গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
এ বারের লোকসভা ভোটে সারা দেশে প্রায় ৪৫০টি আসনে লড়ছে বিজেপি। এত বিরাট সংখ্যক আসনে মাত্র এক জন সংখ্যালঘু মুসলিমকে প্রার্থী করেছে পদ্মশিবির। তিনি হলেন কেরলের কালিকট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আবদুল সালাম। তিনি প্রার্থী হয়েছেন মাল্লাপুরম আসন থেকে। পশ্চিমবঙ্গের ৪২ আসনে বিজেপির কোনও মুসলিম প্রার্থী নেই। তবে দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে এক সংখ্যালঘু মুসলিম মহিলাকে পরোক্ষে প্রার্থী করেছে বিজেপি। তবে তিনি বিজেপির ‘ডামি’ প্রার্থী। স্বভাবতই দলের প্রতীকে তিনি লড়ছেন না। লড়ছেন নির্দল হয়ে। আপাতত প্রতীকের অপেক্ষায় রয়েছেন। তাঁর নাম মুমতাজ আলি। কলকাতা বন্দর এলাকার বাসিন্দা মুমতাজ দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা সংগঠনের ওবিসি মোর্চার সহ-সভাপতি পদেও রয়েছেন।
দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী। তাঁর নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা এলাকায় যে সংখ্যালঘু মুসলিমদের বাস, তাঁদের ভোট পাওয়া নিয়ে চিন্তায় দক্ষিণ কলকাতা জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। তাই কৌশলগত ভাবেই তাঁরা মুমতাজকে ‘ছদ্ম’ বা ‘ডামি’ প্রার্থী হিসাবে দাঁড় করিয়েছেন।
কলকাতা বন্দর তো বটেই, বালিগঞ্জ বিধানসভার বিরাট অংশ এবং কসবা বিধানসভার একাংশেও সংখ্যালঘু মুসলমানদের বসবাস। এই এলাকায় বিজেপি কর্মী প্রায় নেই বললেই চলে। তাই ভোটের দিন ওই সমস্ত এলাকায় পোলিং এজেন্ট বসানো থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজকর্মের ক্ষেত্রে লোকবল প্রয়োজন জেলা বিজেপি নেতৃত্বের। বিজেপির ঘোষিত প্রার্থী তথা তাদের নির্বাচনী এজেন্ট দিতে সমস্যা হলে ওই এলাকায় কাজে আসতে পারেন বিজেপির মুসলিম ডামি প্রার্থী। তাই ওই সমস্ত এলাকায় ভোট পরিচালনার কাজ সুষ্ঠু ভাবে করতে মুমতাজকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাঁর ডামি প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানোর কৌশল প্রসঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনকে মুমতাজ বলেন, ‘‘দক্ষিণ কলকাতার যে দিকেই তাকাবেন, সে দিকেই শাসক তৃণমূলের দুর্নীতি দেখতে পাবেন। এই দুর্নীতি সাধারণ মানুষ মেনে নেবেন না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাজ্যের মানুষের হয়ে বিজেপি লড়াই করছে। আমি বিজেপির এক জন সৈনিক। সেই দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ে দল আমায় যে ভাবে কাজে লাগাতে চায় সে ভাবেই আমি কাজ করব। তাই দল আমাকে ডামি প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়ায় এককথায় রাজি হয়েছি। আমার কাজ হবে আমাদের প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরীর হয়ে ভোটের ময়দানে থেকে তৃণমূলের মতো দুর্নীতিপরায়ণ দলের সঙ্গে লড়াই করা।’’
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ভোটের দিন ছাড়াও ডামি প্রার্থীরা ভোটগণনার দিন গণনাকেন্দ্রেও বিজেপিকে অতিরিক্ত শক্তি জোগাবেন। তেমনই ভাবনা দক্ষিণ কলকাতা বিজেপির একাংশের। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের ভোটগণনায় অভিজ্ঞতার অভাবে অনেক ক্ষেত্রে হার মানতে হয়েছিল পদ্মশিবিরকে। তাই এই লোকসভা ভোটে সাবধানি পদক্ষেপ করছে বিজেপি। দক্ষিণ কলকাতা বিজেপির এক সাধারণ সম্পাদকের কথায়, ‘‘বিধানসভা ভোটের মতো গণনাকেন্দ্রের ভুল আমরা আর করতে রাজি নই।’’
শুধু মুমতাজই নয়, দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে আরও এক জন ডামি প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি। তিনি দক্ষিণ কলকাতা জেলা বিজেপির ওবিসি মোর্চার সদস্য। তিনিও লড়ছেন নির্দল হয়েই। তাঁর নাম মণিমালা রায়। তিনি জেলা ওবিসি মোর্চার সম্পাদক পদে রয়েছেন। মণিমালা জানিয়েছেন, কমিশন থেকে ফোনে তাঁকে বলা হয়েছে, তাঁর মনোনয়ন গৃহীত হয়েছে। তবে প্রতীকের কথা কিছু বলা হয়নি। দলের অন্দরে গুঞ্জন, তৃণমূল প্রার্থী মালা রায়ের সঙ্গে নামের মিল থাকায় মণিমালাকে ডামি প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে বিজেপির জেলা নেতৃত্বের তরফে জানানো হয়েছে, ভোটারদের ‘বিভ্রান্ত’ করার লক্ষ্য তাঁদের নেই। মণিমালার সঙ্গে যদি তৃণমূল প্রার্থীর নামের মিল থাকে, তা হলে তা নিতান্তই কাকতালীয়। দক্ষিণ কলকাতা লোকসভায় ভোট পরিচালনার ক্ষেত্রে শীর্ষ নেতৃত্ব যেমন নির্দেশ দিচ্ছেন, তেমন নির্দেশ মেনেই তাঁরা কাজ করছেন। মুমতাজ বা মণিমালার প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে অন্য কোনও ভাবনা তাঁদের নেই।