অধীর চৌধুরী এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়। —ফাইল চিত্র।
বহরমপুরে এ বার তৃণমূলের লড়াই কংগ্রেসের সঙ্গে নয়। বিজেপির সঙ্গে। অধীর চৌধুরী এ বার বিজেপির ‘ডামি ক্যান্ডিডেট’ (দ্বিতীয় প্রার্থী)! বহরমপুরে রোড-শোয়ের পর বক্তৃতায় এমনই দাবি করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অধীরকে দীর্ঘ দিন ধরেই বিজেপির ‘এজেন্ট’ বলে কটাক্ষ করে আসছে তৃণমূল। সেই সূত্রেই বহরমপুরবাসীর কাছে অভিষেকের প্রশ্ন, এ বারের নির্বাচনে অধীর নিজেই কংগ্রেসকে ভোট দেবেন না। তা হলে অধীরকে কেন ভোট দেবেন মানুষ? বিজেপির সঙ্গে অধীরের সেটিংয়ের অভিযোগ তুলে ধরে দু’টি অডিয়োও শুনিয়েছেন তৃণমূলের সেনাপতি।
আগামী ১৩ মে চতুর্থ দফায় বহরমপুরে ভোট। বুধবার সেখানে দলীয় প্রার্থী ইউসুফ পাঠানের সমর্থনে রোড-শো করেন অভিষেক। রোড-শো শেষে বক্তৃতায় অভিষেক দাবি করেন, এ বার বহরমপুরের মানুষ স্থির করে নিয়েছেন, তাঁরা আর অধীরকে সংসদে পাঠাবেন না। বহরমপুরে আড়াই লক্ষেরও বেশি ভোটে জিতবেন ইউসুফ। সম্ভাবনা রয়েছে, অধীর তৃতীয় স্থানে পৌঁছে যেতে পারেন। অভিষেকের অভিযোগ, ‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনা’ নিয়ে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল যে ভাবে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরোধিতা করেছে, পথে নেমেছে, সে ভাবে অধীরকে কখনওই বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা যায়নি। উল্টে অধীর বরাবর বিজেপির হাত শক্ত করেছেন। অভিষেকের কথায়, ‘‘জাতীয় স্তরে যখন বিরোধী জোটের সলতে পাকানো শুরু হয়েছে, পটনা, বেঙ্গালুরু, দিল্লিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাহুল গান্ধী, সনিয়া গান্ধী এবং মল্লিকার্জুন খড়্গেরা বিরোধী জোটকে কী ভাবে শক্তিশালী করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা-বৈঠক করছেন, তখন লাগাতার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে গিয়েছেন অধীরবাবু। এতে বিজেপিরই হাত শক্ত হয়েছে।’’
অভিষেকের দাবি, পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ বাস্তবায়িত না হওয়ার সব চেয়ে বড় কারণ অধীর। কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকেও অধীরের কার্যকলাপ সম্পর্কে জানিয়েছিলেন তিনি। অভিষেক বলেন, ‘‘কংগ্রেসের এক কেন্দ্রীয় নেতাকে বলেছিলাম। আমি নাম বলছি না। উনি আমাকে বলেছেন, ‘আমরাও অনেক বার বলেছি ওঁকে। কিন্তু উনি তো শুনছেনই না।’’’ বিজেপির সঙ্গে অধীরের সেটিং রয়েছে বলে দাবি করে অভিষেক দু’টি অডিয়ো ক্লিপও শুনিয়েছেন। তার প্রেক্ষিতে অভিষেকের প্রশ্ন, ‘‘অধীরবাবু তো এ বার নিজেই কংগ্রেসকে ভোট দেবেন না। তা হলে আপনারা (জনগণের উদ্দেশে) কেন কংগ্রেসকে ভোট দেবেন? বহরমপুরে বিজেপি এক জনকে প্রার্থী করেছে। আর অধীরবাবু বিজেপির ডামি ক্যান্ডিডেট!’’
অভিষেক যে দু’টি অডিয়ো ক্লিপ শুনিয়েছেন, তার একটির কণ্ঠে শোনা যায়, ‘‘তৃণমূলের চেয়ে বিজেপিকে ভোট দেওয়াও ভাল।’’ অভিষেকের দাবি, খোদ অধীরই কোনও এক সভায় ওই মন্তব্য করেছেন। সম্প্রতি একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছিল। সেখানে অধীরকে বলতে শোনা যায়, ‘‘তৃণমূলকে ভোট দেওয়া মানে, তার থেকে ভাল বিজেপিকে ভোট দিয়ে জেতানো।’’ তা নিয়ে অধীরকে বিঁধেছে তৃণমূল। পরে অবশ্য সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, রাজ্য পুলিশই ‘বিকৃত’ বলেছে অধীরের বক্তব্যের ওই ভাইরাল ভিডিয়োটিকে। বুধবার আরও একটি অডিয়ো শোনান অভিষেক। সেই অডিয়ো শুনিয়ে তৃণমূল সাংসদের দাবি, অধীর অতীতে বলেছিলেন, কলকাতা হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে যদি মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হয়, তা হলে তিনি সবার আগে ভোট দিতে লাইনে দাঁড়াবেন। সেই অভিজিৎ এ বার লোকসভা ভোটে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন। তমলুকে দাঁড়িয়েছেন।
অধীরের সঙ্গে বিজেপির সেটিংয়ের অভিযোগ তুলে অভিষেকের প্রশ্ন, সারদা মামলায় নাম থাকা সত্ত্বেও কেন অধীরকে সিবিআই ডাকে না? তাঁর কথায়, ‘‘সনিয়া গান্ধীকে, রাহুল গান্ধীকে সিবিআই, ইডি ডেকে পাঠায়। কিন্তু আপনাকে কেন ডাকে না? সুদীপ্ত সেন আপনার নাম নিয়েছিলেন। তার পরেও কেন সিবিআই, ইডি আপনার ব্যাপারে চুপ? কী সেটিং করে রেখেছেন?’’