দেওয়াল থেকে পবন সিংহের নাম সরানোর কাজ চলছে। নিজস্ব চিত্র।
রাত পোহাতেই বেঁকে বসলেন প্রার্থী। আসানসোলে এ বার লোকসভা ভোটে তাদের প্রার্থী হিসেবে ভোজপুরি তারকা পবন সিংহের নাম শনিবার সন্ধ্যায় ঘোষণা করেছিল বিজেপি। কিন্তু রবিবার দুপুরে পবন নিজে সমাজ মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন, তিনি আসানসোলে ভোটে লড়বেন না। নাম ঘোষণার পরেই তাঁর হয়ে দেওয়াল লিখন শুরু করেছিলেন আসানসোলের বিজেপি কর্মীরা। পবনের এমন ঘোষণায় বিড়ম্বনায় পড়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। তৃণমূলের দাবি, ভোটে হার নিশ্চিত বুঝে পালিয়ে গেলেন বিজেপির প্রার্থী।
বিজেপি প্রার্থীর নাম ঘোষণার পরেই পাল্টা প্রচারে নেমেছিল তৃণমূল। সেই প্রচার মূলত পবন সিংহের গানের বিরুদ্ধে। গায়কের গানের অ্যালবামের ছবি ও গানের লাইন উদ্ধৃত করে আসানসোলের প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় সমাজ মাধ্যমে পবনকে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি কটাক্ষ করেন, এর থেকে পরিষ্কার বাংলার মহিলাদের বিজেপি কেমন সম্মান দেয়। তৃণমূলের অন্য অনেক নেতাও সমাজ মাধ্যমে এ নিয়ে সরব হন। শুধু আসানসোল নয়, এমন প্রার্থীর জন্য রাজ্যের সব আসনেই বিজেপিকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে— এমন প্রচারও শুরু হয়। এই পরিস্থিতিতে, রবিবার দুপুর ১টা নাগাদ সমাজ মাধ্যমে পবন জানিয়ে দেন, তাঁকে প্রার্থী করার জন্য বিজেপি নেতৃত্বের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞ। কিন্তু কোনও কারণে তিনি আসানসোল থেকে লড়তে পারবেন না।
এর পরেই দেওয়াল মোছার তোড়জোড় শুরু করেন বিজেপি কর্মীরা। আসানসোলের সাংসদ তথা এ বারেরও সম্ভাব্য তৃণমূল প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিন্হা বলেন, ‘‘এটা ওঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তবে মানুষ মমতার উন্নয়ন দেখে ভোট দেবেন।’’ জামুড়িয়ায় এক কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে অবশ্য শত্রুঘ্ন বলেন, ‘‘এমন অনেকের নামই বিজেপি এ রাজ্যে ঘোষণা করেছে, যেগুলো ওদের ভালর জন্য, না কি তৃণমূলের ভালর জন্য, বোঝা যাচ্ছে না!’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘উনি (পবন) আসলে বুঝে গিয়েছেন, এখানে ভোজপুরি গান গেয়ে বিশেষ সুবিধা হবে না। তাই সরে গিয়েছেন।’’ রূপেশ যাদবের মতো কিছু তৃণমূল নেতার আবার দাবি, ‘‘তিনি নিজে সরে যাননি, পরিস্থিতি বুঝে ওঁকে সরাতে বাধ্য হয়েছে বিজেপি।’’ তৃণমূলের হিন্দি প্রকোষ্ঠ পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি সিন্টু ভুঁইয়ার বক্তব্য, ‘‘যে সব গান উনি গেয়েছেন, তা শুধু বাঙালি নয়, এই অঞ্চলের অবাঙালি মহিলারাও মেনে নিতেন না। বাংলার সংস্কৃতি বুঝে ভোটে লড়তে আসা উচিত।’’
প্রার্থীর এমন সিদ্ধান্তে বিজেপির জেলা নেতৃত্ব। দলের জেলা সভাপতি বাপ্পাদিত্য চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জানি না কী ব্যাপার। উচ্চ নেতৃত্বের তরফে এখনও কোনও কিছু জানানো হয়নি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এ নিয়ে সাধারণ ভোটারের কোনও মাথাব্যথা নেই। তাঁরা শুধু পদ্মফুল প্রতীক চেনেন।’’ তবে বিজেপির একাংশ এই সিদ্ধান্তে খুশি বলে দাবি করেন। বিজেপি কর্মী তথা গায়ক হিসেবে পরিচিত সনৎ ধীবরের বক্তব্য, ‘‘যে রুচির পরিচয় পবন সিংহ দিয়েছেন বাঙালিদের নিয়ে, তার প্রভাব পড়তে পারত ভোটে। তাই তিনি প্রার্থী না হওয়ায় ভাল হয়েছে।’’