দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়াল। ছবি পিটিআই।
জার্মানি, আমেরিকার পর এ বার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টির (আপ) প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়ালের গ্রেফতারি নিয়ে মুখ খুলল রাষ্ট্রপুঞ্জ। কেজরীওয়ালের গ্রেফতারির পাশাপাশি, কংগ্রেসের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ়’ হওয়ার কারণে ভারতে সৃষ্ট ‘রাজনৈতিক অস্থিরতা’ নিয়ে মতামত জানাতে গিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জ বলে, ‘‘আমরা আশা করব প্রত্যেক ভারতীয়ের রাজনৈতিক এবং নাগরিক অধিকার যেন ক্ষুণ্ণ না হয়।’’
গত ২১ মার্চ আবগারি মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হন কেজরীওয়াল। সেই গ্রেফতারি নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে শুরু করেছে বিরোধী দলগুলি। আপের দাবি, কেজরীর গ্রেফতারি বেআইনি। শুধু বিরোধীরা নন, কেজরীওয়ালের গ্রেফতারি নিয়ে মন্তব্য করেছে জার্মানি এবং আমেরিকা। যা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছে ভারত।
সেই আবহে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর গ্রেফতারি, কংগ্রেসের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ হওয়া এবং আসন্ন লোকসভা নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করল রাষ্ট্রপুঞ্জ। রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফেন ডুজারিককে সাংবাদিক সম্মেলনে ভারতের ‘রাজনৈতিক অস্থিরতা’ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। সেই প্রশ্নের উত্তরে স্টেফেন বলেন, ‘‘আমরা খুব আশা করব ভারতে প্রত্যেকের রাজনৈতিক এবং নাগরিক অধিকার সুরক্ষিত থাকবে। প্রত্যেক নাগরিক যেন অবাধ এবং সুষ্ঠু ভাবে ভোট দিতে পারেন।’’
কেজরীওয়ালের গ্রেফতারি নিয়ে এখনও পর্যন্ত দু’বার মন্তব্য করেছে আমেরিকা। কেজরীওয়াল যেন ন্যায্য, স্বচ্ছ এবং সময়োপযোগী বিচার পান, তা নিশ্চিত করার পক্ষেই সওয়াল করেছিল জো বাইডেন সরকার। যার জেরে গত বুধবার ভারতে অবস্থিত আমেরিকার দূতাবাসের কার্যকরী সহকারী প্রধান গ্লোরিয়া বারবেনাকে তলব করা হয়েছিল। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে ভারতের আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে আমেরিকার বিদেশ দফতরের মুখপাত্রের করা মন্তব্যের নিন্দাও করা হয়। ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, “কূটনীতিতে আশা করা হয় যে, দেশগুলি অন্য দেশের সার্বভৌমত্ব এবং অভ্যন্তরীণ অখণ্ডতার বিষয়ে শ্রদ্ধাশীল হবে। অন্যথায় খারাপ দৃষ্টান্ত তৈরি হবে।”
কিন্তু তার পরও আমেরিকা নিজেদের অবস্থানে অনড় ছিল। দূতাবাসের কার্যকরী সহকারী প্রধানকে তলব করার প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে আমেরিকার দফতরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার কেজরীওয়ালের গ্রেফতারি নিয়ে তাঁর পুরনো বক্তব্যকেই আরও এক বার প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর কথায়, “আমেরিকা এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছ এবং অবাধ আইনি প্রক্রিয়ার দাবি জানায়।” শুধু তা-ই নয়, কংগ্রেসের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘ফিজ়’ হওয়া প্রসঙ্গেও নিজের মতামত জানান ম্যাথু। তিনি বলেন, “আয়কর দফতরের বিরুদ্ধে কংগ্রেস তাদের বেশ কিছু ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ় করে দেওয়ার যে অভিযোগ তুলেছে, সে সম্পর্কেও আমরা অবহিত রয়েছি। কংগ্রেসের দাবি, এর ফলে আসন্ন নির্বাচনের জন্য প্রচার চালাতে তাদের অসুবিধার মুখে পড়তে হবে।” আমেরিকার বিদেশ দফতরের মুখপাত্রের এই মন্তব্য ভাল ভাবে নেয়নি ভারত। এ দেশের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সাংবাদিক সম্মেলনে আমেরিকার মন্তব্যকে ‘অযৌক্তিক’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের নির্বাচনী এবং আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে এ ধরনের কোনও প্রচার কোনও ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’’
শুধু আমেরিকা নয়, কেজরীওয়ালের গ্রেফতারি নিয়ে মুখ খুলেছিল জার্মানিও। জার্মানির তরফেও কেজরীর গ্রেফতারি নিয়ে মন্তব্য করে বলা হয়েছিল, তারা আশা করে ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা’ এবং ‘মৌলিক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ’ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বিচার প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রেও প্রযুক্ত হবে। এই মন্তব্যের জেরে ভারতের জার্মান দূতাবাসের উচ্চপদস্থ কূটনীতিক জর্জ এনজ়ওয়েলারকে তলব করেছিল বিদেশ মন্ত্রক।