জয়রাম রমেশ। —ফাইল ছবি।
পঞ্চম দফার ভোটের পরে গত বারের জেতা আসনগুলি দল ধরে রাখতে পারবে বলে আশাবাদী বিজেপি নেতৃত্ব। পাশাপাশি দিনের শেষে কংগ্রেসের দাবি, পরিবর্তনের হাওয়ায় ভর করে অনায়াসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ফেলবে ইন্ডিয়া মঞ্চ। আজ জয়রাম রমেশ দাবি করেছেন, “সংখ্যাগরিষ্ঠতার পর ৩৫০-এর বেশি আসন জেতার লক্ষ্যে অগ্রসর হচ্ছে ইন্ডিয়া জোট।”
ছ’টি রাজ্য ও দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৪৯টি লোকসভা আসনে ভোট হয়েছে আজ। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দেশে ভোট পড়েছে ৬০.০৯%, যা পাঁচ বছর আগের পঞ্চম দফা লোকসভা নির্বাচনের চেয়ে প্রায় ৩ শতাংশ কম। যদিও নির্বাচন কমিশন দাবি করেছে, চূড়ান্ত ফলাফলে ভোটের হার কিছুটা বাড়বে। আজ জম্মু ও কাশ্মীরের বারামুলা কেন্দ্রে ৫৬ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। উপত্যকায় এত মানুষের ভোট দিতে পথে নামা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে নির্বাচন কমিশন। শেষ ১৯৮৪-তে ৬১ শতাংশ ভোট পড়েছিল এই কেন্দ্রে। আজ পঞ্চম দফা নির্বাচনের পরে দেশের ৪২৮টি কেন্দ্রের নির্বাচন শেষ হল। শেষ দু’টি পর্বে ১১৫টি আসনের ভোট বাকি রয়ে গিয়েছে। ষষ্ঠ দফার ভোট হবে ২৫ মে। আজকের ভোট নিয়ে ঝাড়গ্রামের সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, “পঞ্চম দফার ভোট শেষ হতে চলেছে। ‘ইন্ডিয়া’ পাঁচ দফাতেই পরাস্ত হয়েছে। ৪ জুন আমাদের সরকার হবে। বিরোধীরা ধুয়েমুছে যাবে। বিরোধী জোটের হেরে যাওয়ার কাউন্টডাউন চলছে।”
আজ যে রাজ্যগুলিতে ভোট হয়েছে, তার মধ্যে সব থেকে কম ভোট পড়েছে মহারাষ্ট্রে (৫৪.২৯%)। আজ ওই রাজ্যের ১৩টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোট ছিল। যার মধ্যে ছিল মুম্বইয়ের ছ’টি লোকসভা কেন্দ্র। আজ মহারাষ্ট্রে কম ভোট পড়ার জন্য বিজেপি ও নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করেছেন শিবসেনা নেতা উদ্ধব ঠাকরে। তিনি সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “যেখানে আমাদের ভাল ফল করার কথা, সেই কেন্দ্রগুলিতেই মেশিন খারাপ হয়ে গিয়েছে। দেরি করে ভোট হয়েছে।” বিজেপির বিরুদ্ধে বুথ জ্যাম করার অভিযোগও তুলেছেন উদ্ধব শিবির। তাঁদের বক্তব্য, বুথের ভিতরে ইচ্ছে করে দেরি করানো হচ্ছিল। এতে বহু ভোটার গরমের কারণে লাইনে দাঁড়িয়েও ভোট না দিয়ে বাড়ি ফিরে যান। উদ্ধবের অভিযোগ, “ওই কাজে নির্বাচন কমিশনও গেরুয়া শিবিরকে পূর্ণ মদত দিয়েছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটারদের কাছে একাধিক বার পরিচয় পত্র দেখতে চাওয়া হয়েছে। হারের ভয়ে মোদী সরকার নির্বাচন কমিশনকে পাপোষের মতো ব্যবহার করছেন।” উদ্ধবের অভিযোগ উড়িয়ে আজ বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফডণবীস বলেন, “হারার ভয় থেকেই এ সব কথা বলছেন উদ্ধব। ভোট দিতে যে সময় লাগছে, সেই অভিযোগ আমরাই প্রথম কমিশনকে জানিয়েছিলাম।”
মহারাষ্ট্রের সঙ্গেই আজ উত্তরপ্রদেশে যে ১৪টি আসনে ভোট হয়েছে, তাতে দল গত বারের মতোই ভাল ফল করবে বলে আশা করছে গেরুয়া শিবির। পাঁচ বছর আগে ১৪টি আসনের মধ্যে রায়বরেলী ছাড়া বাকি ১৩টি আসনেই জিতেছিল বিজেপি। এ বার সব ক’টি আসনেই দল জিতবে বলে আশা করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। আজ দুপুরে নিজের কেন্দ্র রায়বরেলীর একাধিক বুথ ঘুরে দেখেন রাহুল। বহু জায়গায় বিজেপি কর্মীরা তাঁকে দেখে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি তুললেও, রাহুল কোনও প্ররোচনায় পা দেননি। তবে কিছু কেন্দ্রে বিজেপি কর্মীরা সাধারণ ভোটারদের ভয় দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। পরে রাহুল বলেন, “প্রথম চার দফায় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে মানুষ সংবিধান ও গণতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়িয়ে বিজেপিকে হারানোর পণ করেছেন। ঘৃণার রাজনীতি ছেড়ে মানুষ এখন আসল সমস্যার ভিত্তিতে ভোট দিচ্ছেন। জনতা এখন ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গে নির্বাচনে লড়ছে। এতে দেশ জুড়ে পরিবর্তনের ঝড় উঠেছে।”
রাহুলের সুরেই কংগ্রেসের নেতা জয়রাম রমেশ আজ দাবি করেন, দেশ জুড়ে পরিবর্তনের ঝড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যে হাওয়ায় ভর করে৩৫০ আসনপ্রাপ্তির দিকে এগোচ্ছে ইন্ডিয়া জোট। জয়রামের কথায়, “মোদীর গদি ছাড়তে আর পনেরো দিন বাকি। বেলাগাম মূল্যবৃদ্ধি,বেকারত্ব আর সংবিধান পরিবর্তনের হুমকি বিজেপির হারের কারণ হতে যাচ্ছে।” জয়রামের ওই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিজেপি নেতারা বলছেন, “কার পক্ষে যে আসলে ঝড় রয়েছে তা ওই পনেরো দিন পরেই বুঝতে পারবেন ইন্ডিয়া-র নেতারা। দেশবাসী যে তাঁদের জোটকে প্রত্যাখ্যান করেছেন, তা ভোটের ফল প্রকাশ হলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে।”