দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী গোপাল লামার হাত ধরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার শিলিগুড়ির বাগডোগরার গোঁসাইপুরের সভামঞ্চে তোলা ছবি। ছবি: স্বরূপ সরকার।
লোকসভা জিতে আগামী দু’বছরের মধ্যে আশা-আকাঙ্খা পূরণ করতে না পারলে আগামী বিধানসভায় তৃণমূলে ভোট দেওয়ার দরকার নেই বলে দার্জিলিং কেন্দ্রের সমতলের তিন বিধানসভার মানুষকে আবেদন করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার দুপুরে বাগডোগরার গোঁসাইপুরের জনসভার মাঠ থেকে জানিয়ে দিলেন, সমতলই এ বার এই কেন্দ্র জয়পরাজয়ের নির্ণায়ক ভূমিকা নেবে। দিল্লির মাধ্যমে দার্জিলিঙের ১১ জনজাতির তফসিলি উপজাতির স্বীকৃতি দেওয়ার আশ্বাসও সভা থেকে দিয়েছেন অভিষেক।
তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘‘১৫ বছর ধরে বিজেপির সাংসদ রয়েছে। তৃণমূলকে এ বার সুযোগ দিন। দু’বছরের মধ্যে যদি আপনাদের চাহিদা, আশা-আকাঙ্খা পূরণ না করতে পারি বিধানসভা তৃণমূলের বিপক্ষে ভোট দিয়ে আপনারা প্রতিশোধ নেবেন। ধর্মের নামে নয় কর্মের নামে প্রতিযোগিতা হবে।’’
দার্জিলিং জেলার সমতলের তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রই গতবার বিজেপি জিতেছে। পাহাড়ের দু’টি বিধানসভাও বিজেপির দখলে। প্রতি লোকসভা ভোটে পাহাড় থেকে বিজেপি প্রার্থী লক্ষাধিক ভোটের ‘লিড’ নিয়ে নীচে নেমেছে। কারণ, পাহাড়ের ২০১৯ সাল অবধি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চলেছে।
২০২১ সালের পর থেকে তা ভেঙে যায়। বহুদলীয় ব্যবস্থা পাহাড়ে তৈরি হয়েছে। আগে ভোটে প্রার্থী দেওয়ার মত পরিস্থিতি থাকত না বলে বিভিন্ন দলের তরফে অভিযোগ করা হত। সেই সূত্রের শাসক দলকে পাশে রেখে বিজেপি বরাবর লক্ষাধিক ভোট পাহাড়ে পেয়ে সমতলে এসেছে। তাতে সমতলের ভোট, লিড বা টক্করের কোনও মানেই থাকত না। এবার তা অনেকটাই হবে না পরিষ্কার।
অভিষেক বলেন, ‘‘লোকসভায় সাতটি বিধানসভা রয়েছে। প্রতিবার সমতলে থাকা দার্জিলিং জেলার অন্তর্গত এই তিনটি বিধানসভার লোকেরা ভাবে আমাদের ভোটের কী দাম! তাই বলছি, এক দফায় ভূমিপুত্রকে আপনারা ভোট দিন। দিল্লির নেতার বদলে শিলিগুডির মানুষকে বেছে নিন।’’
আজ, বুধবার এই কেন্দ্রের প্রচার শেষ। তার আগে বাগডোগরার ‘উত্তরা’ উপনগরীর সভাই তৃণমূলের এ বারের প্রচারের শেষ বড় সভা। দলের অন্দরের খবর, পাহাড়ে প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার অনীত থাপারা ভাল ভোট করাতে কৌশল নিয়েছেন। বিজেপির রাজু বিস্তাও বিমল গুরুং, মন ঘিসিংয়ের সমর্থনে গতবারের মতো না হলেও ভাল ভোটের আশা করছেন। সে জায়গায় দাঁড়িয়ে সমতলের চারটি বিধানসভাই এই কেন্দ্রের জয়পরাজয় ঠিক করতে পারে। আর সে ক্ষেত্রে দলের দায়িত্বে থাকা জেলার নেতাদের ভূমিকা ভোটের পর দেখা হবে। কার্যত পুরস্কার বা তিরস্কারের নীতি নিতে পারে দল। সেই জায়গা মাথায় রেখেই সমতলের নির্ণায়ক ভূমিকার কথা অভিষেক বলেছেন বলে নেতারা মনে করছেন।
এ দিন ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক। কোচবিহারের এক নেত্রীর অডিয়ো টেপও (আনন্দবাজার এর সত্যতা যাচাই করেনি) তিনি সভায় শোনান। সেখানে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে। তা ভুল হলে আদালতে মামলা করার কথাও অভিষেক বলেন। তিনি বলেন, ‘‘কথায় কথায় তো হাই কোর্ট, কোর্টের রাজনীতি। আমি যদি মিথ্যা কথা বলি, আমার বিরুদ্ধে মামলা করে হাই কোর্টে। দরকার হলে ক্লিপ হাই কোর্টে আমরা জমা দেব।’’