প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
রাজ্যে প্রথম পর্যায়ের লোকসভা ভোটের আগেই ফের আর এক দফা বাড়তি কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো হতে পারে বলে বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে।
কমিশন সূত্রে যা আভাস মিলছে, তাতে প্রথম পর্যায়ের ভোটে সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়তো সম্ভব হবে না। এ বারই মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর মারফত ৯২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর আর্জি জানানো হয়েছে, যা জম্মু-কাশ্মীরের থেকেও বেশি। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ১৭৭ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চলে এসেছে। কমিশন সূত্রের খবর, একটি লোকসভা কেন্দ্রের এলাকায় সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিতে ১১২ কোম্পানি বাহিনী লাগবে। অর্থাৎ তিনটি কেন্দ্রের জন্য লাগবে ৩৩৬ কোম্পানি বাহিনী। কিছু বাড়তি বাহিনী আসার নির্দেশ এলেও শেষ পর্যন্ত সব বুথে দেওয়ার মতো কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রথম পর্যায়ের তিনটি কেন্দ্রে দেখা না-পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে কমিশন সূত্রে জানা যাচ্ছে।
রাজ্যের বিশেষ সাধারণ পর্যবেক্ষক ১৯৮৬ সালের অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার অলোক সিন্হার পরে বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক অনিলকুমার শর্মারও (১৯৮৪ সালের ব্যাচের আইপিএস অফিসার) আজ, শুক্রবার রাজ্যে চলে আসার কথা। এর পরে কাল, শনিবারই প্রথম দফার লোকসভা ভোটের তিনটি কেন্দ্রে বাহিনী মোতায়েন নিয়ে কলকাতায় গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হবে বলে ঠিক হয়েছে। কমিশন সূত্রের খবর, দু’জন বিশেষ পর্যবেক্ষক, রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ় আফতাব, রাজ্য পুলিশের নোডাল অফিসার আনন্দ কুমার এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর নোডাল অফিসার তথা সিআইএসএফ-এর আইজি বি কে শর্মা সেই বৈঠকে থাকবেন। এই বৈঠকের আগেই রাজ্যে বাড়তি আধাসেনা মোতায়েনের খবর আসতে পারে।
শনিবারের বৈঠকে পরিস্থিতি অনুযায়ী বিভিন্ন কেন্দ্রের স্পর্শকাতরতা জরিপ করে বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা করার কথা। তবে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর জানিয়ে দিয়েছে, খাতায়-কলমে বেশি বা কম স্পর্শকাতরতা, যা-ই বিচার করা হোক, কমিশনের নির্দেশমাফিক ১০০ শতাংশ বুথেই ওয়েবকাস্টিং করা হবে। অর্থাৎ পুরো ভোট প্রক্রিয়ার ছবি সরাসরি কন্ট্রোলরুমে বসে কমিশনের শীর্ষ আধিকারিকেরা দেখতে পারবেন।
এর বাইরেও প্রতিটি বুথের জটিলতা (ক্রিটিক্যালিটি) ও বিপন্নতা (ভালনারেবিলিটি)-র মাত্রা জরিপ করার কাজও গুরুত্বের সঙ্গে করছে সিইও-র দফতর। এক শীর্ষকর্তা বলেন, “ভোটের পাঁচ-ছ’দিন আগে পর্যন্ত এই কাজ চলবে। অতীতের পঞ্চায়েত থেকে বিধানসভা বা লোকসভা ভোটে হিংসা, মেয়েদের উপরে অত্যাচার ইত্যাদির ইতিহাস বিচার করেই তালিকা তৈরি হচ্ছে।”
কমিশন সূত্রের খবর, ভালনারেবল বা বিপন্ন ভোটারদের একটি তালিকা ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে। তাতে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রের বাড়ি-বাড়ি ধরে ভোট দিতে বাধাপ্রাপ্ত ভোটারদের তথ্য রয়েছে। ওই কেন্দ্রে কারা ভোট দিতে বাধা সৃষ্টি করেছেন, তারও তালিকা তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সেক্টর অফিসার, রিটার্নিং অফিসারদের রিপোর্টে যোগ হয়েছে, বিপন্ন ভোটকেন্দ্রের সমস্যা দূর করতে তাঁরা কী পদক্ষেপ করেছেন। এক পদস্থ কর্তা বলেন, “ভালনারেবল ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করাটা কমিশনের দায়বদ্ধতা। সেই দিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।” তবে সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকা নিয়ে সংশয়ের কাঁটা এখনই খচখচ করছে।
বৃহস্পতিবারই অলোক সিন্হা রাজ্যের মুখ্যসচিব ভগবতীপ্রসাদ গোপালিকার সঙ্গে বৈঠক করেন। ভোট নিরাপত্তা, কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন বা কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয়ের মতো নানা বিষয় নিয়ে তাঁদের আলোচনা হয়ে থাকতে পারে বলে বিশ্লেষক মহলের অনুমান।