অভিজিতের কথা, অভিষেকের উত্তর। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
নাম না-করে তাঁকে ‘তালপাতার সেপাই’ বলেছেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। যদিও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই ‘বিশেষণে’ রেগে যাননি। বরং ‘সত্যবাদী’ বলে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির ‘প্রশংসা’ই করেছেন তিনি। অভিষেক বলেন, ‘‘উনি আমার নাম না করে অনেক কিছু বলেছেন। তবে আমার খুব ভাল লেগেছে এবং আমি এর জন্য ওঁকে ধন্যবাদ জানাতে চাই যে উনি একটি খুব সত্যি কথাও বলেছেন।’’
কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর অভিজিৎ মঙ্গলবার জানান, তিনি বিজেপিতে যোগদান করছেন। অভিজিৎ বলেন, ‘‘আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি। ধর্ম মানি। তাই সিপিএমে যাইনি। কংগ্রেস পরিবারতন্ত্র চালায়। তাদের দলে জয়রাম রমেশের মতো শিক্ষিত মানুষ পদ পান না। রাহুল গান্ধীর পিছনে ঘুরে বেড়ান। তাই কংগ্রেসে যাব না। বিজেপি তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রথম থেকে লড়াই করে আসছে, তাই বিজেপিতে যোগ দান করছি।’’ এর পরেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘বিজেপি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। আমিও বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ করি। তার পরেই এই সিদ্ধান্ত।’’
অভিজিতের এই মন্তব্যকেই ‘ইন্টারেস্টিং’ বলে মন্তব্য করেছেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘ওঁর কথা আমি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্ট থেকে জেনেছি। আর তাতে আমার কয়েকটি বিষয় ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে।’’ অভিষেকের কথায়, ‘‘উনি একটা খুব সত্যি কথা বলে দিয়েছেন। উনি বলেছেন, বিজেপি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আমি বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। অর্থাৎ, বিভিন্ন সময়ে যখন উনি আদালতে বিভিন্ন নির্দেশ দিয়েছেন, তখন বিজেপির সঙ্গে ওঁর যোগাযোগ ছিল। বাকিটা আমি জনগণের উপর ছেড়ে দিচ্ছি।’’
রাজ্যের বিভিন্ন মামলায় তৎকালীন বিচারপতির নির্দেশের স্বচ্ছতা নিয়ে এ ভাবেই গত কয়েক দিন ধরে শাসক তৃণমূলের নেতারা বিভিন্ন প্রশ্ন তুলেছিলেন। এ বার তাতেই সিলমোহর দিলেন দলের ‘সেনাপতি’ অভিষেকও।
যদিও অভিষেকের এই প্রশ্নের ‘জবাব’ অভিজিৎ দিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন তাঁর সাংবাদিক বৈঠকে। তিনি বলেছিলেন, গত পাঁচ-সাত দিনেই বিজেপির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়েছে। আর তিনি ওই সাত দিন ছুটি নিয়েছিলেন আদালত থেকে। বিচারের কাজ করেননি। এ ব্যাপারে প্রশ্ন উঠতে পারে জেনেই তিনি ওই পদক্ষেপ করেছিলেন বলে জানান অভিজিৎ।
মঙ্গলবার অভিজিতের ওই সাংবাদিক বৈঠকের কিছু পরেই বিকেলে ইকোপার্কে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন অভিষেক। সেখানেই তাঁর উদ্দেশে বলা অভিজিতের শব্দবন্ধগুলি প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য জানতে চান সাংবাদিকেরা। জবাবে অভিষেক বলেন, ‘‘আমার আরও একটা জিনিস ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে। বিজেপির নেতারা আমার নাম নেন না ভাববাচ্যে কথা বলেন। প্রাক্তন বিচারপতিও আমার নাম নেননি। এই মিলটা খুব ইন্টারেস্টিং।’’
উল্লেখ্য, অভিজিৎকে সর্বসমক্ষেই অভিষেকের প্রতি স্পষ্ট ইঙ্গিত করে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘ওঁর নাম আমি নেব না। কারণ ওঁর নামটাকেই অশ্লীল (স্ল্যাং) বলে মনে করি আমি।’’ মঙ্গলবার অভিষেকের নাম না করে তাঁকে ‘তালপাতার সেপাই’ বলে উল্লেখ করে অভিজিৎ বলেছিলেন, ‘‘ডায়মন্ড হারবারে তালপাতার সেপাইকে লক্ষ লক্ষ ভোটে হারাব।’’ অভিষেক সে প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আমি আগেও বলেছি, গণতান্ত্রিক দেশে যে যেখানে খুশি দাঁড়াতে পারেন এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। আমার এ ব্যাপারে কিছু বলার নেই।’’