয়রামের ব্যাখ্যা, দক্ষিণে বিজেপির পক্ষে খাতা খোলাই সম্ভব হবে না। আর উত্তর, পশ্চিম ও পূর্বে দল পাঁচ বছর আগে যে সংখ্যক আসন পেয়েছিল, তার অর্ধেক পেতে চলেছে। ফলে তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসা হচ্ছে না নরেন্দ্র মোদীর।
অতীতের নির্বাচনগুলিতে প্রচারের বিষয় কী হবে তা ঠিক করে দিয়েছে বিজেপি। কিন্তু এ যাত্রায় তারা সেটা করতে পারেনি বলেও দাবি করছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। দলের মতে, এ যাত্রায় প্রচারের বিষয় স্থির করে দিয়েছেন রাহুল গান্ধী ও কংগ্রেস। সে কারণে প্রতিটি পর্বে মোদী প্রচারের বিষয়বস্তু বদলাতে বাধ্য হয়েছেন। জয়রামের কথায়, ‘‘প্রথম পর্বের ভোটের পরে মোদী মেরুকরণ ও লোকের মনে ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করার চেষ্টা করেছিলেন। দ্বিতীয় দফার পরে হাস্যকর ভাবে লোকের ঘর থেকে মহিষ কেড়ে নেওয়া নিয়ে সরব হলেন। আর তৃতীয় দফার পরে তো মোদী নিজের বক্তব্যে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তিনি নিজের দুই অতিপ্রিয় শিল্পপতি বন্ধুর নামে অভিযোগ করে বসলেন।’’ কংগ্রেসের দাবি, দশ বছর সরকার চালানোর পরে এখন উন্নয়ন নিয়ে প্রচার বন্ধ। চারশো আসন পাওয়ার কথাও খুব বেশি বলা হচ্ছে না। আগ্রাসী ভাবে হিন্দু-মুসলমান বিভাজন, মেরুকরণের প্রচারে বাধ্য হচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর দল। যে প্রচার আগামী তিন পর্বে
আরও তীব্র হবে বলেই আশঙ্কা করছেন বিরোধীরা।
আজ পাঁচ বছর পরে ভোট হল কাশ্মীরে। শ্রীনগরে আজ ভোট পড়েছে ৩৭.৯৩%। ২০১৯ সালে ওই কেন্দ্র ভোট পড়েছিল ১৪.৪৩%। ১৯৯৬ (৪১%) সালের পরে এই প্রথম এত সংখ্যক মানুষ ভোট দিতে লাইনে দাঁড়ালেন। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ওই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন সেরে ফেলতে হবে কমিশনকে। রাজনীতিকদের একাংশের মতে আজকের ভোটদানের হার দ্রুত ভোট করাতে উৎসাহ দেবে কমিশনকে।