অমিত শাহ (বাঁ দিকে), চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য (মাঝে), সুকান্ত মজুমদার (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
সন্দেশখালিকাণ্ড নিয়ে মুখ খুললেও স্টিং ভিডিয়ো নিয়ে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব নীরবই। সোমবার রাজ্যের দু’জায়গায় প্রচারে এসে সন্দেশখালির প্রসঙ্গ তুললেও সেই ভিডিয়ো নিয়ে চুপই ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এই নিয়ে মঙ্গলবার সরব হলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহিলা শাখার সভাপতি চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার নতুন ‘তত্ত্ব’ দিতে চাইলে তা খারিজ করে দিলেন তিনি। পাল্টা খোঁচা দিয়ে মনে করালেন, তাঁর নেতা শাহ দিল্লি থেকে রাজ্যে এসে এই নিয়ে একটি কথাও খরচ করেননি। কেন করেননি, সেই প্রশ্ন তুললেন।
সোমবার দুর্গাপুরে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষের হয়ে সভা করেন শাহ। সেখানে সন্দেশখালির প্রসঙ্গ বার বার এসেছে তাঁর বক্তৃতায়। কিন্তু সেই ভাইরাল ভিডিয়ো নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি। তার আগে কৃষ্ণনগরের প্রার্থী অমৃতা রায়ের হয়ে রোড-শো করেন তিনি। সেখানে এই নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবও এড়িয়ে যান। তার পরেই উঠতে শুরু করে প্রশ্ন। রাজ্য বিজেপির নেতারা যেখানে বার বার এই নিয়ে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের দিকে আঙুল তুলেছেন, সেখানে শাহ চুপ কেন। বিজেপির একাংশ বলছে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আসলে স্টিং ভিডিয়োর বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চাইছেন না। রাজ্যের শাসকদল তা মানতে নারাজ। সে কারণে সুকান্ত যখন স্টিং ভিডিয়ো নিয়ে নতুন তত্ত্ব দিয়েছেন, সেই প্রসঙ্গে তৃণমূলেরই প্রার্থী পার্থ ভৌমিক একটি ভিডিয়ো এক্স (সাবেক টুইটার)-এ পোস্ট করেছেন, তখন পাল্টা খোঁচা দিয়েছেন চন্দ্রিমা। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘ওঁর নেতা (শাহ) দিল্লি থেকে উড়ে এলেন। সন্দেশখালি নিয়ে একটি কথাও খরচ করলেন না। বললেন না, এটা ভুয়ো ভিডিয়ো।’’ এর পরেও সুকান্ত যে পোস্ট দিয়েছেন, তা নিয়ে তাঁকে তীব্র কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি তৃণমূল নেত্রী। তিনি বলেন, ‘‘যা মনে হবে, তাই বলবেন তিনি! এক জন এই রাজ্যের বিজেপি সভাপতি, এখনও সাংসদ রয়েছেন। আগামী দিন থাকবেন না নিশ্চিত। কিন্তু তিনি অপ্রাপ্তবয়স্ক। রাজনীতিতে প্রাপ্তবয়সে পৌঁছতে পারেননি।’’ সব কিছুর মধ্যে বিজেপি ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্স’ খুঁজে বার করছে বলেও তোপ দাগেন তিনি।
