Abhishek Banerjee

কল্যাণ ‘ক্লাবে’ লোক বাড়ল, সুদীপ-সৌগতের প্রচারেও গেলেন না অভিষেক, নতুন করে পুরনো আলোচনা দলে

উত্তর কলকাতা এবং দমদমে শনিবার ভোটগ্রহণ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় প্রচারপর্ব শেষ হয়ে গিয়েছে। দেখা গেল, অভিষেকের জনসভা বা রোড-শো হয়নি এই দুই কেন্দ্রে। যেমনটা হয়নি কল্যাণের শ্রীরামপুরেও।

Advertisement

শোভন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২৪ ১১:৩৩
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

শ্রীরামপুর ‘ব্যতিক্রম’ হয়ে রইল না। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় একা রইলেন না। তাঁর সঙ্গে জুড়ে গেল সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সৌগত রায়ের নাম। যেমন শ্রীরামপুরের সঙ্গে জুড়ে গেল উত্তর কলকাতা এবং দমদম কেন্দ্রের নাম। লোকসভা ভোটের প্রচার শেষ হয়ে গিয়েছে। রাজ্য জুড়ে সভা এবং রোড-শো করলেও ওই তিনটি কেন্দ্রে একটি কর্মসূচিও করলেন না তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

অভিষেকের ডায়মন্ড হারবারের মতোই উত্তর কলকাতা এবং দমদমেও শনিবার ভোটগ্রহণ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় প্রচারপর্ব শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু দেখা গেল, অভিষেকের কোনও জনসভা বা রোড-শো হয়নি ওই দুই কেন্দ্রে। যেমনটা হয়নি পঞ্চম দফায় ভোট হয়ে যাওয়া শ্রীরামপুরেও। যা নিয়ে ভোটের মধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। কল্যাণের প্রচারে অভিষেকের না-যাওয়া প্রসঙ্গে তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতা বলেছিলেন, ‘‘দমদম এবং উত্তর কলকাতা দেখে বিষয়টি বুঝতে হবে।’’ শুক্রবার সকালে সেই নেতাই বলেন, “অনেক কষ্ট করেও বিষয়টাকে আর সাধারণ ঘটনা বলে ভাবা যাচ্ছে না!”

দমদমের তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায় অবশ্য বলেছেন, এই গোটাটাই ‘সংবাদমাধ্যমীয় কৌতূহল’। তাঁর কথায়, “অভিষেকের সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয়েছে। ও আমায় বলেছে, নিজের কেন্দ্রের প্রচারে ব্যস্ত থাকবে। তাই দমদমে আসতে পারবে না। তা ছাড়া ও এটাও বলেছে যে, আপনি তো জিতবেনই!” এ কথা ঠিক যে, অভিষেক নিজে ডায়মন্ড হারবারের প্রার্থী। শনিবার তাঁর নিজের কেন্দ্রেও ভোট। প্রচারপর্বের শুরু থেকে সারা রাজ্যে জনসভা, রোড-শো করার কারণে সে ভাবে নিজের কেন্দ্রে সময় দিতে পারেননি তৃণমূলের সেনাপতি। শেষ কয়েক দিন অভিষেক মনোনিবেশ করেছিলেন মূলত ডায়মন্ড হারবারেই। আবার এ-ও ঠিক যে, ডায়মন্ড হারবারে প্রচারের পাশাপাশি বসিরহাটের তৃণমূল প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলামের সমর্থনে বাদুড়িয়ায় জনসভা করেছেন অভিষেক। গিয়েছেন বারাসতের তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদারের সমর্থনে রোড-শোতেও। কিন্তু বাদ থেকেছে উত্তর কলকাতা এবং দমদম। ফলে বিষয়টি নজরে পড়েছে।

Advertisement

তৃণমূলে যখন নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্ব তুঙ্গে, তখন যে সব কেন্দ্র এবং সাংসদকে নিয়ে বিস্তর আলোচনা ছিল, তার মধ্যে শ্রীরামপুর, উত্তর কলকাতা এবং দমদম ছিল অন্যতম। কল্যাণ, সুদীপ, সৌগতের সঙ্গে দলের অভ্যন্তরে অভিষেকের রসায়ন নিয়ে কম আলোচনা নেই। অভিষেক যখন প্রকাশ্যে রাজনীতিতে অবসরের বয়স নির্দিষ্ট করার পক্ষে সওয়াল করছেন, তখন দেখা গিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, মনের বয়সটাই আসল। গত নভেম্বরে সে কথা বলতে গিয়ে ‘দিদি’ উদাহরণ দিয়েছিলেন সৌগতের। আর নেত্রীর কথা ধার করে সৌগত বলেছিলেন, “মমতাই তো বলেছেন, মনের বয়সটাই আসল!”

উত্তর কলকাতার তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বরাবরের মতোই ফোন ধরেননি। তাই উত্তর কলকাতায় অভিষেকের না-যাওয়া প্রসঙ্গে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানা সম্ভব হয়নি। সুদীপের বিরুদ্ধে লড়ছেন ভোটের মুখে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া তাপস রায়। যিনি তৃণমূলে থাকার সময়ে ‘অভিষেক-ঘনিষ্ঠ’ বলেই পরিচিত ছিলেন। তাঁর কথায়, “কে কোথায় প্রচার করবেন, সেটা সম্পূর্ণ সেই রাজনৈতিক দলের বিষয়। এখানে আমার কিছুই বলার নেই।” তার পরেই তাপসের সংযোজন, “সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় তো লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা। তিনি ক’টা কেন্দ্রে প্রচারে গিয়েছেন? ২০২১ সালের ভোটে কতগুলি জায়গায় গিয়েছিলেন? পড়ে ছিলেন নিজের বৌয়ের কেন্দ্রে।” উল্লেখ্য, সুদীপের স্ত্রী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায় চৌরঙ্গির বিধায়ক।

সুদীপের প্রচারে অভিষেকের ছবিও সে ভাবে ব্যবহৃত হয়নি। সুদীপের জোড়া প্রচারপত্রে কেন অভিষেকের ছবি নেই, সে প্রশ্ন তুলে সমাজমাধ্যমে সরব হয়েছিলেন উত্তর কলকাতার অন্তর্গত ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোনালিসা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে শেষ কয়েক দিনে সুদীপের জন্য একগুচ্ছ কর্মসূচি করেছেন দলের সর্বময় নেত্রী মমতা। সুদীপ সম্পর্কে যাঁরা আড়ালে কথা বলেন বা সমালোচনা করেন, তাঁদের উদ্দেশে মমতার উক্তি ছিল, “ওরা বলে যাক! আপনি আপনার মতো করে যান।” নরেন্দ্র মোদীর পাল্টা উত্তর কলকাতায় রোড-শোও করেছেন মমতা। সেই মিছিল শেষে দলের অন্দরে সুদীপের ‘সমালোচক’ কুণাল ঘোষকে ডেকে নিয়ে আলাদা করে কথাও বলেছিলেন তিনি। তবে ‘জল্পনা’ থামছে না। বরং সৌগত-সুদীপের প্রচারে অভিষেকের ‘অনুপস্থিতি’ তা খানিক জোরালোই করেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement