(বাঁ দিক থেকে) অরবিন্দ কেজরীওয়াল, মণীশ সিসৌদিয়া এবং সত্যেন্দ্র জৈন। — ফাইল চিত্র।
গুজরাতের লোকসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের হয়ে কারা কারা প্রচার করবেন, মঙ্গলবার সেই তালিকা প্রকাশ করল আম আদমি পার্টির (আপ)। সেই তালিকা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। আপের তারকা প্রচারকের তালিকায় তিনটি নাম নিয়ে বেশি চর্চা হচ্ছে। অরবিন্দ কেজরীওয়াল, মণীশ সিসৌদিয়া এবং সত্যেন্দ্র জৈন— এই তিন জনই বর্তমানে জেলবন্দি। তিন জনেরই ঠিকানা তিহাড়। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, জেলের ভিতর থেকে কী ভাবে প্রচারে অংশ নেবেন এই তিন আপ নেতা?
গত ২১ মার্চ আবগারি মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরীওয়াল। সেই একই মামলায় গত বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার হয়েছিলেন দিল্লির প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ। সেই থেকে জেলেই রয়েছেন তিনি। নিম্ন আদালতের পাশাপাশি দিল্লি হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টেও জামিনের আবেদন করেছেন মণীশ। যদিও এখনও পর্যন্ত কোনও আদালতেই তাঁর জামিন মঞ্জুর হয়নি। গত ৬ এপ্রিল দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালতে মণীশের মামলার শুনানি ছিল। তবে বিশেষ বিচারক কাবেরী বাওয়েজা তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেননি। আগামী ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত তাঁর জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই দিন তিনি জামিন পাবেন কি না তা এখনও নিশ্চিত নয়, কিন্তু তার আগেই আপ তাদের তারকা প্রচারকের তালিকায় মণীশের নাম জুড়ে দিল।
অন্য দিকে, আপ প্রধান কেজরীওয়ালকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালত। পাশাপাশি ইডির গ্রেফতারিকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে করা কেজরীর মামলার শুনানিও পিছিয়ে গিয়েছে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত। তিনিও জামিন পাবেন কি না, তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে নানা মহলে। কিন্তু আপ তাঁকেও তারকা প্রচারকের তালিকায় রেখেছে।
কেজরীওয়াল, মণীশ ছাড়াও আপের তারকা প্রচারক সত্যেন্দ্রকে নিয়েও চর্চা শুরু হয়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে টাকা নয়ছয়ের অভিযোগে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন সত্যেন্দ্র। অভিযোগ, বেআইনি টাকায় জমি কিনেছিলেন তিনি। সত্যেন্দ্র সেই অভিযোগ মানেননি। জেলে যাওয়ার পর থেকে বার বার সত্যেন্দ্র দাবি করেছেন, তিনি অসুস্থ। তার পর দেখা যায়, জেলের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন সত্যেন্দ্র। জ্ঞান হারিয়ে তিহাড় জেলের শৌচালয়ে পড়ে যান দিল্লির প্রাক্তন স্বাস্থ্য এবং কারামন্ত্রী। পরে সুপ্রিম কোর্ট তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে। তবে গত ১৮ মার্চ শীর্ষ আদালতই সত্যেন্দ্রের জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয়। সেই সঙ্গে আদালত বলে, “অবিলম্বে সত্যেন্দ্রকে আত্মসমর্পণ করতে হবে।” আদালতের নির্দেশে জেলবন্দি তিনিও।
২৬ লোকসভা আসনের গুজরাতে আগামী ৭ মে ভোটগ্রহণ রয়েছে। এক দফাতেই গুজরাতের সব আসনে ভোট করাবে নির্বাচন কমিশন। গুজরাতে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে লড়ছে কেজরীওয়ালের দল। ওই রাজ্যে আপকে তিনটি আসন ছেড়েছে হাতশিবির। সেই তিন আসনে প্রার্থিতালিকাও প্রকাশ করেছে আপ। দলের তিন প্রার্থীর হয়ে কারা প্রচার করবেন, মঙ্গলবার সেটাই জানাল কেজরীর দল।
মোট ৪০ জন তারকা প্রচারকের তালিকা প্রকাশ করেছে আপ। সেই তালিকায় কেজরীওয়ালের পরেই রাখা হয়েছে তাঁর স্ত্রী সুনীতার নাম। কেজরীওয়াল জেলে যাওয়ার পর থেকেই আপের হয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। জেল থেকে কেজরীর প্রায় সব বার্তাই জনগণের উদ্দেশে পাঠ করে শুনিয়েছেন সুনীতা। এমনকি, দিল্লির রামলীলাতে বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র ডাকা সভায় নজর কেড়েছিলেন তিনি। সেই সুনীতাকেই তারকা প্রচারক করল আপ।
এ ছাড়াও তারকা প্রচারকের তালিকায় পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবত মান, সন্দীপ পাঠক, গোপাল রাই, রাঘব চড্ডা, অতিশী মারলেনা, সৌরভ ভরদ্বাজরাও রয়েছেন। পাশাপাশি, সদ্য জামিনে মুক্তি পাওয়া রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় সিংহকেও আপ গুজরাতের তারকা প্রচারক করেছে।