সন্দেশখালির স্টিং ভিডিয়োকে প্রথম থেকেই ‘ভুয়ো’ বলে দাবি করে এসেছে বিজেপি। শুভেন্দু দাবি করেন, পরাজয়ের ভয়েই এ সব করছে তৃণমূল। ভিডিয়োতে যাঁকে দেখা গিয়েছে, সেই গঙ্গাধর কয়াল সিবিআইয়ের দ্বারস্থ হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। এ বার এই নিয়ে ব্যারাকপুরের তৃণমূল প্রার্থী পার্থের একটি সাক্ষাৎকার তুলে ধরেছেন এক্সে। এবিপি আনন্দকে সাক্ষাৎকারটি দিয়েছিলেন পার্থ। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘সন্দেশখালিতে পরিকল্পিত ভাবে যেটা হয়েছে, তার মধ্যে তৃণমূলেরও লোক ছিলেন। আমি বলছি, ১০০ শতাংশ ছিলেন। সন্দেশখালিতে যাঁরা আন্দোলন-বিক্ষোভ করছিলেন, তাঁদের মধ্যে অনেক তৃণমূলের লোকও ছিলেন। আমি দলকে জানিয়েছি। তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছিলেন।’’ এই সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গ তুলেই সুকান্ত লেখেন, ‘‘তা হলে বোঝা গেল যে সন্দেশখালির ওই ভুয়ো ভিডিয়ো শুভেন্দু এবং রাজ্য বিজেপিকে কালিমালিপ্ত করার জন্য একটি পরিকল্পিত পদক্ষেপ। এও প্রমাণিত হল যে, এটি এত বড় মাপের অন্যায় যে, দলমত নির্বিশেষে সকলের উপর এর প্রভাব পড়ছে। তৃণমূল তা ভাল করে জানে।’’ সুকান্তের এ সব তত্ত্ব খারিজ করে দিয়েছেন চন্দ্রিমা। তুলে ধরেছেন শাহের সন্দেশখালির ভিডিয়ো নিয়ে নীরব থাকার প্রসঙ্গ।
সোমবার সন্দেশখালি প্রসঙ্গে দুর্গাপুরে শাহ বলেন, ‘‘সন্দেশখালিতে তৃণমূলের নেতারা ধর্মের ভিত্তিতে মা-বোনেদের উপর অত্যাচার করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা দোষীদের ধরেন না। হাই কোর্ট সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার তুলে দিয়েছে। শাহজাহানের মতো নেতাদের জেলে পাঠানো উচিত কি উচিত না? মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর নাকের নীচে মহিলাদের ধর্ষণ করা হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে। যাঁরা অত্যাচার করেছেন, তাঁদের পাতাল থেকেও খুঁজে বার করে সাজা দেওয়া হবে।’’ কিন্তু স্টিং ভিডিয়ো নিয়ে কোনও কথাই বলেননি। কৃষ্ণনগরের রোড-শোয়েও তিনি এড়িয়ে গিয়েছেন ভিডিয়োর প্রসঙ্গ। বিজেপির দলীয় সূত্রে খবর, কৌশলগত কারণেই এই মুহূর্তে সন্দেশখালির ভাইরাল ভিডিয়ো নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাঁরা বিষয়টিকে গুরুত্বই দিতে চাইছেন না। আর সেই কারণেই দুর্গাপুরে শাহের কথায় শাহজাহান থাকলেও স্টিং অপারেশন অনুপস্থিত বলে বিজেপি সূত্রে খবর। তৃণমূল মানেনি। তারা সেই নিয়েই পাল্টা আক্রমণ করেছে বিজেপিকে।
বিজেপির মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধরকে একটি ভিডিয়োতে বলতে শোনা গিয়েছে যে, সন্দেশখালিতে গত ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ওঠা ধর্ষণের অভিযোগগুলি ‘সাজানো’ ছিল! মহিলারা টাকার বিনিময়ে শাহজাহান ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের ‘মিথ্যা’ অভিযোগ করেছিলেন এবং গোটাটাই শুভেন্দুর ‘মস্তিষ্কপ্রসূত’ বলে দাবি করেন তিনি। আনন্দবাজার অনলাইন সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি। এই স্টিং ভিডিয়ো ‘ভুয়ো’ বলে দাবি করেছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত থেকে শুভেন্দু। তবে এই আবহে রাজ্যে এসেও চুপই রইলেন শাহ। তা নিয়ে পাল্টা কটাক্ষ তৃণমূলের।