Lok Sabha Election 2024

ডায়মন্ড হারবারে দাঁড়ালে ‘তালপাতার সেপাই’কে লাখ লাখ ভোটে হারাবেন তিনি! শুনে কী বললেন সেপাই?

তৃণমূলের অন্দরে এবং বাইরে ‘সেনাপতি’ হিসাবেই উল্লেখ করা হয় অভিষেককে। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় কারও নাম না করেই বলেছেন ‘তালপাতার সেপাই’।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২৪ ১৭:৪৮
Share:

(বাঁ দিকে) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

বিচারপতি থাকাকালীন তাঁর নানা মন্তব্যের লক্ষ্যে ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিচারপতি পদ ছাড়ার পরেও অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের লক্ষ্য সেই অভিষেকই। মঙ্গলবার বিজেপিতে যাওয়ার কথা ঘোষণা করার পর অভিজিৎ বললেন, ‘‘যদি লোকসভা ভোটে ডায়মন্ড হারবারের প্রার্থী হই, তবে ওঁর দুর্বৃত্ত দলের মোকাবিলা করে ওঁকে লাখ লাখ ভোটে হারাব।’’

Advertisement

যার পাল্টা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বলেন, ‘‘গণতান্ত্রিক দেশে যে যেখানে খুশি দাঁড়াতে পারেন এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। আমার কিছু বলার নেই।’’ তবে একই সঙ্গে অভিষেক বলেছেন, ‘‘উনি আমার নাম না করে অনেক কিছু বলেছেন। বিজেপির নেতারাও আমার নাম নেন না। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যেই বিজেপির নেতাদের সঙ্গে ওঁর মিল পাচ্ছি।’’

মঙ্গলবার যে ডায়মন্ড হারবারের প্রতিদ্বন্দ্বীকে লক্ষ লক্ষ ভোটে হারানোর দাবি করেছেন অভিজিৎ, সেই ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক। স্বাভাবিক ভাবেই অভিজিৎকে প্রশ্ন করা হয়, তিনি কি অভিষেককেই লক্ষ লক্ষ ভোটে হারানোর কথা বলেছেন? জবাবে হাই কোর্টের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সরাসরি কারও নাম বলেননি। তিনি বলেন, ‘‘আমি কারও নাম নেব না। তবে কোনও তালপাতার সেপাইকে আমি পরোয়া করি না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমি এক জন প্রকৃত রাজনীতিবিদ বলে মনে করি। তবে কোনও তালপাতার সেপাইকে দুষ্কৃতীর বেশি অন্য কিছু ভাবতে পারছি না।’’

Advertisement

কে ‘তালপাতার সেপাই’? জানতে চাওয়া হলে অভিজিৎ ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘যাঁকে আপনারা সেনাপতি বলেন!’’

তৃণমূলের অন্দরে এবং বাইরে ‘সেনাপতি’ হিসাবে উল্লেখ করা হয় অভিষেককেই। অভিষেক নিজে যদিও দলের কর্মী হিসাবেই উল্লেখ করেন। তবে তাঁর অনুগামীরা তাঁকে ‘সেনাপতি’ বলে উল্লেখ করেন। সম্প্রতি ব্রিগেড সমাবেশের একটি দলীয় চিঠিতে, দলের প্যাডে অভিষেককে ‘সেনাপতি’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। ফলে বিচারপতির লক্ষ্য যে তিনিই, সে ব্যাপারে কার্যত নিশ্চিত রাজনীতির কারবারিরা। যদিও তাঁকে নাম উল্লেখ করার ব্যাপারে জোর দেওয়া হলে অভিজিৎ বলেন, ‘‘আমি কি এখানে কোনও অশালীন কথা বলছি? ওঁর নাম আমি করব না। কারণ ওঁর নামটাকেই ‘অশ্লীল’ (স্ল্যাং) বলে মনে করি আমি।’’

অভিষেক সম্পর্কে বিচারপতির বিরূপ মন্তব্য অবশ্য এই প্রথম নয়। বিচারপতি থাকাকালীন অভিষেকের সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন অভিজিৎ এ-ও জানতে চেয়েছিলেন, অভিষেকের সম্পত্তির উৎস কী? বলেছিলেন, ‘‘এত সম্পত্তি আসে কোথা থেকে?’’

অন্য দিকে এ-ও বিচার্য যে, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় যখন একের পর এক সরকার বিরোধী নির্দেশ দিয়ে জনমানসে ‘প্রিয়’ হয়ে উঠছিলেন অভিজিৎ, তখন অভিষেকের করা মামলাতেই তাঁর নির্দেশ প্রথম সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নের মুখে পড়ে এবং হাতছাড়া হয়ে যায় নিয়োগ দুর্নীতির সংক্রান্ত বহু মামলা।

ওই ঘটনার পর কলকাতা হাই কোর্টের সামনে দাঁড়িয়ে অভিজিৎকে বলতে শোনা গিয়েছিল ‘‘আজ আমার মৃত্যুদিন।’’ ফলে মঙ্গলবারের মন্তব্যে প্রশ্ন উঠেছে, তবে বিচারপতি হিসাবে তিনি যা পারেননি, সেই চ্যালেঞ্জই কি ছুড়ে দিতে চাইছেন বিচারপতি পদের বাঁধন আলগা হওয়ার পর?

কারণ, মঙ্গলবার নিজের বিজেপিতে যোগদানের ঘোষণা করার পর বিচারপতি যে সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছিলেন নিজের বাড়িতে সেখানে তিনি যত কথা বলেছেন, তার অধিকাংশই ঘুরেফিরে এসে থেমেছে অভিষেকের প্রসঙ্গে। নারদকাণ্ডের চক্রান্ত থেকে শুরু করে ডায়মন্ড হারবারে দুর্বৃত্তদের দল চালানো— নাম না করে অভিষেকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনেছেন তিনি।

মঙ্গলবার শাহজাহান শেখের প্রসঙ্গ উঠলেও অভিজিৎ টেনে এনেছেন সেই অভিষেককেই। এর আগে তৃণমূলের তরফে দাবি করা হয়েছিল, বিচারব্যবস্থা হাত-পা বেঁধে দিয়েছে বলেই শাহজাহানকে গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। আনন্দবাজার অনলাইনকেও সে কথা বলেছিলেন অভিষেক নিজেই। সে প্রসঙ্গে নাম না করে মঙ্গলবার অভিজিৎ বলেন, ‘‘উনি বিচার ব্যবস্থার কী বোঝেন? পেটে বোম মারলেও তো কিছু বেরোবে না। আদালত যে ওঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি, ওঁর ভাগ্য ভাল।’’

উল্লেখ্য, অভিজিৎ বিচারপতি পদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন, জানার পর থেকেই তাঁর নামের সঙ্গে বার বার জড়িয়ে যাচ্ছিল পূর্ব মেদিনীপুরের লোকসভা কেন্দ্র তমলুকের নাম। বিভিন্ন রাজনৈতিক সূত্রে জানা যাচ্ছিল, খাতায়কলমে তৃণমূলের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারীর আসনটিই দেওয়া হবে অভিজিৎকে। যিনি বিচারপতি হিসাবে রাজ্যের একাংশের মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। মঙ্গলবার যদিও অভিজিৎ তমলুক প্রসঙ্গে একটি কথাও বলেননি। বদলে প্রচ্ছন্ন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন অভিষেকের দিকেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement