গিরিরাজ সিংহ। —ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গে একশো দিনের কাজ নিয়ে রিপোর্ট চেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ। সেই রিপোর্টের যা হাল বলে অভিযোগ, নিজের লোকসভা কেন্দ্র বেগুসরাইয়ে এখন তেমনই দশা খোদ গিরিরাজের! সেখানে তাঁর পাঁচ বছরের রিপোর্ট কার্ড নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
বেগুসরাইয়ে নিজেরই দলের ক্ষুব্ধ কর্মীদের থেকে ‘মুর্দাবাদ’ আর ‘গো ব্যাক’ ধ্বনি শুনতে শুনতে এখন দিন কাটছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর। আর পাহাড়প্রমাণ চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়ে গিরিরাজ শুধু মোদীর নামই জপ করে চলেছেন।
বিতর্কিত কোনও মন্তব্য করতে মোদী মন্ত্রিসভায় যাঁর জিভ সবচেয়ে দ্রুতগতিতে চলে, ভোটের মুখে সেই ‘ফায়ারব্র্যান্ড’ গিরিরাজের এমন হাল দেখে সত্যিই অবাক হতে হয়। কারণ, বেগুসরাইয়ের বিজেপি কর্মীদের একাংশ এখন তাঁর থেকেও কড়া ভাষায় তাঁকেই আক্রমণ করতে শুরু করেছেন।
গিরিরাজ যাতে এ বার বেগুসরাইয়ে প্রার্থী হতে না পারেন, সে জন্য শুরু থেকেই চাপ দিয়েছিলেন বিহারের বিজেপি নেতা ও রাজ্যসভার সাংসদ রাকেশ সিন্হা। রাকেশ-শিবির এবং এখানকার বিজেপি কর্মীদের একাংশের বক্তব্য, গিরিরাজ এলাকার উন্নয়নে ছিটেফোঁটাও কাজ করেননি। তিনি পরিযায়ী পাখি। কোনও কাজের জন্য খুঁজেও পাওয়া যায় না তাঁকে। সেই ক্ষোভ থেকেই মাসখানেক আগে বেগুসরাইয়ের বেশ কিছু বিজেপি কর্মী এক হাতে দলের পতাকা, অন্য হাতে কালো পতাকা নিয়ে মন্ত্রীর গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন। মুহুর্মুহু চলতে থাকে মুর্দাবাদ ধ্বনি। গাড়ির ভিতরে বসে, অসহায় গিরিরাজকে বাইরের বিক্ষোভ শুধু দেখে যেতে হয়।
তবে এত কিছুর পরেও গিরিরাজ বেগুসরাইয়ের টিকিট পেয়েছেন। রাকেশকে আপাতত বুঝিয়েসুঝিয়ে সঙ্ঘ পরিবারের নেতারা ঠান্ডা রেখেছেন। তবে বিজেপি প্রার্থীর হয়ে প্রচারে নামেননি তিনি। গিরিরাজকে নিয়ে বিজেপি কর্মীদের বিক্ষোভ অবশ্য থামার নাম নেই। দিন কয়েক আগের ঘটনা। এখানকার বছওয়াড়া বিধানসভায় ‘জনআশীর্বাদ যাত্রা’ করতে যাচ্ছিলেন গিরিরাজ। মন্ত্রী যে পথ দিয়ে যেতে পারেন, সেই পথে কালো পতাকা হাতে জড়ো হয়ে যান বিক্ষোভকারীরা। ‘মুর্দাবাদ’, ‘ওয়াপস যাও’ ধ্বনি উঠতে থাকে। বেগতিক বুঝে অন্য রাস্তা দিয়ে সভায় পৌঁছন গিরিরাজ। তবে তার পরেও নিজেদের এলাকায় দাঁড়িয়ে বিষোদ্গার করতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। তাঁদের সাফ কথা, বেগুসরাইয়ের উন্নয়নের জন্য গত বার তাঁরা গিরিরাজকে সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু উন্নয়নের কোনও কাজই করেননি তিনি। আবার ক্ষোভের সামনে পড়তে হবে বলে এখন মুখ ফিরিয়ে চলেও যাচ্ছেন। এমন প্রার্থীকে কী ভাবে বিশ্বাস করা যায়— প্রশ্ন তুলেছিলেন ওই কর্মীরা।
বেগুসরাইয়ের কাছারি চৌকে ছোট দোকান রাজকুমার ঠাকুরের। বলেন, ‘‘গিরিরাজ এলাকায় কোনও নজরই দেননি। বেগুসরাইয়ের ভিতরের দিকে রাস্তাঘাটের হাল দেখেই টের পাবেন।’’ এই কেন্দ্রে বিরোধী মহাজোটের প্রার্থী সিপিআই নেতা অবধেশ কুমার রায়ের অভিযোগ ও প্রচারের তিরও সে দিকেই। তিনি বলেন, ‘‘এলাকার উন্নয়নে উনি কাজই করেননি। তার উপর এখানকার যুবকেরা কাজ পান না, বাইরে গিয়ে মজদুরি করতে হয়। বড় বড় প্রকল্প উনি লুটেরা ঠিকেদারদের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন...।’’
২০১৯ সালে বেগুসরাইয়ে সিপিআই প্রার্থী কানহাইয়া কুমারকে চার লক্ষেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছিলেন গিরিরাজ সিংহ। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি ভিন্ন হওয়ায় সমানে সমানে টক্কর দিতে চাইছে সিপিআই। কারণ, গত বার আলাদা লড়ে প্রায় দু’লক্ষ ভোট পেয়েছিল আরজেডি। এ বার সেই ভোট আসবে মহাজোটের প্রার্থীর দিকে। তাই আশাবাদী সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক অবধেশ।
তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভকে গিরিরাজ প্রথমে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ আখ্যা দিয়েছিলেন। পরে অবশ্য বল ঘুরিয়ে দিয়েছেন মোদীর দিকে। এলাকার ক্ষোভ প্রশমনে সভায় তিনি বলছেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর বিরোধিতা করে দেশের লোকসান করবেন না।’’ বিজেপির এক কর্মীর দাবি, গিরিরাজ সিংহকে নিয়ে মানুষের ক্ষোভ থাকতেই পারে। তবে মোদীর দিকে তাকিয়ে বিজেপিকেই ভোট দেবেন মানুষ। আর সেটাই ভরসা গিরিরাজ সিংহের। বেগুসরাইয়ের প্রাক্তন মেয়র, বিজেপি নেতা উপেন্দ্রপ্রসাদ সিংহও আশাবাদী। বলেন, ‘‘গত বারের রেকর্ড আমরা ভেঙে দেব।’’
তবে গিরিরাজের সেই ‘অচ্ছে দিন’ আসবে কি না, সে জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুটা সময়।