(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী। শুভেন্দু অধিকারী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
শুধুমাত্র হিন্দুদের নেতা নন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি সকলের নেতা। তিনি রাষ্ট্রবাদীদের নেতা। নন্দীগ্রামে বিজেপি সংখ্যালঘু মোর্চার সংকল্প সভা থেকে এমনই বার্তা দিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুধু তা-ই নয়, তমলুকের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যাতে হিন্দুদের পাশাপাশি মুসলিমদের ভোট পান, সেই আবেদনও করেন তিনি। পাশাপাশি, তৃণমূল এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিভাজনের অভিযোগও তুলেছেন শুভেন্দু।
নন্দীগ্রামে শুভেন্দু বলেন, ‘‘বিজেপি হিন্দুদের দল আর তৃণমূল মুসলিমদরদি, এমন বার্তা দিয়ে একটা প্রাচীর তৈরির চেষ্টা করে তৃণমূল। তবে গত কয়েক মাসে সেই প্রাচীর ভেঙে গিয়েছে অনেকটা। বিজেপি কখনও মুসলিমদের নীচে বসায় না। উপরে রাখে। আমরা সব সময় রাষ্ট্রবাদীদের সমর্থন করি।’’
রবি ও সোমবার রাজ্যে এসে একাধিক সভা থেকে হিন্দু-মুসলমান শব্দ উচ্চারণ করে মোদী তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোষণের অভিযোগ তুলেছেন। সেই পরিস্থিতিতে দলের মুসলিম সমর্থক এবং সংখ্যালঘু মোর্চার সদস্যদের মধ্যে খারাপ প্রভাব পড়তে পারে বলে দলের মধ্যেই আশঙ্কা তৈরি হয়। মঙ্গলবার শুভেন্দুর বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে, বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব কোনও ক্ষত যাতে তৈরি না হয় সে ব্যাপারেও উদ্যোগী।
এর পরেই শুভেন্দু একাধিক উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেন, নরেন্দ্র মোদী সরকার কোনও ভেদাভেদ করে না। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা রামরাজ্য স্থাপন করতে চাই। রামরাজ্য মানে সকলের মাথায় পাকা ছাদ। ভারত সরকার বাংলায় ৪০ লক্ষ বাড়ির জন্য ৪৫ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। তার পরও কেন এত মাটির বাড়ি! কোথায় গেল এত টাকা?’’
শুভেন্দু বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী সরকারের কোনও প্রকল্প কোনও নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের জন্য নয়। সকলের জন্য। লক্ষ্মীর ভান্ডার ‘আমাদের টাকা’ বলে প্রচার করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভুল কথা। আমরা ক্ষমতায় এলে তিন হাজার টাকা দেব এই প্রকল্পে। এটা বিজেপির প্রকল্প।’’ কেন বিজেপির প্রকল্প, তা বোঝাতে মধ্যপ্রদেশ, অসমের উদাহরণও দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা।
নন্দীগ্রামের সভায় শুভেন্দু ইমামদের একাংশকে আক্রমণ করেন। তাঁর অভিযোগ, কিছু ইমাম তৃণমূলের হয়ে প্রচার করছেন। শুভেন্দু বলেন, ‘‘কিছু ইমামসাহেবকে লাগানো হয়েছে। আড়াই হাজার টাকার বিনিময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে বিক্রি হয়েছেন। তবে সবাই নন, কিছু ইমামই করছেন।’’ তার পরই সরাসরি রইস উদ্দিন পুরকাইত নামে এক ইমামের নাম করে আক্রমণের ঝাঁজ বৃদ্ধি করেন শুভেন্দু। তাঁর অভিযোগ, রইউদ্দিন লিফলেট দিয়ে প্রচার করছেন এই বলে যে, মোদী হিন্দুত্ববাদী নেতা।
শুভেন্দুর কথায়, ‘‘আমি ওই ইমাম সাহেবকে বলতে চাই, করোনার ভ্যাকসিন যে নিয়েছেন, তা কি হিন্দুদের ভ্যাকসিন ছিল? সকলে লাইনে দাঁড়িয়ে একই ভ্যাকসিন নিয়েছেন। যে রেশন নেন, তা ভারত সরকার দেয়। সকলের সঙ্গে এক লাইনে দাঁড়িয়ে নেন।’’
রইস উদ্দিনকে নিশানা করে বিরোধী দলনেতা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘আমি এই ইমাম সাহেবকে বলতে চাই, ২০২১ সালের পর সংখ্যালঘু বা মুসলিমদের বিরুদ্ধে তৃণমূল সরকার যে অত্যাচার করেছে, তা নিয়ে কেন মুখ খোলেননি?’’ বগটুই, আনিস খানের সময়েও তিনি কেন চুপ ছিলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শুভেন্দু। মঙ্গলবারের ভাষণে আগাগোড়াই তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, হিন্দু এবং মুসলমানদের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ করে না বিজেপি। মোদী সকলের জন্য ভাবেন।