স্মৃতি ইরানি। —ফাইল চিত্র।
ইতিমধ্যেই ছোট-বড় দু’শো জনসভা হয়ে গিয়েছে। আগামী ২০ মে অমেঠীর ভোটের আগে তাঁর লোকসভা কেন্দ্রের আরও দু’শোটি জায়গায় মানুষের কাছে পৌঁছনোর লক্ষ্য নিয়েই রেখেছিলেন স্মৃতি ইরানি।
শুক্রবার গান্ধী পরিবারের কেউ অমেঠী থেকে লড়ছেন না, স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরে গত লোকসভা নির্বাচনের ‘জায়ান্ট কিলার’ স্মৃতি মনে করছেন, এ বারের ভোটে তাঁর জয়ের ব্যবধান আরও বাড়তে চলেছে। স্মৃতির দাবি, গান্ধী পরিবার অমেঠী থেকে রণে ভঙ্গ দেওয়ার অর্থ, কংগ্রেস ভোটের আগেই হার মেনে নিল।
দীর্ঘ টালবাহানার পরে কিশোরীলাল শর্মাকে কংগ্রেস অমেঠী থেকে প্রার্থী করেছে। অতীতে সঞ্জয় গান্ধী, রাজীব গান্ধী, সনিয়া গান্ধী অমেঠী থেকে সাংসদ। ১৯৯৯ সালের পরে এই প্রথম গান্ধী পরিবারের বাইরের কেউ অমেঠীতে কংগ্রেস প্রার্থী। কংগ্রেস নেতৃত্ব দাবি করছেন, গান্ধী পরিবারের কেউ অমেঠী থেকে প্রার্থী হলে সেটা গান্ধী পরিবার বনাম স্মৃতির লড়াই হয়ে উঠত। কিশোরীলাল প্রার্থী হওয়ায় অমেঠীর স্থানীয় সমস্যা নিয়ে ভোট হবে। তিনি রায়বরেলীতে গত কুড়ি বছর ধরে সনিয়া গান্ধীর সংসদীয় প্রতিনিধি ছিলেন। রাজীব গান্ধীর সময় থেকে গত চল্লিশ বছর ধরে কংগ্রেসের হয়ে অমেঠী-রায়বরেলীতে কাজ করছেন।
উল্টো দিকে, গত পাঁচ বছর স্মৃতি অমেঠীর সাংসদ থাকলেও তাঁর বিরুদ্ধে এলাকায় যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে। অমেঠীর অলিগলি, প্রতিটি গ্রাম, নির্বাচনী বুথের সঙ্গে পরিচিত কিশোরী লাল তার ফায়দা তুলতে পারবেন।
টানা তিন বার অমেঠী থেকে সাংসদ হওয়ার পরে রাহুল গান্ধী গত লোকসভা ভোটে স্মৃতির কাছে হেরে গিয়েছিলেন। ২০১৪-র লোকসভা ভোটে রাহুল স্মৃতিকেই ১ লক্ষের বেশি ভোটে হারিয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৯-এ স্মৃতি রাহুলকে প্রায় ৫৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে দেন। কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশের যুক্তি, ‘‘এ বার স্মৃতিকে এলাকার উন্নয়ন, বন্ধ হাসপাতাল, বন্ধ কারখানা নিয়ে জবাব দিতে হবে। তিনি রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে ভোটে লড়ছেন, এত দিন এটাই স্মৃতির পরিচয় ছিল। এখন সেই রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা শেষ।’’ স্মৃতির পাল্টা মন্তব্য, কংগ্রেস যে তাঁকে নিয়ে এত ভাবছে, এতেই বোঝা যায় তিনি কংগ্রেসের কাছে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ।
আজ প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা প্রবীণ কিশোরীলালের মনোনয়নের পরে ঘোষণা করেছেন, তিনি ৬ মে থেকে ২০ মে-র ভোটগ্রহণ পর্যন্ত অমেঠী-রায়বরেলীতে পড়ে থাকবেন। প্রবীণ কিশোরীলালকে সামনে রেখে আসলে তিনিই স্মৃতিকে চ্যালেঞ্জ জানাবেন, এই ইঙ্গিত দিয়ে প্রিয়ঙ্কা বলেন, ‘‘অমেঠীতে ফের সততা ও সেবার রাজনীতি হবে। আমরা জনতার শক্তি দিয়ে ভোটে লড়ব।’’ কংগ্রেসের অঙ্ক হল, অমেঠীর ভোটারদের প্রায় ২০ শতাংশ দলিত, ২০ শতাংশ মুসলিম এবং ১৮ শতাংশ ব্রাহ্মণ। জাতপাতের এই অঙ্কও কিশোরী লালের পক্ষে যাবে। স্মৃতি অবশ্য মন্তব্য করেছেন, গান্ধী পরিবার অমেঠীতে জয়ের কোনও আশাই দেখতে পায়নি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘জয়ের সম্ভাবনা দেখলে ওঁরাই অমেঠী থেকে ভোটে লড়তেন। নিজেদের প্রক্সি খাড়া করতেন না।’’
বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, রায়বরেলীতে রাহুল গান্ধী প্রার্থী হলেও সেখানে বিজেপির হয়ে দীনেশ প্রতাপ সিংহ ভাল ভোট পাবেন। গত লোকসভা নির্বাচনে তিনি সনিয়া গান্ধীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়ে ৩৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। বিজেপির উত্তরপ্রদেশের এক নেতা বলেন, ‘‘কংগ্রেস যদি মনে করে, কিশোরীলাল স্থানীয় নেতা হিসেবে অমেঠীতে
ভোট পাবেন, তা হলে সেই একই যুক্তিতে রাজ্যের মন্ত্রী, রায়বরেলীর ভূমিপুত্র দীনেশ প্রতাপেরও ভাল ফল করার কথা।’’