(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
বিধানসভা ভোটের আগে নন্দীগ্রামের গণহত্যা প্রসঙ্গে বাগ্যুদ্ধ শুরু হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে। তিন বছর পরে ফের তেমনই একটি কথার লড়াইয়ের সাক্ষী রইল জঙ্গলমহল।
শুক্রবার ঝাড়গ্রামে এসে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ছত্রধর মাহাতোর হাত ধরে তিনি জঙ্গলমহল চিনেছিলেন। শনিবার শালবনির পিড়াকাটার সভা থেকে এ নিয়ে মমতাকে নিশানা করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এক দিকে দাবি করেন, ‘‘ছত্রধর মাহাতো যদি আপনার লোক হয়, তা হলে কিষেনজিও আপনার লোক।’’ তার পরেই বলেন, ‘‘তা হলে জ্ঞানেশ্বরী হত্যাকাণ্ডের (ট্রেন দুর্ঘটনা) দায়িত্বও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিতে হবে। তিনশোর বেশি নিরীহ যাত্রীকে হত্যা!’’ যদিও সংশ্লিষ্ট মহলের লোকজন জানাচ্ছেন, জ্ঞানেশ্বরী মামলায় ছত্রধর অভিযুক্ত ছিলেন না। ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি প্রসূন ষড়ঙ্গীও পাল্টা বলেন, ‘‘জ্ঞানেশ্বরীর দায়ের কোনও প্রশ্নই নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই দুর্ঘটনার পরে ছুটে এসেছিলেন। দুর্ঘটনাগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোয় মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন।’’ অন্য দিকে, এ বারেও সেই বুদ্ধবাবুর প্রসঙ্গ টেনে মমতার প্রতি শুভেন্দুর মন্তব্য, ‘‘বুদ্ধবাবু অত ছোট লোক নন আপনার মতো।’’ যার তীব্র প্রতিবাদ করেছে তৃণমূল।
ঝাড়গ্রামের বিজেপি প্রার্থী প্রণত টুডু এবং মেদিনীপুরের প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পালের সমর্থনে পিড়াকাটায় সভা করেছেন শুভেন্দু। সেখানে তাঁর আরও দাবি, মমতাকে জঙ্গলমহল চিনিয়েছেন তিনিই। শুভেন্দুর কথায়, ‘‘আপনি জঙ্গলমহল চিনতেন না। ২০১১ সাল, ৭ জানুয়ারি, সকাল ১০টা ১৫। আমি লালগড়ের নেতাইয়ে গিয়ে দেহ কুড়িয়েছিলাম। আপনি কোথায় ছিলেন তখন? পরের দিন এসেছিলেন সাজানো বাগানে ফুল তুলতে।’’ শুভেন্দুর আরও দাবি, ‘‘ছত্রধরবাবু ঝাঁপ বন্ধ করে দিয়েছিল তৃণমূলের। নাম দিয়েছিল জনসাধারণের কমিটি। আপনার (মমতার) দলটা উঠে গিয়েছিল এখানে।’’
লালগড় ব্লক তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি তথা ব্লকের নির্বাচনী কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শ্যামল মাহাতো যদিও বলেন, ‘‘ছত্রধরদা তৃণমূল কোনও দিন ছাড়েননি। ২০০৯ সালে লোকসভা ভোটের সময়ও তৃণমূলের সঙ্গেই ছিল। পাশাপাশি অরাজনৈতিক গণসংগঠন তৈরি করেছিল।’’
চাইলে তিনি ঝাড়গ্রামের পদ্ম-প্রার্থী চিকিৎসক প্রণত টুডুর পদত্যাগপত্র আটকে দিতে পারতেন— শুক্রবার এমনটাও বলেছিলেন মমতা। এর পাল্টা বলতে গিয়ে শুভেন্দু প্রশংসা করেছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। মমতার উদ্দেশে বলেছেন, ‘‘সুকুমার হাঁসদার (চিকিৎসক বিধায়ক) কথা মনে আছে? ২০১১ সাল। আড়াই বছর চাকরি বাকি ছিল। সুকুমার হাঁসদার পদত্যাগপত্র বুদ্ধবাবু পাঁচ মিনিটের মধ্যে গ্রহণ করেছিলেন।’’ শুভেন্দু আরও মনে করিয়েছেন, ‘‘হাই কোর্টে প্রণত আবেদন করেছিলেন। হাই কোর্ট কান মুলে পদত্যাগ গ্রহণে বাধ্য করিয়েছে।’’
শুভেন্দুর মুখে বুদ্ধের প্রশংসা প্রসঙ্গে সিপিএমের ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক প্রদীপকুমার সরকারের প্রতিক্রিয়া, ‘‘বুদ্ধবাবু সত্যি যোগ্য মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, এত দিনে শুভেন্দু অধিকারী বুঝতে পেরেছেন।’’ আর মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা বলছেন, ‘‘সুকুমার হাঁসদার বাবা রাজনীতিবিদ ছিলেন। সুকুমারবাবু চিকিৎসক হলেও রাজনীতিটা বুঝতেন। প্রণতবাবুর পরিবারের কেউ রাজনীতিবিদ ছিলেন না। প্রণতবাবু রাজনীতি করতে নয়, নিজের আখের গোছাতে এসেছেন।’’
জুতোয় সেফটিপিন লাগানো নিয়েও মমতাকে খোঁচা দিতে ছাড়েননি শুভেন্দু। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘সেফটিপিন তো আপনার পায়ে ফুটেছে নন্দীগ্রামে। ১,৯৫৬ ভোটে (হেরেছেন)। সেই সেফটিপিন কোনও দিন বেরোবে না।’’ মন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার পাল্টা মন্তব্য, ‘‘বিরোধী দলের নেতা। বড় রাজনীতিবিদ ভাবেন নিজেকে। কী করে এ সব বলেন, বুঝি না।’’