অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
বঙ্গের শাসকদলের অন্দরে নবীন-প্রবীণ বিতর্ক আপাতত অতীত। রাজ্য জুড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে সংগঠনের সবটা জুড়েই এখন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়!
নির্বাচনের কয়েক মাস আগে পর্যন্ত সংগঠন নিয়ে যে টানাটানি চলছিল, তাতে আপাতত যবনিকা পড়েছে। সৌজন্যে লোকসভা নির্বাচন। আপাতত রাজ্যের ৪২ আসনে দলের রাশ পুরোপুরি অভিষেকের হাতেই। সেই সূত্রেই ভোটের প্রচার ও অন্যান্য সব সাংগঠনিক বিষয়ের অধিকাংশই পরিচালিত হচ্ছে পরামর্শদাতা সংস্থার পরিকল্পনা মতোই। পুরনো বিতর্কের প্রেক্ষিতে দেখতে গেলে প্রবীণেরা নন, এই নির্বাচনে সামনে এসে গিয়েছে দলের নবীন নেতৃত্বই। তৃণমূল সূত্রের খবর, রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী জেলা স্তরে প্রস্তুতি দেখতে যাচ্ছেন। তবে তাঁর মতো প্রবীণদের এই কর্মসূচি মূলত ‘টিম-অভিষেকে’রই নির্দিষ্ট
করে দেওয়া।
এই মুহূর্তে সংগঠনের কাজে সক্রিয় নবীন অংশের এক নেতার কথায়, ‘‘সামনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আছেন। তাঁর অনুমোদন নিয়েই সব সিদ্ধান্ত হচ্ছে। তবে বয়স ও অন্যান্য কারণে কমবয়সিরা বেশি দায়িত্ব নিতে পারেন। তাই নিচ্ছেনও।’’
প্রার্থী বাছাইয়ের আগে নবীন ও প্রবীণ বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছিল বঙ্গের শাসক শিবিরের অন্দরে। সেই সূত্রেই বয়সের কারণে বেশ কয়েক জন প্রবীণের প্রার্থী-পদ নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেলেও শেষ পর্যন্ত স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে তালিকায় ভারসাম্য রক্ষা করা হয়েছে। প্রবীণদের পাশাপাশি, দল ও সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত এমন বেশ কিছু নবীন মুখও এসেছে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায়। প্রার্থী নিয়ে সেই টানাটানিতে নবীনেরাও জায়গা পাওয়ায় তালিকায় অভিষেক-শিবিরের প্রভাবও স্পষ্ট। তার পর থেকে নির্বাচন পরিচালনার রাশও রয়েছে তাঁর হাতেই। রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা ছাড়াই কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করা হয়েছে পরামর্শদাতা সংস্থার মত মেনে। দলীয় প্রার্থী ও সেই কমিটির সঙ্গে সমন্বয় রেখে প্রচার ও কমিশন সংক্রান্ত অন্যান্য আইনি কাজকর্ম করছেন সংস্থার ভারপ্রাপ্তেরাই। নির্দিষ্ট সমীক্ষার ভিত্তিতে প্রচারের সাধারণ ও এলাকাভিত্তিক বিষয় ঠিক করেছে তারাই।
নির্বাচনের সময়ে বুথ স্তরে প্রস্তুতি ও সংগঠন সম্পর্কিত কাজকর্ম নিয়ে বরাবরই কেন্দ্রীয় ভাবে নির্দেশিকা দিয়ে এসেছে তৃণমূল। কেন্দ্রভিত্তিক কিছু প্রয়োজন হলে আলাদা ভাবে প্রার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন রাজ্য নেতারা। এই নির্বাচনে বিষয়টিতে কিছুটা রদবদল করা হয়েছে। এ বার লোকসভা কেন্দ্র ধরে প্রায় সব বিধানসভার গুরুত্বপূর্ণ সংগঠকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
প্রাথমিক ভাবে হাতছাড়া লোকসভা কেন্দ্রগুলিতে বেশি জোর দেওয়ার কথা বলা হলেও অন্য আসনগুলিতেও প্রচার ও সংগঠনের অভিমুখ ঠিক করে দেবেন তিনি। সেই মতোই তাঁর কর্মসূচি সাজানো হয়েছে। দলের তারকা প্রচারকের তালিকায় অনেক প্রবীণ নেতাকে
রাখা হয়েছে। কিন্তু বুথভিত্তিক সাংগঠনিক কাজ পরিচালনায় বয়স্কদের সে অর্থে কোনও ভূমিকা নেই। সেখানে একচেটিয়া কাজ করছেন দলের নবীন প্রজন্ম। এই বিষয়টি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে অভিষেকের দফতর থেকেই। এবং তাঁর ভাবনা মতো দুর্নীতির অভিযোগ এড়িয়ে সরকারি অনুদান প্রকল্পকে সামনে রেখে প্রথম পর্বের প্রচার পুস্তিকা প্রকাশ করেছে তৃণমূল।
এই নির্বাচনী পরিবেশ থেকেই তৃণমূলের একটা বড় একাংশ মনে করছে, নবীনের এই ‘নিয়ন্ত্রণ’ লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে আরও তীব্র হবে। কারণ, বছর দেড়েকের মাথায় বিধানসভা নির্বাচনে ঢুকে পড়বে দল। তবে নবীনের এই কর্তৃত্ব যাতে দলের অন্দরে ফের ‘অপ্রিয়’ পরিস্থিতি তৈরি না করে, সে দিকে সতর্ক নজর রেখেছেন তাঁরাই। তাই প্রবীণদেরও কেন্দ্রভিত্তিক দায়িত্ব দিয়ে জেলায় পাঠানো হচ্ছে।