Lok Sabha Election 2024

ব্রিটিশ-পক্ষে কৃষ্ণচন্দ্র আদতে রক্ষাকর্তা, দাবি অমৃতার

তৃণমূলের তরফেও সমাজমাধ্যমে লেখা হয়েছে, ১৭৫৭ সালে মিরজাফর, জগৎ শেঠ, উমিচাঁদদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র মেরুদণ্ডহীন বিশ্বাসঘাতকের মতো নিজেকে ব্রিটিশের কাছে বিক্রি করেছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৪ ০৭:৫২
Share:

অমৃতা রায়। —ফাইল চিত্র।

পলাশির যুদ্ধে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় ব্রিটিশদের পক্ষ নিয়েছিলেন— এই দাবিতে তাঁকে আক্রমণ করা হচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে ‘অনুযোগ’ করলেন কৃষ্ণনগরের বিজেপি প্রার্থী তথা রাজপরিবারের সদস্য অমৃতা রায়। এবং সেই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি ফের বিতর্ক উস্কে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ।

Advertisement

গত মঙ্গলবার নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময়ে অমৃতা বলেন, “কিছু লোক বলছে, রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ব্রিটিশদের সঙ্গ দিয়েছিলেন। তাই আমাদের বিশ্বাসঘাতক বলে ভাবা হচ্ছে।” তাঁর পরেই অমৃতার দাবি, ‘‘মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র যদি তা (ব্রিটিশদের সমর্থন) না করতেন, তা হলে আমাদের সনাতন ধর্ম পুরো শেষ হয়ে যেত! কারণ, নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা খুবই অত্যাচারী এবং দুর্নীতিগ্রস্ত ছিলেন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আর উনি (কৃষ্ণচন্দ্র) একা তো নন, জগৎ শেঠ ছিলেন, আরও অনেক রাজা ছিলেন। সকলের পরিশ্রমে এই কাজ সফল হয়েছিল।’’ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ব্রিটিশের এই চক্রান্তে যিনি অন্যতম প্রধান মস্তিষ্ক ছিলেন, সেই মিরজাফরের নাম উল্লেখ করেননি অমৃতা।

এর পরেই বিজেপির কৃষ্ণনগরের প্রার্থী দাবি করেন, ‘‘এটা (সিরাজের বিরুদ্ধে চক্রান্ত) না হলে আজ আমরা হিন্দু থাকতে পারতাম না। আমাদের ভাষা অন্য হত, আমাদের বেশভূষা একদম অন্য রকম হত। আমরা তো অন্যের অধীন হয়ে থাকতাম, তাই না?” জবাবে মোদী বলেন, ‘‘স্কুলে আমাদের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের সমাজ সংস্কারের কথা পড়ানো হত। বাংলার বিকাশের কথা শোনানো হত।’’ মোদীর মতে, “এই সব ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করা লোক এটা-সেটা দোষারোপ করবে। দু’শো বছর-তিনশো বছর আগের ঘটনা টেনে এনে বদনাম করার চেষ্টা করবে। বর্তমানে এরা যে পাপ করছে, তা ঢাকতেই এই সব খুঁজে বেড়ায়। যখন ভগবান রামের কথা আসে, এরা বলে, ‘প্রমাণ কোথায়? কত পুরনো দিনের কথা?’’’

Advertisement

বুধবার এই কথাবার্তা প্রকাশ্যে আসতেই নানা মহলে বিতর্কের ঝড় বয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে যে সিরাজ-উদ-দৌলা ব্রিটিশরাজের বিরুদ্ধে স্বাধীন ভারতের শেষ প্রতিরোধের নায়ক হিসেবে বরাবর পরিচিত, তাঁকে খলনায়ক হিসেবে তুলে ধরার এই ‘প্রচেষ্টায়’ অনেকেই দাবি করেছেন, এটাই বিজেপির ‘ইতিহাস বিকৃতির পুরনো ছক’।

বারাসত রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক উর্বী মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘রাজা কৃষ্ণচন্দ্র তাঁর সময়ে বর্ণহিন্দুদের সমাজপতি। ব্রাহ্মণ্যবাদী স্বার্থরক্ষায় তিনি অবশ্যই বিশ্বাসী ছিলেন। সিরাজকে কখনই হিন্দু-বিদ্বেষী বলা যায় না। বোঝাই যাচ্ছে, এ সব বলার মধ্যে রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে।’’ কৃষ্ণনগর উইমেন্স কলেজের ইতিহাসের শিক্ষক বুলু মোদক বলছেন, ‘‘ভারতের স্বাধীনতার ভাগ্য নির্ণায়ক যুদ্ধে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র যে সিরাজের বিরোধিতা করে ইংরেজের পক্ষ নিয়েছিলেন, ইতিহাস সেটাই বলে।” কৃষ্ণনগরের ভূমিপুত্র, সাহিত্যিক তমাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘এই ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে হিন্দু-মুসলমান দ্বন্দ্বের কোনও
ভূমিকা নেই।’’

তৃণমূলের তরফেও সমাজমাধ্যমে লেখা হয়েছে, ১৭৫৭ সালে মিরজাফর, জগৎ শেঠ, উমিচাঁদদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র মেরুদণ্ডহীন বিশ্বাসঘাতকের মতো নিজেকে ব্রিটিশের কাছে বিক্রি করেছিলেন। আর, ২০২৪ সালে অমৃতা রায় আবার এক বার বাংলার মানুষকে বঞ্চিত করার জন্য বিজেপির সঙ্গে আঁতাঁত করছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement