গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
লোকসভা ভোটে বিজেপির প্রচারে এ বার মোগল সম্রাট অওরঙ্গজ়েব! ‘সৌজন্যে’ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ! শনিবার মহারাষ্ট্রের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মালেগাঁওয়ে বিজেপির প্রচারে গোরক্ষপুরের মহন্ত আদিত্যনাথের দাবি, অওরঙ্গজ়েব যেমন হিন্দুদের উপর জিজিয়া কর বসিয়েছিলেন, ক্ষমতায় এলে কংগ্রেস সে ভাবেই হিন্দুদের সম্পত্তির উপর কর চাপাবে।
২০০৮-এর ২৯ সেপ্টেম্বর মহারাষ্ট্রের নাসিক জেলার এই মালেগাঁও শহরের মসজিদে বিস্ফোরণকাণ্ডে গ্রেফতার হয়েছিলেন সাধ্বী প্রজ্ঞা। তিনি মধ্যেপ্রদেশের ভোপালের বিদায়ী বিজেপি সাংসদ। সেখানকার ধুলে লোকসভার বিজেপি প্রার্থী সুভাষ ভমেরের প্রচারে যোগী বলেন, ‘‘অওরঙ্গজ়েবের আত্মা কংগ্রেসের ঘাড়ে ভর করেছে। মোগল সম্রাট যেমন অমুসলিমদের উপর জিজিয়া কর বসিয়েছিলেন, কংগ্রেসে তেমনই উত্তরাধিকার কর বসাতে চাইছে।’’ এর পরেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘ভারতে পাকিস্তানপন্থীদের কোনও স্থান নেই।’’
এপ্রিলের গোড়ায় গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ শ্যাম পিত্রোদা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া বড় অঙ্কের সম্পত্তির উপর কর বসানোর সওয়াল করেছিলেন। তার পরেই কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে জানান, পিত্রোদার মন্তব্য তাঁর ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি। এর সঙ্গে দলগত ভাবে কংগ্রেসের কোনও যোগ নেই। কিন্তু লোকসভা ভোটের আগে বিষয়টিকে হাতিয়ার করে প্রচারে নেমে পড়েছে বিজেপি শিবির। সেই সঙ্গে কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তাহারের প্রসঙ্গ তুলে কৌশলে প্রচারে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণও উস্কে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। মোদীও অভিযোগ করেছেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে হিন্দুদের সঞ্চিত সম্পত্তি, সোনাদানা, এমনকি, মহিলাদের মঙ্গলসূত্রের উপরেও কর বসিয়ে সেই অর্থ মুসলিমদের দিয়ে দেবে।
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সমীক্ষায় জানানো হয়েছে, মোদীর জমানায় দেশে ধনী-গরিবের অসাম্য বেড়েছে। ক্ষেত্র বিশেষে সেই অসাম্য ছাপিয়ে গিয়েছে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনকেও! দেশের সম্পদ মুষ্টিমেয় কয়েক জনের হাতে কুক্ষিগত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস নেতৃত্ব ধনীদের সম্পদের হিসাব করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিরোধীদের অভিযোগ, মোদীর ‘ঘনিষ্ঠ’ শিল্পপতিদের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে আমজনতার মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে বুঝতে পেরেই বিজেপি নেতৃত্ব মেরুকরণের পথ বেছে নিয়েছেন।
এর আগে মহারাষ্ট্রের ভোটপ্রচারে রাহুলকে নিশানা করতে গিয়ে অওরঙ্গজ়েব প্রসঙ্গ টেনেছিলেন স্বয়ং মোদী। তিনি বলেছিলেন, ‘‘কংগ্রেসের শাহজাদা রাজা-মহারাজাদের খারাপ বলেন, অথচ নিজ়াম, বাদশা, সুলতানেরা ভারতবাসীর উপরে যে অত্যাচার করেছেন তা নিয়ে শাহজাদার মুখে তালা, কথা বন্ধ। যে অওরঙ্গজ়েব ভারতের মন্দির ধ্বংস করেছেন, অপবিত্র করেছেন, তাঁর কথা এক বারও শাহজাদার মনে পড়ে না। যারা ভারতে এসে লুট চালিয়েছে, গোহত্যা করেছে, ভারতের বিভাজনে বড় ভূমিকা নিয়েছে, তাদের মনে পড়ে না। অথচ তিনি শিবাজিকে অপমান করেন।’’