অরবিন্দ কেজরীওয়াল। —নিজস্ব চিত্র।
ভোট মরসুমে বিজেপিকে পাল্টা চাপে রাখতে আজ নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ বনাম যোগী আদিত্যনাথ শিবিরের মধ্যে ‘বিভেদ’ উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল। আদিত্যনাথের উদ্দেশে বললেন, তাঁর আসল শত্রু ঘরেই রয়েছে। আর শাহের জন্য কেজরীর বার্তা, এ বারের নির্বাচনে বিজেপি পরাস্ত হতে চলেছে। ফলে পাঁচ বছর বাদে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যে সুপ্ত বাসনা তাঁর মনে রয়েছে, তা পূরণ হওয়ার নয়।
দিল্লিতে ক্ষমতায় থাকলেও গত দু’টি লোকসভায় রাজধানীর একটিও আসন জিততে পারেনি আম আদমি পার্টি। এ বার কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দিল্লিতে আসন পেতে মরিয়া আপ। অন্য দিকে, দিল্লির আসন ধরে রাখতে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়েছে বিজেপি। এই আবহে গতকাল দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় প্রচারে করেন অমিত শাহ ও যোগী আদিত্যনাথ। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ দিল্লি সরকারের দুর্নীতি ও কেজরীওয়ালের অপশাসনের অভিযোগে সরব হন।
আজ সাংবাদিক বৈঠকে পাল্টা চালে কেজরী যোগীকে আক্রমণের পরিবর্তে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘‘অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে আদিত্যনাথকে বলতে চাই যে, আপনার শত্রু আপনার দলেই রয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের পরেই নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ আপনাকে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরানোর পরিকল্পনা নিয়ে রেখেছেন। আমার বদলে আপনি আগে ওঁদের সামলান।’’
সম্প্রতি অন্তর্বর্তী জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরেও একই দাবি করেছিলেন কেজরীওয়াল। তাঁর কথায়, যে ভাবে লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলীমনোহর জোশী, শিবরাজ সিংহ চৌহান, বসুন্ধরা রাজে, মনোহরলাল খট্টরের রাজনৈতিক জীবন কার্যত শেষ করে দেওয়া হয়েছে, ঠিক সে ভাবেই আদিত্যনাথের রাজনৈতিক জীবনও শেষ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন মোদী-শাহ জুটি। কেজরীওয়ালের কথায়, ‘‘কারণ নরেন্দ্র মোদী মিশন হল—এক দেশ, এক নেতা।’’
বিজেপি শিবিরের অধিকাংশ নেতা ঘরোয়া ভাবে স্বীকার করেন যে, মোদীর পরে দলে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে যোগ্য আদিত্যনাথ। একে উত্তরপ্রদেশের মতো বড় রাজ্যে
পরপর দু’বার জিতে এসেছেন তিনি। উপরন্তু তিনি সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ। ফলে গেরুয়া শিবিরের বড় অংশ তাঁকে আগামী দিনে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চায়।
যদিও দলের অন্য একটি অংশ মনে করে, মোদী উত্তরসূরি হিসেবে অমিত শাহকেই চান। যদি তা সত্যি হয়, সে ক্ষেত্রে আগামী দিনে দলে বড় মাপের বিরোধ হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে বিজেপির অন্দরমহলে। কেজরীওয়াল ভোটের মরসুমে সেই বিষয়টি উস্কে দিয়ে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করতে চাইছেন।
এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে শাহকে আক্রমণ করেন কেজরীওয়াল। গতকাল দক্ষিণ দিল্লি কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী রামবীর সিংহ বিধুরির সমর্থনে প্রচারসভায় শাহ বলেন, ‘‘এ দেশে রাহুল গান্ধী ও অরবিন্দ কেজরীওয়ালের কোনও জনসমর্থন নেই। অথচ পাকিস্তানে তাঁদের জনসমর্থন রয়েছে।’’
আজ সেই বক্তব্যের সূত্র ধরে কেজরীওয়ালের প্রশ্ন, ‘‘তা হলে কি যেখানে আমাদের সরকার রয়েছে, সেই দিল্লি ও পঞ্জাবের সকলেই পাকিস্তানপন্থী? গুজরাতে আপ ১৪ শতাংশ ভোট পেয়েছে। ধরে নিতে হবে, তাঁরাও পাকিস্তানি।’’ এরপরেই কেজরী বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী আপনাকে প্রধানমন্ত্রী পদের উত্তরসূরি হিসেবে বেছে নিলেও, জনতা যে আপনাদের প্রত্যাখ্যান করেছে, তা স্পষ্ট হয়ে যাবে ৪ জুন। আপনার অহংয়ে লাগাম দিন। আপনার শত্রুতা আমার সঙ্গে হতে পারে, তা বলে দেশের মানুষকে কেন অপমান করবেন! কেউ তা সহ্য করবে না।’’